কলকাতা, 7 জুলাই: 'দেখ খুলে তোর তিন নয়ন, রাস্তা জুড়ে খড়গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন ৷' বিরোধীরা তো বটেই কবি শঙ্খ ঘোষের এই পংক্তিই কার্যত বার বার রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং তদোপরি কমিশনার রাজীবা সিনহাকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে রাজ্যপাল সকলেই ৷ রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকেই হিংসা, অশান্তির যে সূত্রপাত হয়েছে তা চলেছে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগেও চলেছে ৷ 'খড়গ' হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সেই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সমাজের সব স্তর থেকেই কমিশনকে একাধিক বার অনুরোধ, উপরোধ করা সত্ত্বেও লাভের লাভ যে কিছুই হয়নি, বলেই দাবি বিরোধীদের ৷ 'কা কস্য পরিবেদনা' বুঝেও অবশ্য এরপরও কমিশনকে হিংসা বিহীন ভোট করানোর জন্য একরকম চূড়ান্ত বার্তাও দিয়েছে হাইকোর্ট এবং রাজভবনও ৷ আর সেই রাজীবা সিনহারই কার্যত অগ্নিপরীক্ষা শনিবার ৷ তার আগে অবশ্য শুক্রবার কমিশনের দাবি, তারা ভোটের জন্য সম্পূর্ণ 'প্রস্তুত' ৷
ভোটের জন্য কমিশন নিজেদের 100 শতাংশ ক্লিনচিট দিয়ে আত্মবিশ্বাসী দেখালেও, তা কি আদৌ বাস্তব ? রাজনৈতিকমহলের ব্যাখ্য়া, পঞ্চায়েতের দখলকে কেন্দ্র করে এরকম হিংসা অন্তত হালের তিনটি ভোটে দেখা যায়নি ৷ 2013, 2018 দু'বারই অশান্তি হয়েছে ৷ কিন্তু মনোনয়ন জমার প্রথম দিন থেকে যেভাবে রক্ত ঝড়েছে রাজ্যে, তা নজির বিহীন ৷ গত 24 দিনে মৃত্যু হয়েছে প্রায় 18 জনের ৷ তবে শুধু বিরোধী নয়, রক্ত ঝড়েছে রাজ্যের শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরও ৷ যদিও এই পরিসংখ্যান মানতে রাজি নয় কমিশন ৷
খোদ কমিশনের এক কর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের রিপোর্টের উপরই তাদের ভরসা করতে হয় ৷ এর বাইরে তাদের কিছুই করার নেই ৷ যেখানে মনোনয়ন পর্বেই খোদ কমিশনের কর্তারা এতটা অসহায় অবস্থা দেখিয়েছেন, সেখানে ভোটের দিন আদৌ পরিস্থিতি সামলাতে তারা কতটা পারদর্শিতা দেখাবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ যদিও কমিশন জানাচ্ছে, তাদের তরফে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: গ্রাম বাংলার দায়িত্ব থাকবে কার হাতে, শনিবার সকাল থেকে ব্যালটে বন্দি হবে জনতার রায়
অন্যদিকে, মনোনয়ন এবং তারপরও মৃত্যু মিছিল দেখে রাজ্য পুলিশ এমনকী খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপর ভরসা রাখতে পারেনি খোদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চও ৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী সর্বত্র মোতায়েন করে ভোট করানোর পক্ষে কড়া নির্দেশিকা দিয়েছে হাইকোর্ট ৷ এমনকী পরে যা সুপ্রিম কোর্টেও বলবৎ থেকেছে ৷ বিতর্ক হয়েছে খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহাকে নিয়েও ৷ সমালোচনার উর্ধ্বেও তিনি উঠতে পারেননি ৷ তিনিও যে কোনও পক্ষেরই আস্থা অর্জন করতে পারেননি, তাও একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে ৷ এরপরই স্বাভাবিকভাবেই ওয়াকিবহল মহলের তরফে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, এত কিছু করেও কী শেষ পর্যন্ত রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়া সম্ভব ? সেই প্রশ্নের জবাবই মিলবে আগামিকাল শনিবার ৷ আর সেই সঙ্গে কত শতাংশ মান পেয়ে আদৌ উত্তীর্ণ হল রাজ্য নির্বাচন কমিশন, তাও স্পষ্ট হবে এদিন ৷