কলকাতা, 11 সেপ্টেম্বর : কোরোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ হোক কিংবা নেগেটিভ, রোগীকে কেন প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি ? হলফনামা দিয়ে বেলঘরিয়ায় অবস্থিত একটি নার্সিংহোমকে তার কারণ দর্শাতে বলল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন তথা ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিকাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC) । ওই নার্সিংহোমে 5 মিনিটের মধ্যে এক যুবককে পরীক্ষার পর একটি সাদা কাগজে কোভিড পজ়িটিভ লিখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে । গোটা ঘটনায় ওই নার্সিংহোমের পরিষেবায় খামতি রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে কমিশন । এই কারণে জরিমানা স্বরূপ ওই নার্সিংহোমকে 5 লাখ টাকা কমিশনে জমা রাখার কথাও বলা হয়েছে ।
10 জুলাই রাতে উচ্চ মাধ্যমিকের এক পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন তাঁর মা-বাবা । এদিকে ইছাপুরের বাসিন্দা ওই যুবক আদৌ কোরোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না, তা জানতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন তাঁরা । আদালতের নির্দেশে 15 জুলাই পোস্টমর্টেমের পর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে প্রশাসন । যুবকের মৃত্যুর 1 সপ্তাহ পরে 17 জুলাই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় যে, 75.23 শতাংশ নম্বর পেয়েছেন তিনি । আগামী দিনে ওই যুবক আইন নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন ।
মৃতের মা-বাবা জানিয়েছেন, 4 থেকে 6 সপ্তাহের মধ্যে পুলিশকে রিপোর্ট পেশ করতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট । ইতিমধ্যেই 6 সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে । তবে, এখনও তাঁরা অপেক্ষা করছেন । অসুস্থতা বোধ করায় 9 জুলাই ওই যুবককে কামারহাটির ESI হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় পরের দিন 10 জুলাই সকালে আবার তাঁকে কামারহাটির ESI হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । তাঁর বাবা জানিয়েছিলেন, ছেলের জ্বর, সর্দি, কাশি কিছুই ছিল না । হেঁটে হেঁটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন । হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেছিলেন, হাই ব্লাড-সুগার রয়েছে । কিন্তু, ওই হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়, কারণ সেখানে ভেন্টিলেটর নেই। অথচ, তাঁকে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টে রাখতে হবে । সেখান থেকে বেলঘরিয়ায় অবস্থিত একটি নার্সিংহোমে যুবককে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । ওই যুবকের যে ব্লাড সুগার রয়েছে, তা তাঁর মা-বাবা ওইদিন প্রথম জেনেছিলেন ।
মৃতের মা-বাবার অভিযোগ, বেলঘরিয়ার ওই নার্সিংহোমে প্রথমে চিকিৎসা মিলছিল না । বিষয়টি পুলিশকে জানানোর কথা বলার পরে ওই নার্সিংহোম তৎপরতা দেখায় । তাঁদের ছেলের রক্তের নমুনা 5 মিনিটের মধ্যে পরীক্ষা করে নার্সিংহোম থেকে জানানো হয় ওই যুবক কোরোনায় আক্রান্ত । কোরোনা পরীক্ষার রিপোর্ট হিসাবে একটি সাদা কাগজে লিখে দেয় ওই যুবক কোরোনায় আক্রান্ত । নার্সিংহোম থেকে ফের নিয়ে যাওয়া হয় কামারহাটির হাসপাতালে । সেখানে থেকে কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় । তবে, কামারহাটিতে চিকিৎসা মেলেনি বলে অভিযোগ ।
মৃতের বাবার অভিযোগ, কামারহাটির ওই মেডিকেল কলেজ থেকে বলা হয়, তাঁর ছেলের কোরোনা পজ়িটিভ হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তরের তালিকায় দেখা যাচ্ছে না । তাই ভরতি নেওয়া সম্ভব নয় । এর পরে তাঁরা অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে একটি ক্লাবের অ্যাম্বুলেন্সে করে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আসেন 10 জুলাই দুপুর 2টো নাগাদ । কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আসার পরেও চিকিৎসা মিলছিল না । রোগী তখন ঝিমিয়ে পড়েছেন । তাঁর শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছিল । অ্যাম্বুলেন্সেই দীর্ঘ সময় পড়ে ছিলেন ৷ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় রোগীর মা হুমকি দেন, চিকিৎসা শুরু না হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন ।
তারপর বিকাল সাড়ে 4টে নাগাদ ভরতি নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । অভিযোগ, কোভিড ওয়ার্ডে রাখার দরুণ বলা হয়, ছেলেকে আর দেখতে দেওয়া হবে না ৷ তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই ফিরে আসেন যুবকের মা-বাবা । সেদিন রাতেই মৃত্যু হয় যুবকের । চিকিৎসার গাফিলতি নিয়ে বেলঘরিয়ার ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের বাবা-মা । বৃহস্পতিবার কমিশনে এই মামলার শুনানি হয় ।
কমিশনের চেয়ারপার্সন জাস্টিস (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মেডিকেল এইডের বিষয়ে আমরা ওই নার্সিংহোমকে হলফনামা দিয়ে বলার আবেদন করেছি ৷ নার্সিংহোম তা স্বীকার করেছে, ওখানে টেস্ট করানো হয়েছে । কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, ওই নার্সিংহোম বলেছে, ওখানে কোরোনা চিকিৎসার জন্য কোনও ব্যবস্থা ছিল না ।"
তিনি আরও জানান যে, বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে পজ়িটিভ হোক, নেগেটিভ হোক প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব ওই হাসপাতালেরই ৷ বিশেষ করে ESI হাসপাতালের সঙ্গে টাইআপ আছে । ওই হাসপাতালকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে, তার সঙ্গে 5 লাখ টাকা আমাদের কাছে জমা রাখতে বলা হয়েছে ।" কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, "প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, এক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থারও খামতি হয়েছে । সেই জন্য আমরা 5 লাখ টাকা জমা রাখতে বলেছি ।"