কলকাতা, 31 জানুয়ারি : 2015 সালে রাজ্যে শেষবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণের পরীক্ষা টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (টেট) হয়েছিল । তার প্রায় 5 বছর পর আজ হল প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা । এদিন দুপুর একটা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত হয় পরীক্ষা । পরীক্ষা শেষে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জানান, রাজ্যে সর্বত্র নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে টেট পরীক্ষা ।
2017 সালের 12 মে প্রকাশিত হয়েছিল টেট-2017-র বিজ্ঞপ্তি । সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জমা পড়ে বহু আবেদন । কিন্তু বছরের পর বছর কেটে যায় । হয়নি পরীক্ষা । অবশেষে 2020 সালের শেষের দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন 2021-র 31 জানুয়ারি অফলাইনে হবে প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা । সেই ঘোষণা বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগী হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ । অবশেষে প্রায় পাঁচ বছর পর আজ হল টেট পরীক্ষা । পর্ষদ সূত্রে খবর, প্রায় আড়াই লাখ প্রার্থী ছিলেন এদিনের পরীক্ষায়। পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল এক হাজারের কাছাকাছি ।
সাড়ে তিনটেয় পরীক্ষা শেষের পর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, "সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নে সারারাজ্যে সম্পন্ন হল টেট পরীক্ষা । আড়াই লক্ষ প্রার্থী ছিল । সম্পূর্ণ নির্বিঘ্নে, অভিযোগহীন একটি পরীক্ষা পরিচালনা করা গেল রাজ্যে । কোভিড পরিস্থিতির পর এটাই আমাদের রাজ্যে সবথেকে বড় অফলাইন পরীক্ষা । আড়াই লাখ প্রার্থী নিয়ে পরীক্ষা এটাই প্রথম । আমরা এটাও নিশ্চিতরূপে বলতে পারি কোথাও কোরোনার সুরক্ষাবিধি লঙ্ঘন হয়নি । মুখ্যমন্ত্রীর যে ঘোষণা ছিল যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ অফলাইনে পরীক্ষা নেবে আড়াই লাখ প্রার্থীর, আমরা সেটা পর্ষদের তরফে করতে পেরেছি ।"
এতো বছর পর পরীক্ষা দিতে পেরে খুশি পরীক্ষার্থীরাও । এদিন হিন্দু স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিলেন পার্কসার্কাসের সাবিনা খাতুন । তিনি সাত মাসের অন্তসত্ত্বা । তাঁর বাবা সম্প্রতি কোরোনায় মারা গিয়েছেন । ফলে, তাঁর উপর সংসারের একটা চাপ এসেছে । সেই চাপ ও সঙ্গে আশা নিয়েই আজ পরীক্ষা দিলেন সাবিনা । হিন্দু স্কুলেই পরীক্ষা দেন বেহালার ইসমাইল শেখ । চোখে শিক্ষক হওয়ার আশা নিয়ে দৃষ্টিহীন ওই প্রার্থী রাইটারের সাহায্য নিয়েই এদিন পরীক্ষা দিলেন । অন্য রাজ্যেরও অনেক প্রার্থী এদিন টেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন । পরীক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষা মোটামুটিভাবে ভালো হলেও গণিতের অংশটা একটু কঠিন ছিল।
অন্যদিকে, এদিন এক সদ্য প্রসূতিকে হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য । বুল্টি খাতুন নামে ওই প্রার্থী গতকালই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন কেতুগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে । আজ সকালেই তিনি পর্ষদের হেল্পলাইনে ফোন করে পরীক্ষায় বসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন । সঙ্গে সঙ্গে যাবতীয় ব্যবস্থা করে তাঁকে হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন পর্ষদ সভাপতি ।
মানিক ভট্টাচার্য বলেন, "আমার কাছে খবর আসে এক সদ্য প্রসূতি পরীক্ষায় বসতে চান । আজ সকালেই আমায় ফোন করে কেঁদে ফেলেছিল, বলছিল স্যার আমি তো নড়তে পারব না, আমি পরীক্ষা দেব । ও পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েই পরীক্ষা দিতে চাইছিল । আমি নিরস্ত করি । তারপরে ওর সবথেকে কাছের পরীক্ষাকেন্দ্র কাটোয়ার ভারতী ভবন হাইস্কুলের সেন্টার ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলি । পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলি যাতে স্থানীয় বিডিও পরীক্ষায় ইনভিজিলেশনের দায়িত্ব নেন । তারপরে চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে একটা রুমের ব্যবস্থা করে আমরা ওই সদ্য প্রসূতির পরীক্ষাটা গ্রহণ করতে পেরেছি । প্রশ্নপত্র এসকর্টের সঙ্গে পাঠানো হয় হাসপাতালে । স্থানীয় বিডিও সাড়ে তিন ঘণ্টা উপস্থিত ছিলেন ওখানে । চিকিৎসকদের পরামর্শে একটু হেলান দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে ওই সদ্য প্রসূতি। "
আরও পড়ুন : পথে গাড়ি কম থাকায় পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে দেরি, পরীক্ষা দেওয়া হল না 7 টেট পরীক্ষার্থীর
পর্ষদ সভাপতি আরও বলেন, "এটা করতে পেরে আমি তৃপ্ত। এটা একটা নজির। আজ যদি এই পরীক্ষা দিতে না পারত তাহলে কতটা মানসিক চাপ পড়ত ওর উপর। এটা তো ওর হাতে নেই। তাই আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। আজকের এই পরীক্ষাটা দিতে পেরে জোড়া সুখবরটাই রয়ে যাবে ওর জীবনে ।"