কলকাতা, 2 নভেম্বর : সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে এনসিসির (NCC) বরাদ্দ না দেওয়া নিয়ে হইচই হয়েছিল । যদিও সেসময় রাজ্যের তরফ থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয় কোনোভাবেই এনসিসির জন্য বরাদ্দ বন্ধ করার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে না সরকার । কিন্তু বুধবার সেই এনসিসিই আবার আলোচনায় । তবে এবার আলোচনার বিষয় তার বরাদ্দ বন্ধ করা নয়, বরং আলোচনা শুরু হয়েছে অন্য একটি বিষয় নিয়ে ।
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয় রাজ্যে বিদ্যালয় শিক্ষাস্তরে এনসিসির কায়দায় জয়হিন্দ বাহিনীর (Jai Hind Vahini) নামে একটি বাহিনী গড়া হবে । আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক । যেহেতু এই মুহূর্তে বিদ্যালয়স্তরে এনসিসি রয়েছে, তাহলে নাম বদল করে নতুন একটা বাহিনী গড়ে তোলার যৌক্তিকতা কি ? উঠছে এই প্রশ্ন ৷
যদিও জয়হিন্দ বাহিনী এই নামটি মূলত সুভাষচন্দ্র বোসের (Netaji Subhas Chandra Bose) জয়হিন্দ বাহিনীর অনুকরণে করা হয়েছে । মূলত তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই নামকরণ । এখনও পর্যন্ত এই বাহিনী গড়ার মূল লক্ষ্য সম্পর্কে সরকারি বক্তব্য হল, জনগণের মধ্যে মানবাধিকার, আইনশৃঙ্খলা, নাগরিক অধিকার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ।
এরপরেও সিপিএমের (CPIM) তরফ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এনসিসি থাকার পরও এই বাহিনীর যৌক্তিকতা কোথায় ? এদিন বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি শুনেছিলাম তৃণমূল কংগ্রেসের জয় হিন্দ বাহিনী নামে একটি শাখা সংগঠন রয়েছে । যেই সংগঠন দেখাশোনা করেন তাঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় । জয় হিন্দ বাহিনী গঠনের মাধ্যমে বাস্তবে কি স্কুলের গণ্ডিতে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটাতে চাইছেন তারা !’’
একইভাবে কংগ্রেস (Congress) নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এনসিসি থাকতে জয় হিন্দ বাহিনীর কি প্রয়োজন আছে ? কেন এনসিসির বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হল ? এনসিসির সঙ্গে জয় হিন্দ বাহিনীর কোনও তুলনা হয় না । বাজপাখির সঙ্গে আরশোলার তুলনা করলে কি চলবে ? জানি না এইভাবে কতদিন চলবে । কি করতে চাইছে তৃণমূল সরকার ? তবে কখনোই এনসিসির বিকল্প জয় হিন্দ বাহিনী নয় ।’’
অপর সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, ‘‘তৃণমূল নানাভাবে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত । এখন যেখানেই হাত দেবে সেখানেই দুর্নীতি হবে । কথায় আছে না অভাগা যেখানে যায় সাগর শুকায়ে যায় । সেটাই হবে । এনসিসির পরিবর্তে এই জয় হিন্দ বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা মনে করি না । ওরা আসামীর কাঠগড়ায় । শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন একটা বিভাগ নেই যেখানে তৃণমূল দুর্নীতি করেনি । যে প্রকল্পই করুক না কেন, তার কোনোটাই মানুষের স্বার্থে হয়নি । বরং তৃণমূলের লুটেরা বাহিনীর লুটে পুটে খেয়েছে । আবারও লুঠতরাজের বাহিনী গঠন করার চেষ্টা হচ্ছে ।’’
এদিকে বিজেপির (BJP) মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে সাড়ে তিন লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে । এই শূন্যপদ রাজ্য সরকার পূরণ করতে পারেনি । আদালত, আন্দোলনকারী নিয়োগ প্রার্থী মিলে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মনে হচ্ছে এটা নন অ্যাডিং সাবজেক্ট । সমস্ত পঠন-পাঠন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে । শিক্ষার অধিকার যেখানে সাংবিধানিক অধিকার, সেখানেই দুর্নীতি করেছে এই সরকার । সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আবার জয় হিন্দ বাহিনীর গল্প শোনানো হচ্ছে ।’’ শমীকের অভিযোগ, ‘‘স্কুল থাকলে তবেই তো জয় হিন্দ বাহিনী । স্কুল তো উঠে যাচ্ছে । সবকিছুতে বেসরকারীকরণের একটা চেষ্টা হচ্ছে । সেখানে এই বাহিনীর কার্যকারিতা কি !’’
যদিও রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছে অহেতুক বিরোধিতা করছে বিরোধীরা । কোথাও এই বাহিনীর সঙ্গে এনসিসির সংঘাত নেই । কোথাও বলা হয়নি এনসিসিকে বন্ধ করে দেওয়া হবে বা বরাদ্দ দেওয়া হবে না । নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জয় হিন্দ বাহিনীকে সম্মান জানাতেই এই উদ্যোগ । বিরোধীরা মনীষীদের সম্মান দিতে জানে না তাই এর বিরোধিতা করছে ।
আরও পড়ুন: সরকারি স্কুলেই হবে জয়হিন্দ বাহিনী, বুধবার বৈঠক ডাকল শিক্ষা দফতর