ETV Bharat / state

আত্মহত্যা নয় ; জীবন একটাই, বাঁচতে শিখুন

নিজেকে শেষ করে ফেললে, মরে গেলে তো কিছুই আর দেখতে পাবেন না । অবসাদে ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । বললেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাক্তার শর্মিলা সরকার ।

আত্মহত্যা নয়
author img

By

Published : Sep 11, 2019, 1:27 PM IST

Updated : Sep 11, 2019, 2:49 PM IST

কলকাতা, 11 সেপ্টেম্বর : জীবন একটাই । বাঁচতে শিখুন । নিজেকে শেষ করে ফেললে, মরে গেলে তো কিছুই আর দেখতে পাবেন না । অবসাদে ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । কেন মানুষ আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে? কমবয়সিদের ক্ষেত্রে মূলত কী কী সমস্যা হয়? বয়স্কদের ক্ষেত্রেই-বা আত্মহত্যার কারণ কী হতে পারে? প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব? এমন বিভিন্ন বিষয়ে বলেছেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাক্তার শর্মিলা সরকার ।

আত্মহত্যার প্রবণতা আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে । সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, প্রত্যেক বছর বিশ্বে 10 লাখ মানুষ আত্মহত্যা করছেন । যাঁরা আত্মহত্যা করছেন তাঁদের মধ্যে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি । 45 বছর বা তার থেকে বেশি বয়স যাঁদের, তাঁদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে ‌। যাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন তাঁদের মধ্যে কমবয়সিদের সংখ্যা বেশি ।

শুনুন শর্মিলা সরকারের বক্তব্য

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "আত্মহত্যার কারণ হিসাবে কিছু কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায় । তার চিকিৎসা আছে । কিন্তু কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করা যায় না । বয়স্কদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি । ফ্যামিলিতে আত্মহত্যার ঘটনা থাকলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা দেয় । মানসিক কোনও সমস্যা বা ডিপ্রেশনও কারণ হতে পারে । অ্যালকোহল খেলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি থাকে । অনেক সময় দেখা যায় যে, আত্মহত্যা করার আগে অনেক রকম নেশা করে নিয়েছিল, তারপরে আত্মহত্যা করেছে । বা কিছুদিন ধরে নেশার পরিমাণটা বাড়িয়ে দিয়েছিল । তারপরে আত্মহত্যা করেছে । এগুলি এক একটি রিস্ক ফ্যাক্টর । ইমিডিয়েট কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে । যেমন, কিছু ক্ষতি হল । কারও সঙ্গে ঝগড়া বা কিছু একটা হল । বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড ঘটিত কোনও ব্যাপার দেখা দিল । বয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা গেল স্বামী বা স্ত্রী মারা গেল বা কাছের কোনও বন্ধু মারা গেল বা অর্থনৈতিক কোনও সমস্যা দেখা দিল । আচমকা এমন কিছু ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ঘটনা দেখা যায় ।"

অল্পবয়সিদের মধ্যে কেন আত্মহত্যার চেষ্টা বেশি দেখা যায়? ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "ছোটদের মধ্যে এখন প্রেশারটা বেশি । আগেও ছিল । কিন্তু এখন সোশ্যাল বা পি আর প্রেশারটাও চলে আসছে । সোশ্যাল মিডিয়ার কথা বলতে পারি । সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা ভাল দিকগুলি হাইলাইট করি । কোথাও ঘুরতে গিয়েছি, রেস্তরাঁয় খাচ্ছি, খুব খুশিতে আছি, এগুলো বেশি করে দেখানো হয় । নেগেটিভ দিকগুলো কম দেখানো হয় । যে মানুষটি খারাপ অবস্থায় রয়েছে, কোনও একটা সমস্যায় রয়েছে, সে যখন অন্য কাউকে দেখে এত ভালো আছে আর সে ভালো থাকতে পারছে না, তখন সে আচমকা কিছু একটা করে ফেলে । হঠাৎ করে কিছু একটা করার প্রবণতা বাড়ে । আজকাল যেটা হচ্ছে, মা-বাবার একটি মাত্র সন্তান । ছোটবেলা থেকে খুব বেশি প্যাম্পারড । যা চাইছে তাই দিচ্ছে । তারা না শুনতে শেখেনি কোনও দিন । মানে এটা চাইলে, তুমি এটা পাবে না, এটা শুনতে শেখেনি কোনও দিন । এবার বয়ঃসন্ধিকালীন অবস্থায় গিয়ে যখন কোনও কিছুতে না শুনছে, বা দেখছে কোনও একটি বিষয় তাকে দেওয়া হচ্ছে না । তখন হঠাৎ করে কিছু একটা করে ফেলে । বিষয়টা এমন যে, দেখো দেবে না, হাতটা আমি কেটে ফেললাম । মা-বাবা এটা দেখলে নিশ্চয়ই আমাকে দিয়ে দেবে । সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রে মা-বাবার ভূমিকা যদি তেমন না থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার প্রবণতা চলে আসে ।"

