কলকাতা, 8 ফেব্রুয়ারি : ধরে গিয়েছে গলা । চোখ থেকে নিজের অজান্তেই ঝড়ে চলেছে জল । শারীরিক কষ্টে হাসফাঁস করছেন । তবু মনে অদম্য জোর নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অনঢ় অনশনকারী পার্শ্বশিক্ষিকা । চোখে জল নিয়েই নিজেদের দুরাবস্থার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দুষলেন তিন দিন ধরে অভুক্ত থাকা পার্শ্বশিক্ষিকা । সাফ জানিয়ে দিলেন, জ্ঞান থাকা পর্যন্ত ছাড়বেন না এক ইঞ্চিও জমি ।
পূর্ব বর্ধমানের মিষ্টি সামন্ত । বেতন কাঠামো ও স্থায়ীকরণের দাবিতে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের নেতৃত্বে গত বছর 18 ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া অবস্থানে 50 দিন ধরে থাকার পর 51 তম দিনে শুরু হওয়া অনশন কর্মসূচিতে আরও তিন সঙ্গীর সঙ্গে আমরণ অনশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি । গতকাল অনশনের দ্বিতীয় দিন থেকেই শারীরিক অসুস্থতা বোধ করছিলেন মিষ্টি । আজ তৃতীয় দিনে সেই অসুস্থতা আরও বেড়েছে । শারীরিক কষ্টে চোখ থেকে অনবরত জল পড়ে যাচ্ছে তাঁর । আজ অশ্রুজলেই পার্শ্বশিক্ষকদের দুরাবস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে দুষলেন তিনি । মিষ্টি সামন্ত বলেন, "শারীরিক কষ্ট বেড়েছে । খুব কষ্ট হচ্ছে । সকাল থেকেই গা গোলাচ্ছে । কাল থেকেই খুব যন্ত্রণা হচ্ছে সারা শরীরে । তবে, মানসিক যন্ত্রণাটা আরও বেশি। এই নির্মম সরকার, একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, আজকে আমাদের পথের ভিখারী করে ছেড়েছে । সেই মানসিক যন্ত্রণাটাও সহ্য করতে পারছি না । শারীরিক কষ্টটাও বেড়েছে । নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ।"
আরও পড়ুন : অনশনের 23তম দিন, শনি-রবিতে অসুস্থ পাঁচ শিক্ষক
মুখ্যমন্ত্রীর উপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে মিষ্টি সামন্ত বলেন, "বছরে তিন শতাংশ বেতন বৃদ্ধি মানে আমাদের উচচপ্রাথমিকের প্রতিদিন 1 টাকা করে বেতন বেড়েছে । প্রাথমিকের বেতন বেড়েছে প্রতিদিনে 72 থেকে 76 পয়সা । মুখ্যমন্ত্রীকে হাততালি দেওয়ার মতো একটা ঘোষণা করেছেন । আর ওনার বেতন লাখের উপরে । তাই ওনারা নাচ নেচে বেড়াচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে । আর আমরা ফুটপাতে বসে শেষ নিঃশ্বাস ফেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি । আমরা বাংলার জনগণকে সবিনয়ে এইটুকুই আবেদন জানাচ্ছি যে ভেবে দেখুন যে কারা নৃত্য করে আর কারা পথের ধুলোয় শেষ নিঃশ্বাসের জন্য দিন গোনে ।"
তবে, কষ্ট হলেও জ্ঞান থাকা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অনশনকারী ওই পার্শ্বশিক্ষিকা । শারিরীক কষ্ট বেড়েছে । হাসপাতালে যাবেন কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে তাঁর সাফ উত্তর, "যতক্ষণ পারি লড়াইটা চালিয়ে যাই । হাসপাতালে এখনই যাব না । তারপরে যখন সাথীরা বুঝবে, একদম জ্ঞান হারিয়ে ফেলব, তখন নিয়ে যাবে । আমি মানসিকভাবে দৃঢ় আছি যতক্ষণ পারব লড়াইটা লড়ব । জ্ঞান থাকতে হাসপাতালে যাব না ।"
আরও পড়ুন : নবান্ন অভিযানে উত্তেজনা, পার্শ্বশিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি-লাঠিচার্জ
তার সঙ্গে এই লড়াইয়ে সঙ্গী আরও তিন পার্শ্বশিক্ষক। অভুক্ত না থেকেও সঙ্গী পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের সকল সদস্য। অনশনে অংশগ্রহণকারী বাঁকুড়ার পার্শ্বশিক্ষক অরবিন্দ রায় বলেন, "2011 সালে মুখ্যমন্ত্রী যখন মন্ত্রীসভার বৈঠক করেন, তখন তিনি মনে করেছিলেন পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন কাঠামো দরকার, তাঁদের স্থায়ীকরণ করা দরকার। তারপরেও কী অজ্ঞাত কারণে আমরা বঞ্চিত রয়ে গেছি আমরা জানি না। উনি বারবার বলেন প্রতিশ্রুতি মানে চিটিংবাজ । যাতে করে ওনার প্রতিশ্রুতিটাও চিটিংবাজি না হয়, ওনার প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ না থেকে যায়, তারজন্য আমরা বারবার কলকাতার রাজপথে নেমেছি। আজ 53 দিন অবস্থান করছি, 51 দিনে অনশন শুরু করেছি। এর আগে আমরা 28 দিন অনশন করেছি, 32 দিনের অবস্থান করেছি। শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আমরা ব্রাত্য রয়ে গেলাম। তাই আমরা আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে এই সরকারকে জানান দিতে চায় যে আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিতে এই আমরণ অনশনের রাস্তা বেছে নিয়েছি। মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছি।"