কলকাতা, 30 নভেম্বর : লকডাউনের মধ্যেও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে । সরকারের উপর কীভাবে চাপ সৃষ্টি করা যায় তা নিয়ে রণকৌশল ঠিক করছে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি । ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি থেকে লাগাতার রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের টাস্ক ফোর্সের ভূমিকা নিয়ে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে বিরোধীরা । প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরি দিল্লি থেকে ফিরে এসে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে BJP এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে জনমত তৈরি করবে বলে জানা গিয়েছে ।
গত বছরের অক্টোবরে খুচরা বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 4.62 শতাংশ । সেপ্টেম্বরে ছিল 3.99 শতাংশ । বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, দেশের অর্থনীতিবিদদের অনেকেরই আশঙ্কা বিশেষ করে গ্রাম ভারতে এবং শহরে কাজ খোয়ানো অংশের মধ্যে অনাহার-অর্ধাহারে থাকা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । কোরোনায় যেখানে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার অনেক বেশি সহযোগিতা করে, আমাদের দেশে এবং রাজ্যে সেই চিত্রটা একেবারে বিপরীত । খাদ্যপণ্যের দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই । এখনও তরিতরকারির দাম বেড়েই চলেছে । পাইকারি বাজারে 25 শতাংশ বৃদ্ধি হলে শেষ পর্যন্ত খুচরা বাজারে এসে তার দাম আরো অনেকটাই বৃদ্ধি পায় । আলুর দাম যেমন গতমাসের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে । তেমনই ডালের দামও পাইকারি সূচকে বেড়েছে প্রায় 16 শতাংশ । যা গত মাসেও ছিল 12.53 শতাংশ । সর্বভারতীয় হিসেবে চলতি মাসে আলুর দাম 107 শতাংশ বেড়েছে । কীভাবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়ে, হেলদোল নেই রাজ্য সরকারের ।
কেন্দ্রীয় সরকার তো নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সংজ্ঞা বদলে দিলেন । রাজ্য সরকার দায় চাপাচ্ছে কেন্দ্রের উপর । জানিয়েছেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য । পাইকারি বাজারে মূল্য বৃদ্ধি গতমাসে ছিল 1.48 শতাংশ । যা আট মাসে সর্বাধিক । ফেব্রুয়ারির পর এটিই সর্বোচ্চ । সরকারের হিসেবে খাদ্যপণ্যের পাইকারি মূল্য অক্টোবরে কিছুটা কমেছে । যদিও বাস্তবের সঙ্গে এই তথ্যের তেমন মিল নেই বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য । কোরোনা হওয়ার পর সাধারণ মুদ্রাসংকোচন বা ডিফ্লেশন দেখা দিয়েছিল । 5 বছরে প্রথম এই সংকোচন ঘটেছে পরপর মাসগুলোতে । বর্তমান পরিস্থিতিতে চাহিদা এবং সরবরাহ তলানিতে ঠেকায় মুদ্রাস্ফীতির বদলে মুদ্রাহ্রাস হয়েছে ।
এই বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিতভাবে প্ল্যাকার্ড এবং পোস্টার তৈরি করে লাগাতার বিক্ষোভে নামবে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি । সংক্রমণের জন্য বিধানসভা অধিবেশন বসানো যায়নি দীর্ঘদিনের জন্য । মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিধানসভাতে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করার পরিকল্পনা রয়েছে বিরোধীদের । কর্মচ্যুত এ রাজ্যের মানুষ এবং গরিব মানুষের মুখে খাদ্য দ্রব্য পৌঁছে দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন জানাবে বিরোধীরা ।