আত্মহত্যার সিম্পটমস কিছু আছে ? আগে থেকে বোঝা যায় দেখে? ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রে কিছু বলা সম্ভব না । তবে টেম্পারমেন্ট বলি আমরা । ওদের পার্সোনালিটি ডেভেলপ তখন করে না । তবে কিছু কিছু বিষয় দেখে বোঝা যায়‌ । যেমন, একবার করলে বার বার করতে থাকা । হঠাৎ করে কিছু একটা করার প্রবণতা । যেমন, একটু বকা হল, ব্যাস খাওয়া বন্ধ করে দিল । বা ঘরে থাকলে দরজা বন্ধ করে দিল । বা অকারণে কেঁদে ফেলছে, খুব বেশি রিঅ্যাক্ট করছে, উত্তেজিত হয়ে পড়ছে । অন্য একটি বিষয় হচ্ছে, যদি ডিপ্রেশন চলে আসে । মন খারাপ, একা একা হয়ে গেছে, কিছু ভালো লাগছে না, তার কিছু করতে ইচ্ছা করছে না, মনে রাখতে পারছে না , পড়তে পারছে না । এরকম যদি ডিপ্রেশন চলে আসে তাহলে আত্মহত্যার চেষ্টা করার প্রবণতা চলে আসে ।"

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "মাঝবয়সি বা বয়স্ক যারা, তাদের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে । সোশালি যদি ঠিকঠাক জায়গায় রাখি আমি, যেমন সবার সঙ্গে কথা বলা , এগুলি কিছু প্রোটেক্টিভ ফ্যাক্টর আমরা বলি । যেটা মানুষকে সাহায্য করে একটুখানি বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে । যেমন যদি লোকজনের সঙ্গে বেশি করে কথা বলা যায় । বাড়ির লোকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকে । বন্ধুদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারি । এক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার প্রবণতা একটু কম থাকে । কিছু কিছু অসুখ রয়েছে, যেমন ডিপ্রেশন । বেশি বয়সে চলে আসে । বেশি পরিমাণে যদি নেশা করে বা স্কিৎসোফ্রেনিয়া জাতীয় অসুখ, অ্যাংজাইটি বেশি থাকে । এসব ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায় । যদি ডিপ্রেশন আসে, ছেলে-মেয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে এখন তাঁর আর কিছু করার নেই । বা স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন বেঁচে নেই, তার আর বেঁচে থেকে কী হবে । এক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি দেখা যায় ।"

টিনেজারদের ক্ষেত্রে?

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "এদের ক্ষেত্রে রিলেশনশিপ প্রবলেম একটা হুট করে চলে এল । এরা বেশি ইম্পালসিভ ওয়েতে করে । প্ল্যান করে করে না । হঠাৎ করে ফেলল । বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে যারা কমপ্লিটেড আত্মহত্যা করেন, এক্ষেত্রে যেটা হয় অনেকদিন ধরে প্ল্যান করেন তারা । অনেক ক্ষেত্রে ইম্পালসিভ ওয়েতে করে ফেলতে পারে । আবার এমনও হয়, এই সব সিম্পটমস দেখে বাড়ির লোকেরাও কিছুটা বুঝতে পারবে, অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কিছুদিন ধরে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে । হঠাৎ করে নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখা । কারও সঙ্গে মিশছে না । বারবার করে আত্মহত্যার কথা বলছে । কিছু ভালো লাগছে না, বেঁচে থেকে কী হবে, জীবন সম্পর্কে হতাশা, তার হয়তো আর কিছু হবে না । কোনও কিছু ক্ষতি হলে, সেই জায়গা থেকে তিনি আর ফিরে আসতে পারবেন না এমন ভাবনা । কিছুদিন ধরে হয়তো কোনও ওষুধ জোগাড় করছে বা দড়ি, কোনও অস্ত্র, যেগুলো দিয়ে আত্মহত্যা করে, সেগুলো কিছু জোগাড় করছে । বাড়ির লোক একটু সতর্ক থাকলে এগুলো বুঝতে পারবেন ।"

প্রতিরোধ কি সম্ভব, কীভাবে?

