কলকাতা, 5 অক্টোবর: ধর্মতলা, রাজভবন, বিধানসভা এলাকায় বছরভর 144 ধারা জারি থাকে । যেখানে জমায়েত করা যায় না । কলকাতা পুলিশ কোনোভাবেই সভা মঞ্চ তো দূর, বেশিক্ষণ বিক্ষোভ মিছিল বা অবস্থান করতে দেয় না । কিন্তু 5 অক্টোবর তৃণমূলের 'রাজভবন অভিযানে' সেই ছবি দেখা গেল না । একপ্রকার উলটো ছবি দেখা গেল । রাজভবনের উত্তরদ্বারের সামনের রাস্তা বন্ধ থাকল । মঞ্চ বাঁধা হল । গাড়ি ভর্তি চেয়ার এল । দাঁড়িয়ে দেখল কলকাতা পুলিশ । বরং, বিশৃংখলা এড়াতে যাবতীয় বন্দোবস্ত রাখে পুলিশ । চেয়ার বসার বিষয়টিও ঠিক করে দিতে দেখা যায় পুলিশকে । আর একারণেই আইনভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে ।
এ দিন রাজভবনের উত্তরদ্বারের সামনের এলাকার ফুটপাথের দোকান বন্ধ করে দেওয়ায় দোকানিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয় । কিন্তু, ভয়ে কেউ ক্যামেরার সামনে মুখ খোলেননি । সব মিলিয়ে তৃণমূলের রাজভবনের অভিযান ঘিরে আইনশৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা । এই কারণে রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি করল বিরোধীরা ।
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "এ রাজ্যে আইনের শাসন নেই । ভিক্টোরিয়াতে তৃণমূল ছাড়া কেউ মিটিং করতে পারবে না । কলকাতা বা এসপ্লেনেড-এর আশপাশের আমাদের মিটিং মিছিলের অনুমতি দেওয়া হবে না । রাজভবনে 144 ধারা । আশপাশে কেউ যেতে পারবে না । অথচ, সেখানে একপ্রকার রাজভবনের গেটে, ঢিল ছোড়া দূরত্বে তৃণমূলের মঞ্চ বাঁধা হল । অবস্থান চলল । আসলে তৃণমূলের অবস্থান মানে পুলিশের দায়িত্ব । রাজ্যের পুলিশ তৃণমূলের হয়ে তৃণমূল দল চালাচ্ছে । তাছাড়া অন্য কিছু নয় । বরঞ্চ, আপনি যদি কালীঘাটের শান্তিকুঞ্জে তিনবার চোখ রাখেন কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করবে । রাজ্যের পুলিশ একেবারে দালালি করছে । রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত ।"
প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া সেলের ইনচার্জ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বাংলায় কোনও আইনের শাসন নেই । শাসনের আইন আছে । গত 12 বছর ধরে বাংলার আইনশৃঙ্খলা শিকেয় উঠেছে । কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা রাজভবনে গেটে হাত রাখলেই পুলিশ টেনে হিঁচড়ে আটক করে । আর এখন পুলিশ কী করছে ? তৃণমূল যে নাটক করছে, তাতেই আইন ভেঙে সঙ্গ দিচ্ছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক) নাটক না করে মনরেগার 60-40 রেশিও মেনে 40 শতাংশ টাকা আগে দিয়ে দিক রাজ্যের মানুষকে । তা না করে নাটক করছে । কেন্দ্রও ধোয়া তুলসী পাতা নয় । তৃণমূল গত 12 বছরে হাজার হাজার পুকুর চুরি করেছে । তাঁদের গ্রেফতার করুক । করা হচ্ছে না কেন ? যারা অপরাধ করেনি তাঁদের টাকা দিয়ে দিক । তা না করে পর্দার আড়ালে তৃণমূল বিজেপি আমরা ওরা করছে ।"
বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, "সরকারে থাকা রাজনৈতিক দল এভাবে আইন ভাঙলে সেখানে আর কি বলার থাকে ! হাইকোর্টের উচিত স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করা উচিত এই সরকারের বিরুদ্ধে । কারণ, সরকারি পার্টি এভাবেই আইন ভাঙলে উদাহরণ থেকে যাবে । আগামিদিন যে কেউ আইন ভাঙার চেষ্টা করবে । কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ।"
আরও পড়ুন: 'দেখা করতে হলে উত্তরবঙ্গে আসুন', রাজ্যপালের মন্তব্যকে 'জমিদারি কালচার' বলছে তৃণমূল