কলকাতা, 23 মে : দীর্ঘ সময় লকডাউন, তবে ধীরে ধীরে বইয়ের হোম ডেলিভারির মাধ্যমে বই পাড়ায় যখন প্রাণ সঞ্চার ঘটেছিল ৷ তখনই ভাঙনের পথে ধেয়ে এল সাইক্লোন আমফান । সর্বহারা কলেজ স্ট্রিটের বই ব্যবসায়ীরা । লোকসান হয়েছে কয়েক কোটি টাকার । তাই আবার ঘুরে দাঁড়াতে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।
যেদিকেই চোখ যায় শুধুই জল আর জল । আর তারই মধ্যেই ভাসছে অসংখ্য বই । পুরোনো জমজমাট বইপাড়া কলেজ স্ট্রিটে থৈ থৈ করছে জমা জল । ঝড় থেমে যাওয়ার পরের ধ্বংসাবশেষ । ঘূর্ণিঝড় লন্ডভন্ড করেছে কলেজস্ট্রিটকে । সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন সর্বত্রই ছেয়ে গেছে করুণ ছবি । গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন , " ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিপুল । কয়েক কোটি টাকা । তবে এখন তার হিসেব করে ওঠা যায়নি । ছাপার কাগজ থেকে শুরু করে হাজার হাজার বই জলের তলায় । ভিজে কাদা । এইগুলিকে আর কোনওভাবেই রক্ষা করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় । বিশেষ করে যাঁরা রাস্তার উপর ছোটো দোকানে বিক্রি করতেন তাঁদের স্টলের সমস্ত বই শেষ হয়ে গেছে । লকডাউনের কারণে সবাই প্রায় বাড়ি চলে গেছে । তাই বহু দোকান এখনও বন্ধই রয়েছে । সেই দোকানের ভিতরে কী অবস্থা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না । 'পত্রভারতী' এক তলায় জল ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় 3 থেকে 4 লাখ টাকার বই । "
তিনি আরও বলেন, " ছোটো হকার ও পুস্তক বিক্রেতারা যাতে কিছুটা হলেও চাঙ্গা হতে পারে তাই আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দারস্থ হবে গিল্ড । " পাশাপাশি গিল্ডের অন্য সাধারণ সম্পাদক ( সম্মানীয় ) সুধাংশু শেখর দে বলেন, "লকডাউনের ফলে বিরাট আর্থিক ধাক্কার মুখে পড়েছে বই বাজার । যেটুকু ঘুরে দাঁড়াবার সম্ভাবনা ছিল তাও শেষ করে দিল এই ঘূর্ণিঝড় । রাস্তার উপর যে ছোটো দোকানগুলি ছিল সেই দোকানের ভিতরে প্রায় তিন থেকে চার ফুটের মধ্যে থাকা সমস্ত বই ধ্বংস হয়ে গেছে । আবার কোনও দোকানের টিনের চাল উড়ে গিয়ে ভেসে গেছে দোকান । এছাড়াও ছাপাখানাগুলির ভেতরে জল ঢুকে গেছে । মেশিনগুলি জলে ডুবে গেছে । মেশিনগুলিও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত । প্রথমে লকডাউন তারপর এই বিধ্বংসী ঝড় । বই শিল্পের উপর নির্ভর করছে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা । "
কলেজ স্ট্রিটের সর্বত্র এই নিদারুণ ছবি ৷ তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি লাগোয়া ছোটো দোকানগুলি । ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হিন্দু স্কুল লাগোয়া দোকান, বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় স্ট্রিটের দোকান ও শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের বইয়ের দোকানগুলি । ছোটবড় পুস্তকবিক্রেতা ও প্রকাশক মিলিয়ে কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে রয়েছে কম করে হলেও প্রায় 700 থেকে 730 বই ব্যবসায়ী রয়েছে ।
ইন্দ্রানী বুক স্টলের কর্ণধার স্বপন দত্ত বলেন , " ঝড়ের পর যখন গোডাউন খুললাম তখন আমার মাথায় হাত । গোডাউনে বুক সমান জল । কোন বই বাঁচাব আর কোন বই ফেলব আমার মাথাতেই ঢুকছিল না । প্রতিবছর বর্ষায় 50-60 হাজার টাকার বই নষ্ট হয়। সেবিষয়ে আমরা প্রস্তুত থাকি । তবে আমফান আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিয়ে যাবে সেটা কখনই ভাবতে পারিনি । এখানে এখন চারদিকে জল ৷ আর ভাসছে শুধুই বই আর বইয়ের পাতা । "