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "প্রতিরোধ সেই হিসাবে 100 শতাংশ কোনও ভাবে সম্ভব নয় । কোনও মানুষ যদি ভেবে থাকেন তিনি আত্মহত্যা করবেন, কোনও ভাবে যদি তিনি প্রকাশ না করেন, তা হলে তাঁকে বাঁচানো যায় না । কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আছে, এক্ষেত্রে কিন্তু আগে বোঝা সম্ভব । ডিপ্রেশন থাকলে বলে তার ভাল লাগছে না বা অন্য কিছু ।"

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা অল্পবয়সিদের মধ্যে বেশি দেখা যায় । তার হয়তো কোনও সমস্যা হয়েছে, কাউকে বলেছে আত্মহত্যা করবে, কিন্তু সে বিশ্বাস করেনি । লাইভ স্ট্রিমিং যদি করা হয় তাহলে সেও দেখবে অন্য অনেকে দেখবে যে কীভাবে আত্মহত্যার সময় কষ্ট পাচ্ছে । যদিও মরে যাচ্ছে, কিন্তু এভাবেও কোথাও একটা প্রচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে । আর একটা বিষয় থাকে, যেটা হল তার কষ্টটাকে জানানো । লাইভ স্ট্রিমিং করে তা দেখিয়ে দিয়ে গেল সে । এটা দেখেও অনেকে আছে যারা অনুকরণ করে ।"

কাছের মানুষ কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "যদি বলে, তা হলে কাছের মানুষ অনেক রকম ভাবে হেল্প করতে পারেন । ভালো কাউন্সেলিং যদি করতে পারে কাছের মানুষ বা কীভাবে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে, সেটা যদি কাছের মানুষ ভালো বোঝে, তা হলে আত্মহত্যার ইচ্ছা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে । কোনও একটি বিষয় হচ্ছে, যিনি আত্মহত্যা করতে চাইছেন, তাকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া । আমি বলছি, তোর কিছু হবে না, কাছের মানুষের এরকম বক্তব্য দিয়ে সবসময় হয় না । তিনি আত্মহত্যা করতে চাইছেন তাঁর হতাশা, তাঁর মনের মধ্যে অনেক কষ্ট চলছে, যদি তিনি মনে করেন, কোনও একটি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার তাঁর উপায় নেই, এ ক্ষেত্রে কিন্তু আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা বেশি থাকে । এক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে আসা জরুরি । কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো দিলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা কমে যায় । এর সঙ্গে অন্য চিকিৎসা করা হয় । যে কারণে তার মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে সেই সব কারণের জন্য ।"

জীবন একটাই । বাঁচতে শিখুন । শেষ করে ফেললে মরে গেলে তো কিছু আর দেখতে পাবেন না । জীবনের মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে রয়েছে । ভালো-মন্দ সবকিছু রয়েছে । রাতের পরে দিন আসে । খারাপ কিছু একটা ঘটলে সব সময় সেটা স্থায়ী নয় । আবার ভালো কিছু ঘটবে । সুতরাং সেই আশা রাখা উচিত । আর যদি কোনও সময় কোনও সমস্যা হয়, মানসিক কোনও সমস্যা হয়, তাহলে কাউন্সেলিং করুন ।

কলকাতা, 11 সেপ্টেম্বর : জীবন একটাই । বাঁচতে শিখুন । নিজেকে শেষ করে ফেললে, মরে গেলে তো কিছুই আর দেখতে পাবেন না । অবসাদে ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । কেন মানুষ আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে? কমবয়সিদের ক্ষেত্রে মূলত কী কী সমস্যা হয়? বয়স্কদের ক্ষেত্রেই-বা আত্মহত্যার কারণ কী হতে পারে? প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব? এমন বিভিন্ন বিষয়ে বলেছেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাক্তার শর্মিলা সরকার ।

আত্মহত্যার প্রবণতা আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে । সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, প্রত্যেক বছর বিশ্বে 10 লাখ মানুষ আত্মহত্যা করছেন । যাঁরা আত্মহত্যা করছেন তাঁদের মধ্যে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি । 45 বছর বা তার থেকে বেশি বয়স যাঁদের, তাঁদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে ‌। যাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন তাঁদের মধ্যে কমবয়সিদের সংখ্যা বেশি ।

