কলকাতা, 23 অগস্ট: সভ্য সমাজের অভিশাপ র্যাগিং ৷ কিন্তু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রমৃত্যু হোক অথবা গত কয়েকদিনে রাজ্যের একাধিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একের পর এক ব়্যাগিংয়ের শিকার হওয়ার ঘটনা ৷ যা সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়ুয়াদের মানসিক চেতনার বিকাশের বদলে, অবনতিটাই বেশি হচ্ছে ৷ তাই পড়ুয়াদের ব়্যাগিং সংক্রান্ত সচেতনতার পাঠ দিতে অভিনব উদ্যোগ নিল কলকাতার বিভিন্ন স্কুল ৷ মঙ্গলবার সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যালয় নাটকের মাধ্যমে তাদের ছাত্রীদের সচেতন করল ৷
মূলত, শহরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগিতায় এই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ৷ যেখানে স্কুল স্তর থেকেই পড়ুয়াদের ব়্যাগিং বিরুদ্ধে সরব হওয়া এবং সচেতনা তৈরির কাজ করছে কর্তৃপক্ষ ৷ তবে, শুধু ব়্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সরব হওয়া নয় ৷ যাতে কোনও পড়ুয়ার মধ্যে ব়্যাগিংয়ের মানসিকতা তৈরি না হয়, সেটাও অন্যতম উদ্দেশ্য ৷ আর এই পুরো বিষয়টিকে নাট্যরূপে তুলে ধরল যাদবপুরের সন্তোষপুর ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যালয় ৷
স্কুল জীবনে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা ও মজার মধ্যে দিয়ে অনেক কথা বলে ফেলে পড়ুয়ারা ৷ অনেক ক্ষেত্রে সেই হাসিঠাট্টায় বলা কথা, অন্যের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে ৷ কিন্তু, সেই বোধ বা চেতনা স্কুলজীবনে থাকে না ৷ যা পরবর্তী ক্ষেত্রে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ব়্যাগিংয়ের মানসিকতা তৈরি করতে পারে ৷ এমনই এক অভিজ্ঞতার কথা ইটিভি ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে ওই স্কুলের এক ছাত্রী ৷ অন্য স্কুল থেকে এখানে এসে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাকে ৷
আরও পড়ুন: যাদবপুর-কাণ্ডের জের, কেন্দ্রীয় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যান্টি ব়্যাগিং সপ্তাহ পালন
আর সেটা হয়েছিল তার নামের কারণে ৷ তার নাম বাকিদের থেকে একটু আলাদা বা বলা যায় নামে একটা আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে ৷ ওই ছাত্রীর কথায়, ‘‘আমার নতুন সহপাঠীদের কাছে সেটি মজার বিষয় হয়ে ওঠে ৷ ক্লাসের একাংশ আমার নাম নিয়ে মজা করত ৷ অন্য স্কুল থেকে এসেছিল বলে বিভিন্ন রকম কথা শুনতে হত ৷ প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হত, কেঁদেছি আমি ৷’’ তবে, বন্ধুরা যাতে বকা না খায়, তাই শিক্ষিকাদের কাউকে বলতে রাজি হয়নি সে ৷ তবে, ব়্যাগিং এবং বুলিং নিয়ে এই পাঠ থেকে আজ অনেক কিছুই শিখল সে ৷ আর তার সেই সব বন্ধুরাও বিষয়টি বুঝতে পেরেছে বলেই বিশ্বাস ওই ছাত্রীর ৷
বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা শর্বাণী সেন বলেন, "মজার ছলে অন্যকে আঘাত করার বিষয়টা শুরু হয় স্কুল জীবন থেকেই ৷ ওরা হয়তো না বুঝেই কোন একটা কথা বলে ফেলে ৷ কিন্তু, এতে অন্যের অসম্মান হয়, আঘাত লাগে ৷ সেটা যাতে না হয় ৷ মজাটা মজার জায়গাতেই থাকুক ৷ সহপাঠীরা এতে যেন আঘাত না পায় ৷" এই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষিকারা অভিভাবকের সঙ্গেও কথা বলেছেন ৷ তবে, আগামী দিনে ফের অভিভাবকের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করবেন বলেই জানান প্রধান শিক্ষিকা ৷