কলকাতা, 6 নভেম্বর : বেসরকারি এক হাসপাতালে সস্ত্রীক মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছিলেন বছর খানেক আগে । ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই অঙ্গদাতার হার্ট, লিভার এবং দুই কিডনিই গতকাল প্রতিস্থাপিত হল অন্য রোগীদের শরীরে । ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই রোগীর ৮০ বছর বয়সি মা এবং সাড়ে আট বছরের মেয়ের সমর্থনও মিলেছে অঙ্গদানে ।
যাদবপুর সন্তোষপুরের বাসিন্দা অপ্রতিম ঘোষ (42) । বেসরকারি একটি সংস্থায় চাকরি করতেন । বছর দু'য়েক ধরে উচ্চ রক্তচাপের কারণে তিনি ওষুধ খেতেন । রবিবার সকালে আচমকা তাঁর মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় । দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় গড়িয়ার একটি বেসরকারি একটি হাসপাতালে। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি । সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ চিকিৎসকরা জানান, ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা ছাড়া অন্য আর কোনও উপায় নেই ।
বছর খানেক আগে কলকাতার বেসরকারি একটি হাসপাতালে সস্ত্রীক মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছিলেন অপ্রতিমবাবু ও তাঁর স্ত্রী ইপ্সিতা । স্বামীর ব্রেন ডেথ ঘোষণার পর ইপ্সিতাদেবীই মরণোত্তর অঙ্গদানের বিষয়টি জানান । অনুমতি মেলে মা ও মেয়ের কাছ থেকেও । শুরু হয় পরবর্তী প্রক্রিয়া । অপ্রতিম ঘোষের দাদা অসীমাভ ঘোষ বলেন, "বাড়িতে আমরা সবাই সবার মতামত নিয়ে চলি । আমার ৮০ বছর বয়সি মায়ের কাছে যখন জানতে চাইলাম, মা তখন আমাদের অসম্ভব রকমের উৎসাহ দিলেন । মা বললেন, এ কাজে তাঁর কোনও আপত্তি নেই । ভাইয়ের সাড়ে আট বছরের মেয়েও বলল, বাবা অন্যদের মধ্যে বেঁচে থাকবে, অন্যরা বাঁচবেন সেই ভালো ।" পরিজনদের সম্মতি মেলার পরে শুরু হয়ে যায় গ্রহীতাদের খোঁজ ।
শেষ পর্যন্ত, ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই রোগীর হার্ট, লিভার এবং একটি কিডনি গতকাল সকালে নিয়ে যাওয়া হয় SSKM হাসপাতালে । তাঁর অন্য একটি কিডনি নিয়ে যাওয়া হয় আলিপুরে কমান্ড হাসপাতালে । স্কিন এবং কর্নিয়াও দান করা হয়েছে । তাঁর হার্ট প্রতিস্থাপিত হয়েছে তমলুকের বাসিন্দা গণেশ কুইল্যা (২৩)-র শরীরে । একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে হাওড়ার বাসিন্দা তারক ডোম (৩১)-এর শরীরে এবং অপরটি কসবার বাসিন্দা স্বরূপ পাল (৪৮)-এর শরীরে । SSKM -এ লিভার প্রতিস্থাপিত হয় অপ্রতিমবাবুর লিভার ।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর কিডনি এবং হার্ট গ্রহীতাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে ।
অঙ্গদানের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অসীমাভবাবু বলেন, "ভাই এভাবে চলে গেল । কষ্ট হলেও, অঙ্গদানের থেকে বড় সম্মান আর কিছু হয় না । ও সকলের মধ্যে বেঁচে থাকবে ।"