শুনুন শর্মিলা সরকারের বক্তব্য

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "আত্মহত্যার কারণ হিসাবে কিছু কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায় । তার চিকিৎসা আছে । কিন্তু কিছু ক্ষেত্র চিহ্নিত করা যায় না । বয়স্কদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি । ফ্যামিলিতে আত্মহত্যার ঘটনা থাকলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা দেয় । মানসিক কোনও সমস্যা বা ডিপ্রেশনও কারণ হতে পারে । অ্যালকোহল খেলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি থাকে । অনেক সময় দেখা যায় যে, আত্মহত্যা করার আগে অনেক রকম নেশা করে নিয়েছিল, তারপরে আত্মহত্যা করেছে । বা কিছুদিন ধরে নেশার পরিমাণটা বাড়িয়ে দিয়েছিল । তারপরে আত্মহত্যা করেছে । এগুলি এক একটি রিস্ক ফ্যাক্টর । ইমিডিয়েট কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে । যেমন, কিছু ক্ষতি হল । কারও সঙ্গে ঝগড়া বা কিছু একটা হল । বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড ঘটিত কোনও ব্যাপার দেখা দিল । বয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা গেল স্বামী বা স্ত্রী মারা গেল বা কাছের কোনও বন্ধু মারা গেল বা অর্থনৈতিক কোনও সমস্যা দেখা দিল । আচমকা এমন কিছু ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ঘটনা দেখা যায় ।"

অল্পবয়সিদের মধ্যে কেন আত্মহত্যার চেষ্টা বেশি দেখা যায়? ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "ছোটদের মধ্যে এখন প্রেশারটা বেশি । আগেও ছিল । কিন্তু এখন সোশ্যাল বা পি আর প্রেশারটাও চলে আসছে । সোশ্যাল মিডিয়ার কথা বলতে পারি । সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা ভাল দিকগুলি হাইলাইট করি । কোথাও ঘুরতে গিয়েছি, রেস্তরাঁয় খাচ্ছি, খুব খুশিতে আছি, এগুলো বেশি করে দেখানো হয় । নেগেটিভ দিকগুলো কম দেখানো হয় । যে মানুষটি খারাপ অবস্থায় রয়েছে, কোনও একটা সমস্যায় রয়েছে, সে যখন অন্য কাউকে দেখে এত ভালো আছে আর সে ভালো থাকতে পারছে না, তখন সে আচমকা কিছু একটা করে ফেলে । হঠাৎ করে কিছু একটা করার প্রবণতা বাড়ে । আজকাল যেটা হচ্ছে, মা-বাবার একটি মাত্র সন্তান । ছোটবেলা থেকে খুব বেশি প্যাম্পারড । যা চাইছে তাই দিচ্ছে । তারা না শুনতে শেখেনি কোনও দিন । মানে এটা চাইলে, তুমি এটা পাবে না, এটা শুনতে শেখেনি কোনও দিন । এবার বয়ঃসন্ধিকালীন অবস্থায় গিয়ে যখন কোনও কিছুতে না শুনছে, বা দেখছে কোনও একটি বিষয় তাকে দেওয়া হচ্ছে না । তখন হঠাৎ করে কিছু একটা করে ফেলে । বিষয়টা এমন যে, দেখো দেবে না, হাতটা আমি কেটে ফেললাম । মা-বাবা এটা দেখলে নিশ্চয়ই আমাকে দিয়ে দেবে । সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রে মা-বাবার ভূমিকা যদি তেমন না থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার প্রবণতা চলে আসে ।"

আত্মহত্যার সিম্পটমস কিছু আছে ? আগে থেকে বোঝা যায় দেখে? ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রে কিছু বলা সম্ভব না । তবে টেম্পারমেন্ট বলি আমরা । ওদের পার্সোনালিটি ডেভেলপ তখন করে না । তবে কিছু কিছু বিষয় দেখে বোঝা যায়‌ । যেমন, একবার করলে বার বার করতে থাকা । হঠাৎ করে কিছু একটা করার প্রবণতা । যেমন, একটু বকা হল, ব্যাস খাওয়া বন্ধ করে দিল । বা ঘরে থাকলে দরজা বন্ধ করে দিল । বা অকারণে কেঁদে ফেলছে, খুব বেশি রিঅ্যাক্ট করছে, উত্তেজিত হয়ে পড়ছে । অন্য একটি বিষয় হচ্ছে, যদি ডিপ্রেশন চলে আসে । মন খারাপ, একা একা হয়ে গেছে, কিছু ভালো লাগছে না, তার কিছু করতে ইচ্ছা করছে না, মনে রাখতে পারছে না , পড়তে পারছে না । এরকম যদি ডিপ্রেশন চলে আসে তাহলে আত্মহত্যার চেষ্টা করার প্রবণতা চলে আসে ।"

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "মাঝবয়সি বা বয়স্ক যারা, তাদের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে । সোশালি যদি ঠিকঠাক জায়গায় রাখি আমি, যেমন সবার সঙ্গে কথা বলা , এগুলি কিছু প্রোটেক্টিভ ফ্যাক্টর আমরা বলি । যেটা মানুষকে সাহায্য করে একটুখানি বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে । যেমন যদি লোকজনের সঙ্গে বেশি করে কথা বলা যায় । বাড়ির লোকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকে । বন্ধুদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারি । এক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার প্রবণতা একটু কম থাকে । কিছু কিছু অসুখ রয়েছে, যেমন ডিপ্রেশন । বেশি বয়সে চলে আসে । বেশি পরিমাণে যদি নেশা করে বা স্কিৎসোফ্রেনিয়া জাতীয় অসুখ, অ্যাংজাইটি বেশি থাকে । এসব ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায় । যদি ডিপ্রেশন আসে, ছেলে-মেয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে এখন তাঁর আর কিছু করার নেই । বা স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন বেঁচে নেই, তার আর বেঁচে থেকে কী হবে । এক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি দেখা যায় ।"

টিনেজারদের ক্ষেত্রে?

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "এদের ক্ষেত্রে রিলেশনশিপ প্রবলেম একটা হুট করে চলে এল । এরা বেশি ইম্পালসিভ ওয়েতে করে । প্ল্যান করে করে না । হঠাৎ করে ফেলল । বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে যারা কমপ্লিটেড আত্মহত্যা করেন, এক্ষেত্রে যেটা হয় অনেকদিন ধরে প্ল্যান করেন তারা । অনেক ক্ষেত্রে ইম্পালসিভ ওয়েতে করে ফেলতে পারে । আবার এমনও হয়, এই সব সিম্পটমস দেখে বাড়ির লোকেরাও কিছুটা বুঝতে পারবে, অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কিছুদিন ধরে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে । হঠাৎ করে নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখা । কারও সঙ্গে মিশছে না । বারবার করে আত্মহত্যার কথা বলছে । কিছু ভালো লাগছে না, বেঁচে থেকে কী হবে, জীবন সম্পর্কে হতাশা, তার হয়তো আর কিছু হবে না । কোনও কিছু ক্ষতি হলে, সেই জায়গা থেকে তিনি আর ফিরে আসতে পারবেন না এমন ভাবনা । কিছুদিন ধরে হয়তো কোনও ওষুধ জোগাড় করছে বা দড়ি, কোনও অস্ত্র, যেগুলো দিয়ে আত্মহত্যা করে, সেগুলো কিছু জোগাড় করছে । বাড়ির লোক একটু সতর্ক থাকলে এগুলো বুঝতে পারবেন ।"

প্রতিরোধ কি সম্ভব, কীভাবে?

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "প্রতিরোধ সেই হিসাবে 100 শতাংশ কোনও ভাবে সম্ভব নয় । কোনও মানুষ যদি ভেবে থাকেন তিনি আত্মহত্যা করবেন, কোনও ভাবে যদি তিনি প্রকাশ না করেন, তা হলে তাঁকে বাঁচানো যায় না । কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আছে, এক্ষেত্রে কিন্তু আগে বোঝা সম্ভব । ডিপ্রেশন থাকলে বলে তার ভাল লাগছে না বা অন্য কিছু ।"

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা অল্পবয়সিদের মধ্যে বেশি দেখা যায় । তার হয়তো কোনও সমস্যা হয়েছে, কাউকে বলেছে আত্মহত্যা করবে, কিন্তু সে বিশ্বাস করেনি । লাইভ স্ট্রিমিং যদি করা হয় তাহলে সেও দেখবে অন্য অনেকে দেখবে যে কীভাবে আত্মহত্যার সময় কষ্ট পাচ্ছে । যদিও মরে যাচ্ছে, কিন্তু এভাবেও কোথাও একটা প্রচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে । আর একটা বিষয় থাকে, যেটা হল তার কষ্টটাকে জানানো । লাইভ স্ট্রিমিং করে তা দেখিয়ে দিয়ে গেল সে । এটা দেখেও অনেকে আছে যারা অনুকরণ করে ।"

কাছের মানুষ কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?

ডাক্তার শর্মিলা সরকার বলেন, "যদি বলে, তা হলে কাছের মানুষ অনেক রকম ভাবে হেল্প করতে পারেন । ভালো কাউন্সেলিং যদি করতে পারে কাছের মানুষ বা কীভাবে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে, সেটা যদি কাছের মানুষ ভালো বোঝে, তা হলে আত্মহত্যার ইচ্ছা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে । কোনও একটি বিষয় হচ্ছে, যিনি আত্মহত্যা করতে চাইছেন, তাকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া । আমি বলছি, তোর কিছু হবে না, কাছের মানুষের এরকম বক্তব্য দিয়ে সবসময় হয় না । তিনি আত্মহত্যা করতে চাইছেন তাঁর হতাশা, তাঁর মনের মধ্যে অনেক কষ্ট চলছে, যদি তিনি মনে করেন, কোনও একটি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার তাঁর উপায় নেই, এ ক্ষেত্রে কিন্তু আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা বেশি থাকে । এক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে আসা জরুরি । কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো দিলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা কমে যায় । এর সঙ্গে অন্য চিকিৎসা করা হয় । যে কারণে তার মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে সেই সব কারণের জন্য ।"

জীবন একটাই । বাঁচতে শিখুন । শেষ করে ফেললে মরে গেলে তো কিছু আর দেখতে পাবেন না । জীবনের মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে রয়েছে । ভালো-মন্দ সবকিছু রয়েছে । রাতের পরে দিন আসে । খারাপ কিছু একটা ঘটলে সব সময় সেটা স্থায়ী নয় । আবার ভালো কিছু ঘটবে । সুতরাং সেই আশা রাখা উচিত । আর যদি কোনও সময় কোনও সমস্যা হয়, মানসিক কোনও সমস্যা হয়, তাহলে কাউন্সেলিং করুন ।

Intro:কলকাতা, ১০ সেপ্টেম্বর: জীবন একটাই। বাঁচতে শিখুন। নিজেকে শেষ করে ফেললে, মরে গেলে তো কিছু আর দেখতে পাবেন না। মানসিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেন আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠেন মানুষ? কম বয়সিদের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা আর, বয়স্কদের ক্ষেত্রেই-বা আত্মহত্যার কারণ কী হতে পারে? প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব? এমন বিভিন্ন বিষয়ে বলেছেন কলকাতা ন‍্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অ্যসোসিয়েট প্রফেসর, ডাক্তার শর্মিলা সরকার।Body:আত্মহত্যার প্রবণতা আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, প্রত্যেক বছর ১ মিলিয়ন মানুষ আত্মহত্যা করছেন। দুটি বিষয়। একটি হচ্ছে, আত্মহত্যা করছে। এক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। ৪৫ বছর বা তার থেকে বেশি বয়সের যাঁরা, তাঁদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যাচ্ছে‌। অন্যটি হচ্ছে, আত্মহত্যার চেষ্টা। বার বার করার চেষ্টা বা, আচমকা কিছু করে ফেলা। এই ধরনের প্রবণতা বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

আত্মহত্যার কারণ হিসাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা যায়। তার চিকিৎসা করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিহ্নিত করা যায় না। বয়স্ক ছেলেদের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি। ফ্যামিলিতে আত্মহত্যার ঘটনা থাকলে, আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। মানসিক কোনও সমস্যা, এটা ডিপ্রেশন হতে পারে। অ্যালকোহল খেলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি থাকে। অনেক সময় দেখা যায় যে আত্মহত্যা করার আগে অনেক রকম নেশা করে নিয়েছিল, তারপরে আত্মহত্যা করেছে। বা কিছুদিন ধরে নেশার পরিমাণটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপরে আত্মহত্যা করছে। এগুলি এক একটি রিস্ক ফ্যাক্টর। ইমিডিয়েট কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে। যেমন, কিছু ক্ষতি হল। কারও সঙ্গে ঝগড়া বা কিছু একটা হল। বা, বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড ঘটিত কোনও ব্যাপার দেখা দিল। বয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা গেল স্বামী বা স্ত্রী মারা গেল বা, কাছের কোনও বন্ধু মারা গেল। বা, অর্থনৈতিক কোনও সমস্যা দেখা দিল। আচমকা এমন কিছু ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ঘটনা দেখা যায়।

