কলকাতা, 30 অক্টোবর: রবিবার 'পশ্চিমবঙ্গ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস' (West Bengal National University of Juridical Sciences)-এর 14তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে 'মিডিয়া ট্রায়াল'-এর বিরুদ্ধে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷ রাজারহাটের কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী 'রাজনীতিকদের সম্মানহানি' করা নিয়ে সরব হন ৷ তিনি বলেন, আজকাল অকারণে মানুষকে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে ৷ সম্মান চলে গেলে ফিরে পাওয়া যায় না ৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষা করুন ৷ এক শ্রেণির মানুষ সব গণতান্ত্রিক শক্তি কুক্ষিগত করেছে ৷ এরকম চলতে থাকলে দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিস্থিতি তৈরি হবে ! দয়া করে গণতন্ত্রকে রক্ষা করুন ৷
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরই এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিরোধীরা ৷ বিশিষ্ট আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, তিনি কী বলেন, তা একমাত্র তিনিই বোঝেন ৷ আমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনও অর্থ খুঁজে পেলাম না ৷ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে, এটা সঠিক ৷ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রাখার নাম করে দুর্নীতি করা হবে ! আর তাঁদের বিরুদ্ধে যদি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে সম্মানহানির কথা বলে কান্নাকাটি করবেন ! এই দু'টো জিনিস পাশাপাশি যায় না ৷ দু'টো পরস্পরের পরিপূরক হতে পারে না ৷ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে ৷ তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পক্ষে নন বলেই এইসব আত্মসম্মানের কথা বলছেন !
আরও পড়ুন: দেশের প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে সরব মমতা
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, পরোক্ষে বিচারব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ আজ পশ্চিমবঙ্গে প্রতারিত, বঞ্চিতরা বিচারের আশায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ৷ বিচারপতিরা এখনও পর্যন্ত বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষদের পাশে আছেন ৷ অন্তত তাঁদের দেওয়া বিভিন্ন রায় সেই কথাই বলছে ৷ এই বিষয়টা শাসকদলের ভালো লাগছে না ৷ তাই ঘুরিয়ে রক্তচক্ষু দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ বিচারব্যবস্থাকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে ৷ এটাই তার একটা প্রয়াস ৷
অন্যদিকে, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ঠেলায় পড়লে সকলেরই সম্বিৎ ফিরে আসে ৷ এখানে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থাও সেইরকম হয়েছে ৷ এখন ধাক্কা খাওয়ার পর বুঝতে পারছেন, পরিস্থিতি কেমন লাগছে ! তাঁর বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখার জন্য একজন প্রোফেসরকে তিনি জেলে পাঠালেন ! সত্য কথা লেখার জন্য একের পর এক ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরও তিনি ছাড়লেন না ! তখন গণতন্ত্রের কথা মনে পড়েনি মুখ্যমন্ত্রীর ? যেভাবে বিভিন্ন ভোটে তাঁর দলের গুন্ডারা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে, সেই সময় গণতন্ত্রের কথা মনে পড়ে না মুখ্যমন্ত্রীর ? এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে বড় চিন্তিত ! কিন্তু যখন কেন্দ্রীয় সরকার কোনও বৈঠকে ডাকে, তখন রাজ্যের তরফ থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো হয় না ! কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধি এলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলাও হয় না ! প্রতি পদে যে কাজগুলি করে এসেছেন, তিনি নিজেই আর তার বিরোধিতা করছেন ৷ এসব দেখতে ভালোই লাগছে !
এদিকে, এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও অতিরঞ্জিত কথা বলেননি ৷ বরং একটা অপ্রিয় সত্যি কথা তিনি তুলে ধরেছেন ৷ যাঁরা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের সমালোচনা করছেন, তারা মুখ্যমন্ত্রীর পুরনো বইগুলি পড়েননি ৷ কুণাল ঘোষ বলেন, "আজকে যে কথাগুলি শুনে ওঁদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে, তাঁরা ওই বইগুলো পড়লে বুঝতে পারতেন এই কথাগুলো তিনি অনেকদিন আগে থেকেই বলে আসছেন ৷ অন্য কোথাও আশাহত হলে জুডিশিয়ারির উপর আস্থা রাখা তো একটা ইতিবাচক দিক ৷ একইসঙ্গে গোটা বিষয়টি সময়োপযোগীও বটে ৷ তবু কেন এর সমালোচনা হচ্ছে বুঝতে পারছি না ৷ আর কোন বিরোধীরা এই কথা বলছেন ? যাঁরা গণহত্যা থেকে শুরু করে গণধর্ষণে অভিযুক্ত, জনগণের আস্থা ভরসা হারিয়ে শূন্যে পরিণত হয়েছেন, যাঁরা দিল্লির ক্ষমতা অপপ্রয়োগ করে বাংলা দখল করতে অসফল হয়েছেন ! এঁরা কে, কী বললেন, সেটা খুব একটা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না ৷"