কলকাতা, 29 নভেম্বর: 1905 সালে নির্মিত তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের অবজারভেটরি ডোম (Heritage observatory dome) আজ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে । তাই পদার্থবিদ্যা (Physics department of Presidency University) বিভাগের উদ্যোগে আবারও সেই অবজারভেটরি এবং তার ভেতরে পড়ে থাকা টেলিস্কোপের (Presidency University Telescope) ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে তার সংস্কার করার জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে ।
1817 সালে নির্মিত এশিয়া মহাদেশে প্রথম পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই কলেজ । তখন অবশ্য নাম ছিল হিন্দু কলেজ । এরপর কেটে গিয়েছে অনেকটা সময় । তবে দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম এই বিশ্ববিদ্যালয় । তাই গোড়া থেকেই শিক্ষার মান বজায় রেখেছে প্রেসিডেন্সি । ঠিক একইভাবে বিজ্ঞানের পড়ুয়া এবং গবেষকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে 1905 সালে সেখানে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয় ৷ ভারতীয় উপমহাদেশে যাঁকে বিজ্ঞান চর্চার জনক বলা হয়, সেই জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে একটি অবজারভেটরি ডোম তৈরি করা হয় ৷ সেখানে বসানো হয় অত্যন্ত শক্তিশালী একটি টেলিস্কোপ ।
পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সুচেতনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, "তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কিংবা বলা ভালো বাংলার সরকার এই অবজারভেটরিটি তৈরি করার উদ্যোগ নেন । এই অবজারভেটরি তৈরি করতে অর্থ অনুদান দিয়েছিলেন তৎকালীন ত্রিপুরার মহারাজ । সেই সময় প্রেসিডেন্সি কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু । তাঁর সঙ্গে ত্রিপুরার মহারাজের সুসম্পর্কের জন্যেই মহারাজ অর্থ সাহায্য করতে সম্মত হয়েছিলেন । তারপর এখানে আইরিশ গ্রাব (Grubb) সংস্থার তৈরি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং আন্তর্জাতিক মানের একটি টেলিস্কোপ বসানো হয় ।"
প্রেসিডেন্সি কলেজ অবজারভেটরির এই টেলিস্কোপটি লম্বায় ছিল প্রায় 6 ইঞ্চি । পাশাপাশি আরও একটি ছোট টেলিস্কোপও বসানো হয় সেখানে । এই অবজারভেটরির হাত ধরেই 1910 সালে ভারতের প্রথম অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া তৈরি হয় কলকাতায় ।
আরও পড়ুন: 2 বছর বন্ধ থাকার পর আবারও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি প্রেসিডেন্সিতে
অধ্যাপক ড. সুচেতনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, "পরবর্তীকালে অর্থের অভাবেই হোক বা উদ্যোগের অভাবে, 1930 সালের পর থেকে ভারতে যে প্রথম আস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া গড়ে উঠেছিল, এখানে তার আর তেমন হদিশ পাওয়া যায় না । তবে টেলিস্কোপটি 1960 সাল পর্যন্ত অঙ্ক বিভাগে বিভিন্ন অবজারভেশন এবং পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করলেও তারপর ব্যবহারের অভাবেই হোক বা যত্নের অভাবে, সেটিরও আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ শুধু পরে রয়েছে তার ভগ্নাবশেষ । তাই পদার্থবিদ্যা এবং স্কুল অফ অ্যাস্ট্রো ফিজিক্সের তরফে উদ্যোগ নিয়ে ঐতিহ্যশালী ওই অবজারভেটরি ডোমটিকে বাইরের থেকে একেবারে আগের মতো রেখে ভেতরে প্রয়োজনীয় মেরামত করে নতুন একটি টেলিস্কোপ বসাবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।"
এই নতুন ডোম এবং টেলিস্কোপ বসলে শুধু প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে না, সাধারণ মানুষও এখানে এসে আকাশ দেখতে পারবেন । আকাশের অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন । এখানে যাঁরা বৈজ্ঞানিক রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতেও পারবেন ।"
তবে প্রেসিডেন্সি কলেজের অবজারভেটরি কিন্তু শহরে প্রথম নয় ৷ কারণ তারও আগে 1800 সালের শেষের দিকে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ফাদার লাফো একটি অবজারভেটরি নির্মাণ করেছিলেন ।