কম বয়সিদের মধ্যে কেন বেশি দেখা যায়? ছোটদের মধ্যে এখন প্রেশারটা বেশি। আগেও ছিল। কিন্তু এখন সোশ্যাল বা পিআর প্রেশারটাও চলে আসছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কথা বলতে পারি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা ভাল দিকগুলি হাইলাইট করি। কোথাও ঘুরতে গিয়েছি, রেস্টুরেন্টে খাচ্ছি, খুব খুশিতে আছি, এগুলো বেশি করে দেখানো হয়। নেগেটিভ দিকগুলোকে কম দেখায়। যে মানুষটি খারাপ অবস্থায় রয়েছে, কোনও একটা সমস্যায় রয়েছে, তখন অন্য কাউকে যখন দেখে, এত ভালো আছে তিনি ভালো থাকতে পারছেন না। তখন তিনি আচমকা কিছু একটা করে ফেললেন। দুম করে কিছু একটা করার প্রবণতা বাড়ল। আজকাল যেটা হচ্ছে, মা-বাবার একটি মাত্র সন্তান। ছোটবেলা থেকে খুব বেশি করে প‍্যাম্পারড করছে। যা চাইছে তাই দিচ্ছে। তারা না শেখেনি কোনও দিন। মানে এটা চাইলে, তুমি এটা পাবে না, এটা শুনতে সেখানে কোনও দিন। এবার বয়ঃসন্ধিকালীন অবস্থায় গিয়ে যখন কোনও কিছুতে না শুনছে, বা দেখছে কোন একটি বিষয় তাকে দেওয়া হচ্ছে না। তখন দুম করে কিছু একটা করে ফেলল। বিষয়টা এমন যে, দেখো দেবে না, হাতটা আমি কেটে ফেললাম। মা-বাবা এটা দেখলে নিশ্চয়ই আমাকে দিয়ে দেবে। সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রে মা বাবার ভূমিকা যদি তেমন না থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার প্রবণতা চলে আসে।

সিম্পটমস কিছু আছে, বোঝা যায় দেখে? এই কম বয়সিদের ক্ষেত্রে কিছু বলা সম্ভব না। তবে টেম্পেরামেন্ট বলি আমরা। ওদের পারসোনালিটি ডেভেলপমেন্ট তখন করে না। তবে কিছু কিছু বিষয় দেখে বোঝা যায়‌। যেমন, একবার করলে বার বার করতে থাকা। দুম করে কিছু একটা করার প্রবণতা। যেমন, একটু বকা হল খাওয়া বন্ধ করে দিল। বা ঘরে থাকলে দরজা বন্ধ করে দিল। বা অকারণে কেঁদে ফেলছে, খুব বেশি রিঅ্যাক্ট করছে, উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। অন্য একটি বিষয় হচ্ছে, যদি ডিপ্রেশন চলে আসে। মন খারাপ, একা একা হয়ে গিয়েছে, কিছু ভালো লাগছে না, তার কিছু করতে ইচ্ছা করছে না, মনে রাখতে পারছে না , পড়তে পারছে না। এরকম যদি ডিপ্রেশন চলে আসে তাহলে আত্মহত্যার চেষ্টা করার প্রবণতা চলে আসে।

মাঝ বয়সি বা বয়স্ক যারা আছে, তাদের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ফ‍্যাক্টর কাজ করে। সোশ‍্যালি যদি ঠিকঠাক জায়গায় রাখি আমি, যেমন সবার সঙ্গে কথা বলা , এগুলি কিছু প্রটেক্টিভ ফ্যাক্টর আমরা বলি। যেটা মানুষকে সাহায্য করে একটুখানি বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে। যেমন যদি লোকজনের সঙ্গে বেশি করে কথা বলা যায়। বাড়ির লোকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকে। বন্ধুদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারি। এক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার প্রবণতা একটু কম থাকে। কিছু কিছু অসুখ রয়েছে, যেমন ডিপ্রেশন। বেশি বয়সে চলে আসে। বেশি পরিমাণে যদি নেশা করে। বা সিজোফ্রেনিয়া জাতীয় অসুখ, অ্যাংজাইটি বেশি থাকে। এসব ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যদি ডিপ্রেশন আসে, ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে এখন তার আর কিছু করার নেই। বা স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন বেঁচে নেই তার আর বেঁচে থেকে কী হবে। এক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

