কলকাতা, 22 জুলাই: উন্মত্ত জনতার মাঝে নগ্ন করে দুই মহিলাকে বেধড়ক মারধরের ঘটনার ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি । ঘটনার ভিডিয়ো টুইট করে মণিপুর কাণ্ডের সঙ্গে তুলনা টেনেছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় । যদিও তৃণমূলের তরফে এই ঘটনা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ করা হয়েছে ৷ আর সিপিএম ও কংগ্রেসের বক্তব্য, কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অন্য অন্যায়কে তুলে ধরা শোভা পায় না ৷
মালদার ঘটনা নিয়ে শশী পাঁজার বক্তব্য: মালদা নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, "মালদার যেখানকার ঘটনা বলছিল, সেটা হল বিশাল হাট । স্বাভাবিকভাবেই সেই বড় হাটে বহু জিনিসপত্র বিক্রি হয় বহু মানুষ আসেন । বলা হচ্ছে তবুও বলছি, হয়তো দু’জন গরিব প্রান্তিক মানুষ চুরি করেছেন । যাঁদের থেকে চুরি করছেন, সেই মহিলা ও অন্য মহিলাদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধেছে । সেই ঝামেলার মধ্যে হয়তো জামা কাপড় খুলে গিয়েছে । শরীর থেকে জামা কাপড় সরে গিয়েছে ।’’
শশী পাঁজা আরও বলেন, ‘‘এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিজেপির কী বক্তব্য থাকতে পারে । আদৌও কি এই ঘটনা রাজনৈতিক ? এখানে যে সমস্ত মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন, তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ঝগড়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্য । তারপরেই তো ওদের সরিয়ে নেওয়া হল । ওই মহিলারাও চলে গেলেন । ইতিমধ্যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রেজিস্টার হয়েছে । এবার তাঁদের আইডেন্টিফাই করা হবে ।"
মালদার ঘটনা নিয়ে সিপিএমের রবীন দেবের বক্তব্য: সিপিআইএম নেতা রবীন দেব বলেন, "মণিপুরে যা ঘটেছে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় তা কুৎসিত বীভৎসতা বলে । এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা চলছে । মণিপুরে যে ঘটনা ঘটেছে যে নৃশংসতার সামনে এসেছে, সেটাকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে ।’’
রবীন দেব আরও বলেন, কিন্তু একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আর একটা অন্যায় দিয়ে প্রতিকার করা হয় না । দেখতে হবে অন্যায়কে প্রতিহত করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । মণিপুর হোক বা বাংলা, এরকম নৃশংস ঘটনায় প্রশাসনিক যে দুর্বলতা এবং সাধারণ মানুষ তথা মা-বোনেদের যে নিরাপত্তাহীনতা, তা বারেবারে প্রকাশ পাচ্ছে ।"
মালদার ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বক্তব্য: একই সুর প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা সামাজিক মাধ্যমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "মালদা হোক বা মণিপুর । একটা অন্যায়ের কাউন্টার অন্য একটা অন্যায় হতে পারে না । এই জায়গাতে মোদি ও মমতা এক । তাঁরা ব্যর্থ । মণিপুর থেকে শুরু করে মালদা, বাদুড়িয়া, হাওড়ার পাঁচলা বা হাঁসখালিও সব জায়গায় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে ।’’
আরও পড়ুন: দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ভিডিয়ো নিয়ে সরব বিজেপি, তদন্তে মালদা পুলিশ
তিনি আরও বক্তব্য, মণিপুরের ক্ষেত্রে দেশের মহিলা কমিশনের যিনি চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা নিজেই দাবি করেছেন যে এই ভিডিয়োটা তিনি (রেখা) অনেক আগেই পেয়েছিলেন ৷ কিন্তু এই ঘটনা আদৌ সত্য কি না, সেটা নিয়ে তিনি বিচলিত ছিলেন । কিন্তু তাঁর দায়িত্ব তো বিচলিত হওয়ার নয় ৷ যখন তাঁর কাছে কোনও অভিযোগ পৌঁছেছে, সেটা সত্য কি না, তা রাজ্য সরকার থেকে যাচাই করা । তিনি তা করেননি ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন আছেন ৷ তাঁর ভূমিকাও তো আমরা দেখেছি । তাই সার্বিকভাবে এই সমস্ত রাজনৈতিক গণ্ডি পেরিয়ে বা রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে আমাদের দেশের মা-বোনদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বলি, তিনি মণিপুরে তাঁর টিম পাঠাচ্ছেন ভালো কথা । কিন্তু আমাদের রাজ্যের হাঁসখালি কিংবা মালদা কিংবা বাদুড়িয়ায় তিনি একজন কাউন্সিলর বা গ্রাম সদস্যকে পাঠাতে পারলেন না ?"
যদিও বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, "এ রাজ্যে মানুষের উপর অত্যাচার হলে ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না । সেটা হাওড়ার পাঁচলা হোক কিংবা মালদা । এই ঘটনা নিন্দনীয় । যারা মণিপুর নিয়ে এত বড় বড় কথা বলে তাঁরা আজ চুপ কেন ?"
আরও পড়ুন: পাঁচলা নিয়ে চাপ আরও বাড়াল বিজেপি, মহিলা কর্মীর উপর নির্যাতনের অভিযোগে সরব শুভেন্দুরা