কলকাতা, 14 নভেম্বর: ঋতুপর্ণ ঘোষ একবার মানুষের জীবনে দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে লিখেছিলেন । পরিবারের প্রত্যেকের জন্মদিন ছোটবেলায় তাঁর কাছে ছিল এক বিশেষ দিন। তারপর পরিবারের সদস্যরা পাড়ি দিলেন না-ফেরার দেশে । তাঁরা নিজেরাই তারিখ হয়ে গেলেন আচমকা । কিংবদন্তি পরিচালকের আক্ষেপ ছিল তিনি নিজেও একদিন একটা দিন বা তারিখে পরিণত হবেন।
দিন এমনই প্রহেলিকার জন্ম দেয় । যেমন ধরুন 19 নভেম্বর এই দিনটি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় পুরুষ দিবস হিসেবে (World Men's Day 2022) । আবার সেই দিনেই জন্ম গ্রহণ করেছেন ইন্দিরা গান্ধি । স্বাধীন দেশে এই পর্যন্ত তিনিই একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী । আবার ধরুন 14 নভেম্বর দিনটা রসগোল্লা দিবস (World Rasgulla Day 2022) । একইসঙ্গে মধুমেহ দিবসও (World Diabetes Day) বটে । এইটুকু পড়ে মনে হতেই পারে নিয়তির এ কী খেলা ! রাগের চোটে রসগোল্লা খাওয়া ছেড়ে দেবেন না কিন্তু । তার চেয়ে মন ভালো রাখতে ফুটবল খেলুন । বাঙালি ফুটবল খেলেই । বিবেকানন্দও খেলতেন । চিকিৎসকরা বলছেন রসগোল্লা খেলেই মধুমেহ হবে এমনটা ভাবার দরকার নেই । আবার মধুমেহ হলেই রসগোল্লার মায়া ত্যাগ করতে হবে এমনটাও নয় । যেটা দরকার তা হল 'ব্যালেন্স' । ইচ্ছে মতো রসগোল্লা খান আবার শরীরের দিকেও নজর দিন । মনের খিদে মেটাতে রসগোল্লা খেলে অন্য খাবার একটু কম খেতে হবে । বাদ দিতে হবে না অবশ্যই । খোদ বিবেকানন্দও বলে গিয়েছেন, খালি পেটে ধর্মাচরণ হয় না । তাহলে রসগোল্লা ত্যাগ দিয়ে ভালো থাকা সম্ভবই হবে কীভাবে ?
একদিকে বিশ্ব ডায়াবেটিস ডে, অন্যদিকে রসগোল্লা দিবস । দুটোর মধ্যে এমনিতে কোনও মিল নেই । প্রশ্নটা সহজ আর উত্তরও জানা । কারণ ডায়াবেটিস রোগীদেরকে রসগোল্লা খেতে বারণ করা হত এতকাল । কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন এই ধারণা বদলের সময় এসেছে । চিকিৎসক অমিতাভ শূর বলেন, "মধুমেহ একবার হওয়া মানে সারা জীবন থাকবে । তাই আজীবনের মতো মিষ্টি খেতে না-বলা কাউকে শাস্তি দেওয়া । সেটার কোনও মানে নেই । সামগ্রিকভাবে গ্লুকোজ আর ক্যালরির ব্যালান্স ঠিক রাখলেই হল । তাছাড়া অনেকই হয়ত জানে না, মধুমেহর দিক থেকে রসগোল্লা খাওয়া সন্দেশ বা অন্য মিষ্টি খাওয়ার থেকে ভালো । রসগোল্লার রসটুকু বাদ দিয়ে ছানার অংশটুকু খাওয়া সবদিক থেকেই ভালো ।"
আরো পড়ুন: এই অত্যাচার সহ্য করতে পারছেন না অমিতাভ !
অন্যদিকে চিকিৎসক প্রত্যুষ ঘোষ মনে করেন, কত পরিমাণে মিষ্টি খাওয়া হচ্ছে তার উপরই নির্ভর করে মধুমেহ হবে কি না । তাঁর কথায়, "আপনি যদি দিনের কোনও একটা সময়ে মিষ্টি খেয়ে নেন, তাহলে তার পরের খাবারটা একটু বুঝে খেতে হবে । রুটি বা ভাত যাই খান না কেন পরিমাণে কম খেতে হবে । তাছাড়া শারীরিক কসরতও করা দরকার । মিষ্টি খেলেই মধুমেহ হবে এমন কোনও কথা নেই ।"
বিষয়টি নিয়ে মিষ্টি বিক্রেতারা কী ভাবছেন ? তা জানতে আমরা কথা বলেছিলাম বলরাম মল্লিকের কর্ণধার সুদীপ মল্লিকের সঙ্গে । তিনি বলেন, "এখন টাইপ টু মধমেহ সেরে যায় । আর মিষ্টি খেলেই যে মধুমেহ এমন কোনও কথা নেই । কিন্তু আমার মনে হয় এখানে একটি ষড়যন্ত্র কাজ করে । কেউ তো বলে না চকোলেট খেলে মধুমেহ হবে ? কিন্ত আমাদের মনে রাখতে হবে ভরপেট খাওয়ার পর একটু মিষ্টি খাওয়ার রীতি পৃথিবীতেই আছে । এতে খাওয়ারও একটা মাপ থাকে। নইলে অনেক সময় খাওয়ার পরিমাপ ঠিক থাকে না । শরীর খারাপ হয় ।"
ভালো থাকতে সবই করতে হবে । একথা মাথায় রেখে- "ফুটবল খেলুন আর একদম ছেড়ে না-দিয়ে মাঝেমধ্যে রসগোল্লা খান" এই বার্তা নিয়ে বিপি পোদ্দার হাসপাতালের ডাক্তারবাবু থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য কর্মী এবং বিনোদন দুনিয়ার প্রতিনিধিরা একসঙ্গে ফুটবল খেললেন 'বিশ্ব রসগোল্লা দিবস' এবং 'ওয়ার্ল্ড ডায়াবিটিস ডে'-তে । অংশ নিলেন সেলিব্রিটিরাও । অভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত বলেন, "একটা সময় ছিল যখন বেশি বয়সেই মধুমেহ হত । এখন আর তা নয় । কম বয়সিরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে । তাই সচেতন হতেই হবে ।" মানে সবাই একই কথা বলছেন, "কোনও কিছুই বাদ দেওয়ার দরকার নেই । রসগোল্লা খাওয়া, ফুটবল খেলা এবং বেঁচে থাকা সবই চলুক হাত ধরাধরি করে । এদিকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দুর্গাপুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ডায়েট মিষ্টির বিক্রি বেড়েছে। তবে ওই একটাই কথা, দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে !