কলকাতা, 6 জানুয়ারি : ঢেলে সাজানো হয়েছিল বন্ধু অ্যাপ । অ্যাপকে মহিলাদের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিল কলকাতা পুলিশ । অ্যাপ্লিকেশনের উদ্বোধন করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা । কিন্তু উদ্বোধনই সার । কলকাতা শহরের অনেক মহিলা জানেনই না সেকথা । এবার তাই কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা নির্দেশ দিয়েছেন বন্ধু অ্যাপের ব্যাপক প্রচারের । জানা গেছে, পুলিশ কমিশনার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের ইলেকট্রনিক্স হোর্ডিংগুলিতে বন্ধু অ্যাপ এবং তার মাধ্যমে নারী সুরক্ষার বিষয়গুলি নিয়ে প্রচার করা হবে । পাশাপাশি পরিকল্পনা চলছে একটি শর্টফিল্ম তৈরির । যেটি শহরের সিনেমা হল এবং মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে দেখানো হবে । সেই ফিল্মে বলা হবে বন্ধু অ্যাপ কিভাবে মহিলাদের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে । পাশাপাশি কীভাবে অ্যাপে থাকা প্যানিক এলার্ম কাজ করবে সেটিও বোঝানো হবে ।
এ "বন্ধু"বড় কাছের । এ “বন্ধু" বিপদের । এই "বন্ধু" কলকাতা পুলিশের নতুন অ্যাপ । কলকাতায় নারী সুরক্ষায় এই অ্যাপ ভীষণভাবে কার্যকরী হবে বলে বিশ্বাস পুলিশের । রাস্তাঘাটে আক্রমণ কিংবা ইভটিজ়িংয়ের শিকার হতে হয় মহিলাদের । অনেক সময় অসহায়ের মত সহ্য করতে হয় সেসব । অনেক সময় শিকার হতে হয় হেনস্থার । পথে-ঘাটে, বাসে, ট্রামে অবাঞ্ছিত স্পর্শ বা অশালীন উৎপাতের লক্ষ্য কখনও কখনও হতে হয় মহিলাদের । শারীরিকভাবে হেনস্থা বা উত্যক্ত করার সুযোগ কখনও কখনও খোঁজে বিকৃত রুচির কেউ কেউ । আর সেদিকে নজর রেখেই দিন কয়েক আগে তেজস্বিনীর ট্রেনিং দেয় পুলিশ । লক্ষ্যটা পরিষ্কার । অসহায়ের মতো আর সহ্য করা নয় । তেমন পরিস্থিতিতে নারীরা পালটা দিক উত্যক্তকারীদের । পাশাপাশি নারী সুরক্ষায় কলকাতা পুলিশ চাইছিল আরও জোরদার পদক্ষেপ । যে কোনও মুহূর্তে মহিলাদের বিপদে পাশে দাঁড়াতে চাইছে কলকাতা পুলিশ । আর তাই বন্ধু অ্যাপকে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে বিপদগ্রস্ত নারীর আঙুলের এক টাচেই খবর পৌঁছে যায় কলকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ।
কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, পড়ুয়া থেকে চাকুরে, শহরের যুবতিদের মধ্যে এই অ্যাপ নিয়ে খুব একটা ধারণা নেই । কারণ হিসেবে উঠে এসেছিল কলকাতা পুলিশের এই অ্যাপটি নিয়ে প্রচারের অভাবের কথা । ETV ভারতকে কেউ কেউ বলেছেন, "শুনেছি এমন একটা অ্যাপ তৈরি হয়েছে । কিন্তু সেটি মোবাইলে ডাউনলোড করা হয়নি ।" আর বেশিরভাগ যুবতির কথায়, "এমন কিছু হয়েছে বলে জানা নেই ।" টালিগঞ্জের পামেলা সরকার (35) বললেন, "আমাদের সুরক্ষা নিজের কাছে । নারীদের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তার অবকাশ থাকলেও তার জন্য অফিস থেকে বাড়িতে বসে থাকা যায় না ৷ রাত তিনটা পর্যন্ত অফিস থাকলেও তা করতে হবে । কলকাতা পুলিশ এমন কোনও অ্যাপ এনেছে বলে আমার জানা নেই ।" কলেজ পড়ুয়া অন্বেষা বললেন অন্য কথা । বলেন, "সুরক্ষার জন্য ব্যাগে রাখুন একটি সিরিঞ্জ । তার কথায়, "যদি আক্রমণের শিকার হই তাহলে এক সিরিঞ্জ হাওয়া, যদি যে কোনও মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় তবে সেই মুহূর্তে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব । আমি সেটাই করি ।" তিনিও জানেন না এমন কোনও অ্যাপের কথা ।
এই প্রসঙ্গে অনুজ শর্মা বলেন, "আমি চাই শহরের সব নাগরিক এই অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন । মহিলাদের ক্ষেত্রে এই অ্যাপ GPS ট্র্যাক করতে পারবে । বিপদগ্রস্ত মহিলা নির্দিষ্ট জায়গায় ক্লিক করলেই মেসেজ চলে যাবে পুলিশের কাছে । সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তার অবস্থান জেনে নিতে পারবে । দ্রুত পৌঁছে যাবে ঘটনাস্থানে ।" বিষয়টি তুলে ধরে ETV ভারত । সেই সূত্র ধরেই এবার বন্ধু অ্যাপের ব্যাপক প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার ।