কলকাতা, 18 এপ্রিল: একের পর এক দেওয়ালজোড়া আলমারিতে থরে থরে সাজানো দুষ্প্রাপ্য সব বই, পাণ্ডুলিপি ! রয়েছে বহু পুরনো দলিল, দস্তাবেজ ! মানানসই অ্যান্টিক আসবাব পরিবেশের গাম্ভীর্য আরও বাড়িয়েছে ! প্রাচীন ও ঝাঁ চকচকে টেবিলে সাজানো রয়েছে ব্রিটিশ আমলের নানা সামগ্রী ! এসব দেখে মনে হতেই পারে, এখানে বুঝি থমকে দাঁড়িয়েছে সময় ! কিন্তু, বিষয়টা আদৌ তেমন নয় ৷ কারণ, এই গ্রন্থাগারে যেমন রক্ষিত রয়েছে বাংলা তথা ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, তেমনই যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একে আধুনিক থেকে অত্য়াধুনিক করে তোলা হচ্ছে ৷ আমরা বলছি, কলকাতার রাজভবনের নিজস্ব গ্রন্থাগারের কথা ৷ এতদিন যা ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে ৷ কিন্তু, রাজভবন এখন জনরাজভবন ৷ নির্দিষ্ট নিয়মাবলী ও পদ্ধতি মেনে আমজনতাও এখানে ঢুকতে পারবে ৷ হেরিটেজ ওয়াকের আওতায় ঘুরে দেখা যাবে রাজভবনের বহু প্রাচীন এই গ্রন্থাগার ৷
এই গ্রন্থাগারের সংগ্রহে রয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের প্রতিলিপি ৷ রয়েছে গীতা, কোরান-সহ অন্য়ান্য ধর্মগ্রন্থ ৷ ব্রিটিশরাজের আমলের একাধিক গর্ভনরের ব্যবহৃত বহু সামগ্রী ৷ সুপ্রাচীন সিগারেটের বাক্স, লাইটার, কলম ৷ সংগৃহীত বইয়ের সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় 10 হাজার ৷ ইতিমধ্যেই বইয়ের এই বিপুল সম্ভার ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করার কাজ শুরু হয়েছে ৷ সেই কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা হবে ৷
রাজভবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একতলায় রয়েছে এই গ্রন্থাগার ৷ এটির আয়তন পরিমিত ৷ তবে, এখানে থাকা বইয়ের সম্ভার যখের ধনের থেকে কম কিছু নয় ! সেগুলির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম ৷ বহু বইয়ে তৎকালীন গভর্নরদের স্বাক্ষর রয়েছে ! রয়েছে তাঁদের সিলমোহর ! বেশ কিছু বই এসেছে উপহার হিসাবে !
এখন প্রশ্ন হল, আমজনতা রাজভবনে ঢুকবে কোন উপায়ে ? নিয়ম বলছে, এর জন্য মানতে হবে বেশ কিছু শর্ত ৷ প্রথমেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের কাছে স্পষ্টভাবে সফরের জন্য পছন্দের তারিখ, দর্শনার্থীর সংখ্যা উল্লেখ করে আবেদন জানাতে হবে ৷ গবেষকদের ক্ষেত্রে উল্লেখ করতে হবে গবেষণার বিষয় ও ক্ষেত্র ৷ আবেদনপত্রে আবেদনকারীকে স্পষ্টভাবে নিজের নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগের নম্বর লিখতে হবে ৷ কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে যেতে চাইলে সেই সংক্রান্ত তথ্য়াবলীও পেশ করতে হবে ৷ আবেদনকারী বিদেশি নাগরিক হলে আবেদনপত্রের সঙ্গে তাঁর পাসপোর্টের একটি প্রতিলিপি জমা দিতে হবে ৷ সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রাজভবনে ঢোকার সময়সীমা হল সকাল 10টা থেকে বিকেল 5টা ৷ শনিবার ঢোকা যাবে বিকেল 4টে 30 মিনিট থেকে 5টা 30 মিনিট পর্যন্ত ৷ আর রবিবার রাজভবন বন্ধ থাকবে ৷
আরও পড়ুন: 'আমি বাংলাকে ভালোবাসি', নববর্ষের অনুষ্ঠানে মন কাড়ল রাজ্যপালের ভাষণ
গ্রন্থাগারের এক আধিকারিক বলেন, "দর্শনার্থীদের কাছে আমাদের অনুরোধ, রাজভবনে এলে অবশ্যই সঙ্গে করে সচিত্র পরিচয়পত্র আনবেন ৷ বিদেশি দর্শনার্থীদের সঙ্গে তাঁদের পাসপোর্ট এবং তার একটি প্রতিলিপি থাকা বাঞ্ছনীয় ৷ মোবাইল ফোন এবং ক্যামেরা নিয়ে ভিতরে ঢোকা যাবে না ৷ সেগুলি এবং সঙ্গে থাকা সমস্ত লটবহর সিকিউরিটি চেক পয়েন্টে জমা রাখতে হবে ৷ কোনও কারণে বুকিং বাতিল হলে পরবর্তীতে তা বরাদ্দ করা হবে ৷"