কলকাতা, 27 ডিসেম্বর : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে ঘেরাওয়ের রাজনীতি । ডিসেম্বরেই চারবার কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষককে ঘেরাও করার ঘটনা ঘটেছে । গতকাল এর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । তিনি যাদবপুরের ছাত্র-ছাত্রীদের ঘেরাওয়ের রাজনীতির পথ থেকে সরে আসার পরামর্শ দেন । তাঁর বক্তব্য, আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে সমস্তটা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্য দুই বজায় থাকবে।
9 ডিসেম্বর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফ্যাকাল্টির স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (এফইটিএসইউ) গভীর রাত পর্যন্ত উপাচার্য সুরঞ্জন দাস সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহ-উপাচার্যকে ঘেরাও করেছিল । আবার 11 ডিসেম্বর জেইউএমএস কমিটির বৈঠকের দিনও সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য, ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন সহ কয়েকজন কর্তাকে ফের গভীর রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে এফইটিএসইউ-র সদস্যরা । 16 ডিসেম্বর ডিন অফ আর্টস ওমপ্রকাশ মিশ্রকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা খোলা আকাশের নিচে ঘেরাও করে রেখেছিল আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (এএফএসইউ) সদস্যরা। 23 ডিসেম্বর ফের রাত দেড়টা পর্যন্ত সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য সহ তিন ফ্যাকাল্টির ডিন ও কয়েকজন অধ্যাপককে ঘেরাও করে রাখে এফইটিএসইউ ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিকবার ঘেরাওয়ের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ যে অসন্তুষ্ট তা 23 ডিসেম্বরের ঘটনার পর অধ্যাপক মহলে উপাচার্যের পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ থেকেই স্পষ্ট । ওইদিনের ঘটনার পর সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও জানা যায় ।
এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : পড়ুয়াদের 64 দফা দাবি নিয়ে 14 ঘণ্টার বৈঠক যাদবপুরের উপাচার্যের
গতকাল এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একাংশের ব্যবহারে শিক্ষকরা পর্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ছেন। উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ফাইন্যান্স অফিসার সহ যেভাবে ঘেরাও করা হচ্ছে এই রাস্তা তাঁরা প্রত্যাহার করুন । সবচেয়ে বড় কথা তাঁরা অসুস্থও হয়ে পড়ছেন । ইতিমধ্যে চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । উপাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়ছেন । আরেক সহ-উপাচার্য প্রদীপ ঘোষ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ।"
এই সংক্রান্ত আরও পড়ুন : ঘেরাও-আন্দোলনে জেরবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে ছাত্রদের ঘেরাওয়ের রাজনীতি থেকে দূরে এসে আলোচনার পথে হাঁটার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, "আমি বলছি যদি দাবিদাওয়া থাকে তা আলোচনা করে মেটানো হোক। আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। কিন্তু ঘেরাওয়ের রাজনীতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে উচ্চ শিখরে তাঁদের স্থান আছে সেই স্থানে তাঁরা যেন থাকতে পারে, তাঁদের সেই অবস্থানের যেন বদল না হয় । যে সমস্ত ছাত্ররা এই পথ বেছে নিয়েছেন তাঁদের বলব আলোচনা করেই এই সমস্ত সমস্যার সমাধান বিশ্ববিদ্যালয় করুক । কিন্তু, ঘেরাওয়ের মধ্যে দিয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে । তাঁরা তো ছাত্র, শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁরা যদি যথাযথভাবে আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে তা করেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্য দুটোই বজায় থাকবে।"