কলকাতা, 13 মার্চ: চলতি বছর বসন্ত উৎসবের ঘটনায় তদন্তকমিটি গঠন করল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় । আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । মোট চার সদস্যের তদন্তকমিটিকে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে । এই তদন্তকমিটি দেখবেন যে বসন্ত উৎসবে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের কেউ যুক্ত ছিল কিনা বা আয়োজনে কোনও অসঙ্গতি ছিল কি না ।
5 মার্চ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বসন্ত উৎসব । চারুকলা পরিষদ ও ছাত্র সংসদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই বসন্ত উৎসবের বেশ কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয় সোশাল মিডিয়ায় । যা নিয়ে বিতর্ক ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায় । দেখা যায়, ওই ছবিগুলিতে বিভিন্ন ছেলে-মেয়েদের দলের বুকে-পিঠে আপত্তিকর শব্দ লেখা । এমনকি রবীন্দ্রনাথের গানকেও বিকৃত করা হয়েছিল আপত্তিকর শব্দ দিয়ে । তারপর দিনই সিঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি। কিন্তু, কেন ঘটল এই ঘটনা? বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কী কোনও খামতি ছিল? খতিয়ে দেখতে আজ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি । এই কমিটিতে রয়েছেন ডিন অফ আর্টস, সংস্কৃত বিভাগের প্রধান, ভিজ়ুয়াল আর্টসের প্রধান ও রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান ।
এ বিষয়ে উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি বলেন, "আজ তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে কলা অনুষদের অধ্যক্ষের সভাপতিত্বে । বাকি তিনজন শিক্ষক সহকর্মী বাকি তিনটি অনুষদ থেকে রয়েছেন। তাঁদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে এবং তাঁরা তদন্ত করে আগামী এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন ।" কী নিয়ে তদন্ত করবে তদন্ত কমিটি?
সব্যসাচীবাবু বলেন, "এখানে একটা জিনিস হচ্ছে যারা লিখল তাঁরা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত নয় । সেটা নিয়ে পুলিশ প্রশাসন আলাদা তদন্ত করছে । সমান্তরাল দু'টো তদন্ত কখনও চলে না । তাই আমাদের তদন্ত কমিটির বিবেচ্য বিষয় হবে যে, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এই বসন্ত উৎসব আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনও রকম অসঙ্গতি ছিল কি না, কোথাও কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল কি না সেটা তাঁরা দেখবেন ।"
জানা গেছে, বসন্ত উৎসবের আয়োজনে অসঙ্গতি বা বসন্ত উৎসবে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের কেউ কেউ যুক্ত বলে দাবি তোলা হয়েছে কর্মসমিতিতে । সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য বলেন, "সে তো তদন্ত কমিটিই বলবে । দাবি রাখলে তো দাবিটা প্রমাণ নয় । দাবি করলে সেগুলোর তো প্রমাণ চাই । বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে কেউ যুক্ত কি না, যদি কোনওভাবে যুক্ত থাকে তদন্ত কমিটি তদন্তের পর রিপোর্ট দিলে কার্যসমিতি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।"
এই বছর বসন্ত উৎসবে ঘটে যাওয়া ঘটনার জেরে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছিল আগামী বছরের বসন্ত উৎসব । আজ কর্মসমিতির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামী বছর বসন্ত উৎসব হবে । এ বিষয়ে সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি বলেন, "প্রাথমিকভাবে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা হল, বসন্ত উৎসব হবে । তবে বসন্ত উৎসবে বাইরের লোকেরা আমন্ত্রণ পাবেন কি না, তাঁরা আসতে পারবেন কি না, তা আগামীদিনে কর্মসমিতি বিবেচনা করবে ।"
তিনি আরও বলেন, "কর্মসমিতির সদস্যরা যাঁরা ছিলেন এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি লিখিতভাবে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন, তাঁরা বসন্ত উৎসব করার পক্ষে । মৌখিকভাবে অনেকে বলেছেন প্রাক্তনীদের এখানে প্রবেশাধিকার থাকা উচিত ইত্যাদি । কিন্তু, প্রাক্তনীদের চিহ্নিত করা সহজ নয় । তাদের তো কোনও পরিচয়পত্র থাকে না । যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিক, ছাত্র তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয়পত্র আছে । বাইরে থেকে যারা আসছেন তাঁরা আদৌ আসবেন কি না, তাঁদের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র থাকবে কি না, সেটা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।"
আজ কর্মসমিতির বৈঠকে রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষক সমিতির তরফ থেকে দাবি জানানো হয়, বসন্ত উৎসব আয়োজনের দায়িত্ব ছাত্র সংসদের হাত থেকে সরিয়ে শিক্ষকদের হাতে দিতে। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য বলেন, "বসন্ত উৎসবের দায়িত্ব ছাত্র সংসদের হাতে কখনই ছিল না । দায়িত্ব বরাবর ছিল চারুকলা অনুষদের হাতে । চারুকলা অনুষদের যাঁরা শিক্ষক, তাঁদের হাতেই দায়িত্ব ছিল ।" কিন্তু, বসন্ত উৎসবের আমন্ত্রণপত্রে লেখা থাকে, ছাত্র সংসদ দ্বারা আয়োজিত । সব্যসাচীবাবু বলেন, "2017 সাল পর্যন্ত জোড়াসাঁকোতে হয়েছিল এই অনুষ্ঠান । যখন ওখানে স্থান সংকুলান হচ্ছে না, তখন আমরা ওখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । তারপরে চারুকলা অনুষদের যাঁরা শিক্ষক তাঁদেরই উদ্যোগে ছাত্র সংসদ বা ছাত্রদের যাঁরা প্রতিনিধি তাঁরা যুক্ত হন । এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও প্রশাসনিক অনুমোদনে হয়নি । ফলে, তাঁরা যদি মনে করেন আগামী বছরে ছাত্র সংসদকে যুক্ত রাখবেন না সেটার সিদ্ধান্ত তাঁরাই নেবেন ।"