কলকাতা, 18 মার্চ: কোষাগারের হাল ফেরাতে দিনরাত এক করে ফেলছেন পৌর আধিকারিকরা। তবু কিছুতেই যেন হাল ফিরছে না। আগামী অর্থ বর্ষের 146 কোটি ঘাটতি বাজেট পেশ করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। আর সেই বেহাল কোষাগার থেকেই কলকাতা কর্পোরেশনের এক আধিকারিক প্রতি মাসে শুধু চায়ের খরচ তুলছেন 35 হাজার টাকা। চোখ কপালে ওঠা এমন তথ্যই সামনে এসেছে কর্পোরেশন (Kolkata Municipal Corporation) সূত্রে। এই ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা সুর চড়াতে শুরু করেছেন। পৌরনিগমের উচ্চপদে আসীন একাধিক আধিকারিকরাও আকাশ থেকে পড়ার জোগাড়।
বেশ কিছুদিন আগে কর্পোরেশন তোলপাড় হয়েছিল পেনশন ও অবসরকালীন আর্থিক সুযোগ টাকার অভাবে বন্ধ থাকায়। পেনশন নিয়মিত হলেও বহু পরে বাকি টাকা মিলত। এখনও কম-বেশি গ্রাচুইটি টাকা পেতে কালঘাম ঝড়ছে কর্মীদের। মালিরা বেতন পাচ্ছেন না। মেয়র বাজেট পেশ করে বলেছেন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে কর্মীদের বর্ধিত বেতন দিতে গিয়ে। যখন এমন টালমাটাল পরিস্থিতি তখন কলকাতা কর্পোরেশনের চিফ মিউনসিপ্যাল ল অফিসার ( সিএমএলও) মহম্মদ সেলিম আনসারি বেতন নয় প্রতি মাসে 35 হাজার টাকা শুধু চা ও স্ন্যাকস বাবদ খরচ তোলেন।
কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে খবর, মেয়র, মেয়র পারিষদ, পৌর কমিশনার-সহ হাতে গোনা কয়েকজন এই খরচ পান। তাও বেশি হলে 15-18 হাজার হয়। সেটা সব মাসে নয়। কিন্তু এই আধিকারিকের এত টাকা কীভাবে খরচ হয়? সেই ভেবে পৌরনিগমের একাধিক আধিকারিক আকাশ থেকে পড়ার জোগাড়। শুধু তাই নয় প্রতি বছর এই খরচ ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে। আগে 4 হাজার 500 টাকা ছিল। সেটা বেড়ে 8 হাজার, 11 হাজার আর সেখান থেকে ধাপে ধাপে 35 হাজার করা হয়েছে।
যখন করোনাকালে টাকা দিতে দেরি হয়েছে, কর্মীদের বহু জায়গায় বেতন কমেছে তখনও এই টাকাতে ছেদ পড়েনি। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, তিনি আরও কয়েকটি খাতে মোটা টাকা তোলেন পৌর কোষাগার থেকে। সেই কীর্তিমান সিএমএলও মহম্মদ সেলিম আনসারির সঙ্গে এই ঘটনার বক্তব্য জানতে চেয়ে ফোন যোগাযোগ করা হয়। তবে ফোন বেজে গেলেও তিনি তোলেননি। এদিকে এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ।
আরও পড়ুন: শহরে গঙ্গাপাড় ভাঙন রোধে ম্যানগ্রোভ লাগানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে কর্পোরেশন
তিনি বলেন, "কর্পোরেশন বলে টাকা নেই। আর্থিক অভাগ 30 হাজার শূন্যপদ। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা সঠিক সময় ভাতা পান না। বেতন দেরি হচ্ছে চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের। মালিদের টাকা আটকে। আর একজন আধিকারিক যিনি আবার কলকাতা কর্পোরেশনের সঙ্গে পাঁচ জায়গার উপদেষ্টা তিনি চা খরচ বাবদ এই বিপুল টাকা তুলছেন।" এই অবস্থার জন্য ফিরহাদ হাকিমকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। কলকাতা কর্পোরেশনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, "হাতে গোনা কয়েকজন এই খরচ পান। কিন্তু সেটাও নির্দিষ্ট টাকা। 35 হাজার টাকা চা বাবদ এমন কেউ তোলেন না। উনি কীভাবে তুলছেন সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।"