কলকাতা, 4 মে : লকডাউনের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়েছে । আর তার জেরে আর পাঁচজনের মতো কপালে চিন্তার ভাঁজ গৃহশিক্ষকদেরও । কারণ লকডাউনের ফলে বাড়িতে ছাত্র পড়ানো বন্ধ হয়ে গেছে । সংসারে অভাব দেখা দিয়েছে । অন্যদিকে কয়েকজন ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে ছাত্র পড়ানোর কাজ বজায় রাখলেও তা কতদিন চালাতে পারবেন বুঝতে পারছেন না । রোজগারের একমাত্র পথ বন্ধ হওয়ায় সরকারের কাছে আবেদন জানালেন গৃহশিক্ষকরা । অনুমতি চাইলেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পড়ানোর ।
গৃহশিক্ষকদের এই সমস্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির সহ-সম্পাদক সোহম ভট্টাচার্য বলেন, "আমাদের গৃহশিক্ষকদের অবস্থা খুবই করুণ । পড়াতে পারছেন না কেউ । ফলে মাসিক কোনও আয় নেই । অভিভাবকদের অবস্থাও ভালো না । ফলে, তাঁরাও বেতন দিতে পারছেন না । সরকারি কোনও সাহায্য আমরা কোনওদিনই পাই না । বয়স্ক বাবা-মা, পরিবার-পরিজন নিয়ে গৃহশিক্ষকদের অবস্থা জর্জরিত । বিশেষ করে গ্রামের গৃহশিক্ষকদের ।"
রাজ্যজুড়ে 1 লাখের অধিক গৃহশিক্ষক পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির সদস্য । এছাড়া, আরও বহু গৃহশিক্ষক রয়েছেন যাঁরা সংগঠনের সঙ্গে এখনও যুক্ত হননি । অধিকাংশেরই রোজগারের পথ এখন বন্ধ । সঞ্চিত অর্থ দিয়েই এখন সংসার চালাচ্ছেন বেশিরভাগ গৃহশিক্ষক । বনগাঁর গৃহশিক্ষক সুব্রত মণ্ডল বলেন, "আমাদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ । যেহেতু 21 মার্চের পর জনতা কারফিউ ও তারপর লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছিল তাই কেউই বেতন সংগ্রহ করতে পারেননি । ফলে, মার্চ ও এপ্রিলের বেতন আমরা পাইনি । বাজে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি । এটা আরও চললে ভবিষ্যতে খুব সমস্যায় পড়তে হবে ।"
দমদমের দুর্গানগর এলাকার গৃহশিক্ষক উজ্জ্বল দত্ত বলেন, "অবস্থা তো সঙ্গীন । এর উপরেই আমাদের নির্ভর করতে হত । এই পরিস্থিতিতে বিকল্প রোজগারের পথও আমরা ভেবে উঠতে পারছি না । লকডাউনের পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে । এককথায় আমরা বুঝতে পারছি না কী করব । সংসার চালাতে হচ্ছে কষ্ট করে । আমার ছোটো বাচ্চা আছে । তাদের নিয়ে আর পেরে উঠছি না । যা সঞ্চয় ছিল তা দিয়ে দেড় মাস চালালাম । এরপর কী করব জানি না ।"
বরানগরের গৃহশিক্ষক বিজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, "পুরোপুরি ঘরে বসে আমরা । যেসব পড়ুয়াকে আমরা ঘরে গিয়ে পড়াতাম তাদের অভিভাবকরা বলছেন, এখন থাক । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আসবেন । ফলে, বেতন চালু থাকছে না । ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমরা বেতন পেয়েছি । মার্চ, এপ্রিল, মে মাস হয়ে গেল । এখনও এক টাকাও পাইনি । খুব বাজে অবস্থার মধ্যে রয়েছি । আমাদের তো দ্বিতীয় কোনও পেশা নেই । সরকারের তরফে বিষয়টা নিয়ে ভাবলে ভালো হত ।"
এই পরিস্থিতিতে আয়ের পথ খুলে দিতে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন গৃহশিক্ষকরা । তাঁদের বক্তব্য, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও COVID-19-এর জন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলি মেনে পড়ানো শুরু করার অনুমতি দিক সরকার । সোহম ভট্টাচার্য বলেন, " সরকার আমাদের পেশাতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পড়াতে অনুমতি দিক । না হলে গৃহশিক্ষকরা অনাহারে মারা যাবেন । আয়ের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ । বর্ধমানে এরকমও দেখা গেছে, সবজি বিক্রি করছেন গৃহশিক্ষক । আমাদের অবস্থাও সেইদিকে যাচ্ছে । পড়তে না পাঠালে স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবকরা বেতন দেবেন না । তাঁদেরও আর্থিক অবস্থা এখন খারাপ । কিন্তু, যদি পড়ানোর অনুমতি পাওয়া যেত তাহলে 20 জন পড়ুয়ার মধ্যে 5-7 জনের অভিভাবক বেতন দেবেন । তাহলেও তো আমরা কোনওরকমে খেয়ে বেঁচে থাকব । বর্তমানে খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে আমাদের দিন অতিবাহিত হচ্ছে ।"
পড়ানো শুরু করার অনুমতির পাশাপাশি সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যেরও আবেদন জানান তাঁরা । সোহম বলেন, "সরকার যদি আর্থিক সাহায্য দেয় তাহলে খুবই ভালো হত । আগে আমাদের পড়ানোর অনুমতি দিক । তার পাশাপাশি কিছু আর্থিক সাহায্য করলে আমাদের খুবই সুবিধা হয় ।"