কলকাতা, 11 এপ্রিল: সর্বভারতীয় দলের তকমা হারাল তৃণমূল কংগ্রেস । তৃণমূল, সিপিআই-সহ তিনটি রাজনৈতিক দল এই তকমা হারিয়েছে । তৃণমূল আগামিদিনে আদালতে মামলার পথে হাঁটবে বলে জানা যাচ্ছে । কিন্তু জাতীয়স্তরে তৃণমূলের এই সর্বভারতীয় তকমা হারানোয় বিরোধীরা কটাক্ষ করতে শুরু করেছে তৃণমূলকে । বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের যেমন কটাক্ষ তৃণমূল কর্পূরের মত উড়ে যাবে, তেমনই সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী তৃণমূলের এই জাতীয় তকমা হারানোর জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেছেন ।
মঙ্গলবার আসানসোলে সুকান্ত মজুমদার বলেন, "মাছি কিছুদিনের জন্য পাখি হয়েছিল ৷ আবার আবার পুনর্মুষিক ভব হল । তৃণমূল আবার সর্বভারতীয় দল হয় নাকি ? তাহলে তো কাঁঠালের আমসত্ত্ব হবে । গরুপাচারের টাকা দিয়ে কিছু বিধায়ক কিনে ভেবেছিল আমরা সর্বভারতীয় দল হয়ে যাব । এত সহজ নাকি ? 6 শতাংশ ভোট পেতে হবে দেশজুড়ে । গোটা দেশের জনতা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে । 45 লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছে । সরকার ডিএ দিতে পারছে না কেন্দ্রীয় হারে । এটা জেনে বুঝে কোন রাজ্যের মানুষ ভোট দেবে বলুন তো ?"
এরপরেই সুকান্তর কটাক্ষ, "পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভুল করে ওদের ভোট দিয়ে ফেলেছে, সামনের দিন যখন সুযোগ পাবে, যেদিন পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ নিরপেক্ষ হয়ে যাবে, সেদিন দেখবেন তৃণমূল কংগ্রেস বলে কোনও বস্তুই নেই । কর্পূরের মতো তৃণমূল দলটা উড়ে গিয়েছে ।"
তবে শুধু সুকান্ত মজুমদারই নয়, তৃণমূলের এই সর্বভারতীয় তকমা হারানোকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষও । তিনি বলেন, "তৃণমূল সর্বভারতীয় দলের তকমা ধরে রাখতে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে অনেক টাকা খরচা করেছিল । এক আধবার ভোট পেয়েছিল । কিন্তু সেটা তারা ধরে রাখতে পারল না । বাংলায় আইন-কানুনের যেভাবে অবনতি হয়েছে, প্রশাসনের ভেঙে পড়া, দুর্নীতি ও হিংসার রাজনীতি গোটা দেশের মানুষ জেনে গিয়েছে । আর কোনও জায়গায় ওদের জন-সমর্থন নেই । এটা হওয়ারই ছিল । শুধু টাকা খরচ করে কেউ রাষ্ট্রীয় দল হতে পারে না । উন্নয়ন ছাড়া আজ কোনও দলের আর অস্তিত্ব থাকবে না ।"
তবে তৃণমূলের এই জাতীয় দলের এই তকমা হারানোয় দলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন, "দলের সুপ্রিমো ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । 98 সালে দল তৈরি করে একটু একটু করে চেষ্টা করেছেন । যেভাবেই হোক সর্বভারতীয় তকমা পেয়েছিল । আর এখন দলটা চলে গিয়েছে অভিষেকের হাতে । অভিষেকের হাতে দিয়ে দলের সর্বভারতীয় তকমাটা গেল, জাতীয় দলের মর্যাদাটা গেল, কিন্তু যেটা লাভ হল দ্বিতীয় সর্ব বৃহত্তম দল যারা ইলেক্টোরাল বন্ডে ।"
অন্যদিকে রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য কটাক্ষ করে বলেন, "শুধু মঞ্চে আঙুল নাচিয়ে বললেই হবে না আমরা সর্বভারতীয় দল । আমরা গোয়াতে প্রবেশ করেছি, মেঘালয়ে প্রবেশ করেছি, ত্রিপুরায় প্রবেশ করেছি । প্রবেশ করলেই সর্বভারতীয় দল হয়ে যায় না ।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, সর্বভারতীয় দল হতে গেলে সংশ্লিষ্ট দলের চিন্তাধারাকে সমস্ত প্রদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে ৷ যদি সেটা করতে কেউ ব্যর্থ হয়, ভোট পেতে ব্যর্থ হয়, তবে তারা সর্বভারতীয় মর্যাদা হারাবে ।
আরও পড়ুন: সর্বভারতীয় পার্টির তকমা হারাল তৃণমূল কংগ্রেস