কলকাতা, 12 সেপ্টেম্বর: সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বের হলেন তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান ৷ তিনি ইডি দফতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতেই একের পর এক প্রশ্নবাণ আছড়ে পড়ল তাঁর দিকে ৷ তবে এক কথাতেই সব প্রশ্নের জবাব দিলেন সাংসদ-অভিনেত্রী ৷
ফ্ল্যাট দুর্নীতি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ এনেছিলেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা ৷ ইডির কাছে তিনি সরাসরি নুসরতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পর প্রেস ক্লাবে সংক্ষিপ্ত সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিনেত্রী সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন ৷ তিনি বলেছিলেন, তাঁর নির্দোষ হওয়ার প্রমাণস্বরূপ যাবতীয় নথি তাঁর কাছে রয়েছে ৷ এই নিয়ে তদন্ত হলে প্রয়োজনে তিনি সব নথি দেখাতে পারেন বলেও দাবি করেছিলেন বসিরহাটের সাংসদ ৷
সেই ঘটনার তদন্তে আজ তাঁকে সল্টলেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দফতরে ডেকে পাঠানে হয়েছিল বেলা 11টা নাগাদ ৷ তবে সময়ের আগেই অর্থাৎ 10টা বেজে 48 মিনিটে তিনি ঢুকে যান সিজিও কমপ্লেক্সে ৷ নীল বাতিওয়ালা গাড়ি থেকে তিনি যখন নামেন, তখন তাঁর পরনে দেখা গিয়েছে গোলাপি কামিজ ও গেরুয়া রঙের ওড়না ৷ খোলা চুলের নুসরতের চোখে ছিল মোটা ফ্রেমের চশমা ৷ গাড়ি থেকে নেমে তিনি সোজা চলে যান ইডি-র দফতরে ৷
এর ঠিক সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর অর্থাৎ বিকেল সওয়া পাঁচটা নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন নুসরত জাহান ৷ সাংবাদিকরা তাঁকে ঘিরে ধরে একের পর এক প্রশ্ন করলে একটি বাক্যেই জবাব দেন নুসরত ৷ তিনি বলেন, "ইডি যে যে প্রশ্ন করেছিল, আমি তার সব উত্তর দিয়েছি ৷" এরপর আর একটাও কথা খরচ করেননি অভিনেত্রী-সাংসদ ৷ তিনি সোজা গাড়িতে উঠে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে যান ৷
আরও পড়ুন: কোটি কোটি টাকার আর্থিক জালিয়াতি! সল্টলেকে ইডি দফতরে পৌঁছলেন সাংসদ নুসরত জাহান
অভিযোগ, 400-রও বেশি মানুষ অভিযোগ করেছেন যে, তাঁরা ফ্ল্যাট কেনার জন্য 2017 সালে একটি কোম্পানিকে টাকা দিয়েছিলেন । তবে দীর্ঘ ছয় বছর পরেও তাঁরা তাঁদের ফ্ল্যাট পাননি বা তাঁদের দেওয়ার টাকাও ফেরত পাননি । শঙ্কুদেব পণ্ডা অভিযোগ করেছেন যে, জমি কিনে ফ্ল্যাট বানানোর জন্য 429 জনের থেকে 5 লক্ষ 55 হাজার টাকা করে নেওয়া হয়, যা সব মিলিয়ে 23 কোটি 8 লক্ষ 95 হাজার টাকা ৷ অভিযোগ, ফ্ল্যাট কেনার জন্য যখন ওই কোম্পানিকে টাকা দেওয়া হয়েছিল, তখন সেই কোম্পানির একজন ডিরেক্টর ছিলেন নুসরত জাহান । মূলত এ বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি ।
ইডি সূত্রে খবর অভিনেত্রী তথা সাংসদ নুসরত জাহান ওই কোম্পানির ডিরেক্টর হওয়ার সুবাদে মোটা অংকের টাকা সরাসরি তাঁর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল কোম্পানির থেকে ৷ ইডি মনে করছে, এটা একটা ঘুরপথে টাকা নেওয়ার ছক ৷ এছাড়াও আরও একটা অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি নুসরত জাহানের কাছে টাকা পৌঁছে গিয়েছিল, যা দিয়ে তিনি একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন দক্ষিণ কলকাতায় ৷
সূত্রের খবর, ফ্ল্যাট দুর্নীতি মামলার তদন্তে নুসরতকে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করেছে ইডি ৷ সেগুলি হল, কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর কী ভূমিকা ছিল ? কোম্পানির জন্য তিনি কী কী কাজ করেছেন ? কোম্পানিতে থাকার কারণে তিনি কী কী আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন ? কোম্পানি থেকে আর কোন কোন ব্যক্তির কাছে টাকা পৌঁছেছিল, ডিরেক্টর হিসেবে তিনি সে সব কিছু জানেন ?
ইডি সূত্রের খবর, নুসরতকে যে প্রশ্ন তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তার লিখিত উত্তর দিয়েছেন সাংসদ ৷ ইডি-র তরফ থেকে নুসরতের লিখিত বয়ান যাচাই করা হবে ৷