টিনেজারদের ক্ষেত্রে? এদের ক্ষেত্রে রিলেশনশিপ প্রবলেম একটা হুট করে চলে এল। এরা বেশি ইম্পালসিভ ওয়েতে করে। প্ল‍্যান করে করে না। দুম করে করে ফেলল। বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে যারা কমপ্লিটেড আত্মহত্যা করেন, এক্ষেত্রে যেটা হয় অনেকদিন ধরে প্ল‍্যান করেন তারা। অনেক ক্ষেত্রে ইম্পালসিভ ওয়েতে করে ফেলতে পারে। আবার এমনও হয়, এই সব সিম্পটমস দেখে বাড়ির লোকেরাও কিছুটা বুঝতে পারবে, অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কিছুদিন ধরে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। হঠাৎ করে নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখা। কারও সঙ্গে মিশছে না। বারবার করে আত্মহত্যার কথা বলছে। কিছু ভালো লাগছে না , বেঁচে থেকে কী হবে, জীবন সম্পর্কে হতাশা, তার হয়তো আর কিছু হবে না। কোনও কিছু ক্ষতি হলে, সেই জায়গা থেকে তিনি আর ফিরে আসতে পারবেন না এমন ভাবনা। কিছুদিন ধরে হয়তো কোনও ওষুধ জোগাড় করছে। বা, দড়ি, কোনও অস্ত্র, যেগুলো দিয়ে আত্মহত্যা করে, সেগুলো কিছু জোগাড় করছে। বাড়ির লোক একটু সতর্ক থাকলে এগুলো বুঝতে পারবেন।

প্রতিরোধ কি সম্ভব, কীভাবে? প্রতিরোধ সেই হিসাবে ১০০% কোনও ভাবে সম্ভব নয়। কোনও মানুষ যদি ভেবে থাকেন তিনি আত্মহত্যা করবেন, কোনও ভাবে যদি তিনি প্রকাশ না করেন, তা হলে কেউ তাকে বাঁচানো যায় না। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আছে, এক্ষেত্রে কিন্তু আগে বলে। ডিপ্রেশন থাকলে বলে তার ভাল লাগছে না বা অন্য কিছু।

ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং দেখে আত্মহত্যা করার চেষ্টা কম বয়সিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তার হয়তো কোনও সমস্যা হয়েছে, কাউকে বলেছে আত্মহত্যা করবে, কিন্তু সে বিশ্বাস করেনি। লাইভ স্ট্রিমিং যদি করা হয় তাহলে সেও দেখবে অন্য অনেক দেখবে যে কীভাবে আত্মহত্যার সময় কষ্ট পাচ্ছে। যদিও মরে যাচ্ছে, কিন্তু এভাবেও কোথাও একটা প্রচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর একটা বিষয় থাকে, যেটা হল তার কষ্টটাকে জানানো। লাইভ স্ট্রিমিং করে তা দেখিয়ে দিয়ে গেল সে। এটা দেখেও অনেকে আছে যারা অনুকরণ করে।

কাছের মানুষ কীভাবে সাহায্য করতে পারেন? যদি বলে, তা হলে কাছের মানুষ অনেক রকম ভাবে হেল্প করতে পারেন। ভালো কাউন্সেলিং যদি করতে পারেন কাছের মানুষ, বা কীভাবে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে, সেটা যদি কাছের মানুষ ভালো বোঝেন, তা হলে বেরিয়ে আসতে পারে আত্মহত্যার ইচ্ছা থেকে। কোন একটি বিষয় হচ্ছে, যিনি আত্মহত্যা করতে চাইছেন, তাকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়া। আমি বলছি, তোর কিছু হবে না, কাছের মানুষের এরকম বক্তব্য দিয়ে সব সময় হয় না। তিনি আত্মহত্যা করতে চাইছেন তাঁর হতাশা, তাঁর মনের মধ্যে অনেক কষ্ট চলছে, যদি তিনি মনে করেন, কোনও একটি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার তাঁর উপায় নেই, এ ক্ষেত্রে কিন্তু আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে আসা জরুরি। কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো দিলে আত্মহত্যা করার প্রবণতা কমে যায়। এর সঙ্গে অন্য চিকিৎসা করা হয়। যে কারণে তার মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে সেই সব কারণের জন্য।Conclusion:জীবন একটাই। বাঁচতে শিখুন। শেষ করে ফেললে মরে গেলে তো কিছু আর দেখতে পাবেন না। জীবনের মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে রয়েছে ভালো-মন্দ সবকিছু রয়েছে। রাতের পরে দিন আসে । খারাপ কিছু একটা ঘটলে সব সময় সেটা পার্মানেন্ট নয়। আবার ভালো কিছু ঘটবে। সুতরাং সেই আশা রাখা উচিত । আর যদি কোনও সময় কোনও সমস্যা হয়, মানসিক কোনও সমস্যা হয় , তাহলে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে চলে আসুন।

_______


বাইট:
wb_kol_03a_suicide_prevention_bite_7203421
ডাক্তার শর্মিলা সরকার, অ্যসোসিয়েট প্রফেসর, সাইকিয়াট্রি বিভাগ, কলকাতা ন‍্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল




Last Updated : Sep 11, 2019, 2:49 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.