ETV Bharat / state

স্বাস্থ্যভবনে সরকারি নার্সদের মারধরের অভিযোগ, তদন্তের আশ্বাস - স্বাস্থ্যভবনে সরকারি নার্সদের মারধরের অভিযোগ, তদন্তের আশ্বাস

26 অগাস্ট পোস্টিংয়ের বিষয়ে কথা বলতে নার্সরা স্বাস্থ্যভবনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কাছে যান ৷ অভিযোগ, সেখানে তাঁদের মহিলা পুলিশ মারধর করে ৷ এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে 'নার্সেস ইউনিটি' নামে নার্সদের সংগঠন ৷

ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়
author img

By

Published : Sep 13, 2019, 1:23 PM IST

Updated : Sep 13, 2019, 9:10 PM IST

কলকাতা, 13 সেপ্টেম্বর : সরকারি নার্সদের মারধর করা হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে । এই অভিযোগ তুলল 'নার্সেস ইউনিটি'। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে নার্সদের এই সংগঠন ।

প্রমোশনাল পোস্টিংয়ের বিষয়ে 26 অগাস্ট স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে জানতে গিয়ে, মহিলা RAF-র কাছে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ । এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "নার্সদের পুলিশ মারধর করেছে কি না, আমার জানা নেই । নার্সেস ইউনিটির সদস্যরা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে । এখানে কোনও সমস্যা নেই ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "ওইখানে 144 ধারা রয়েছে । ওখানে কী হয়েছে, আমার জানা নেই ।"

এ দিকে বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে বুধবার সকাল থেকে SSKM হাসপাতালের স্কুল অফ নার্সিংয়ের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে 'নার্সেস ইউনিটি'। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল । বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যভবন থেকে নার্সদের এই সংগঠনের কাছে খবর পাঠানো হয়, তাদের দাবি অনুযায়ী বেতন বৈষম্যের বিষয়ে কথা বলা হবে । এরপরে নার্সদের এই সংগঠনের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যভবনে যান রাত আটটা নাগাদ । 'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, " 26 অগাস্টের ঘটনায় স্বাস্থ্যভবনে আজ আমরা অভিযোগ জানিয়েছি । এই ঘটনায় আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি । নিরপেক্ষ তদন্ত হবে বলে স্বাস্থ্যভবন থেকে আজ আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে । এই বিষয়ে অগ্রগতি কী হল, তা জানতে 7 দিন পরে আবার আমরা স্বাস্থ্যভবনে যাব ।"

পোস্ট বেসিক করেছিলেন যে নার্সরা, স্বাস্থ্যভবনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিক 26 অগাস্ট তাঁদের স্বাস্থ্যভবনে যেতে বলেছিলেন পোস্টিংয়ের বিষয়ে কথা বলার জন্য । নার্সরা যখন ওই স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে যান তখন তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ফাইল তিনি স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন । পদ্ধতি মেনে স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে তাঁদের কথা জানানোর জন্য যখন নার্সরা অপেক্ষা করছিলেন, তখন একসময় স্বাস্থ্য অধিকর্তা চলে যান । তারপর RAF সহ পুলিশ আসে । এ কথা জানিয়ে 'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, "লাইট অফ করে দিয়ে লাঠি দিয়ে নার্সদের তখন মারা হয় । ওই নার্সদের নামে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয় । তাঁদের বেধড়ক পেটানো হয় ।"

একই সঙ্গে তিনি বলেন, "গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে 13 জন নার্সকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানেও নার্সদের অশ্লীল কথা বলা হয় পুলিশের তরফে । মহিলা RAF মেরেছিল । সেখানে অন্য যারা পুলিশ ছিল, তাদের মুখের ভাষা এমন ছিল, তা বলা যাবে না । নার্সরা ভয় পেয়ে গেছিল । কেউ কেউ মোবাইলে ছবি তুলেছিল, সে সব ডিলিট করে দেওয়া হয় । রাস্তার দু'জন পাবলিক যখন এই ঘটনার ভিডিয়ো বা ছবি তুলেছিল, তখন তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় । এই সব নার্স এখনও মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে । এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি ।" তিনি বলেন, "এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ে, যাদের প্রশ্রয়ে স্বাস্থ্যভবনে এই কাণ্ড ঘটল, তাদের শাস্তি দাবি করছি আমরা । এই ধরনের ঘটনা গত 30-32 বছরে শুনিনি । আমরা এত আন্দোলন করছি, কোনও দিন এই অবস্থা হয়নি যেভাবে সেদিন মেরেছে ।"

'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আরও বলেন, "ওই নার্সরা তখন অভিযোগ জানাতে পারেনি । ওদের দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে, ওই চত্বরে আগামীদিনে যেন ওদের দেখতে না পাওয়া যায় । ওদের ভয় দেখানো হয়েছে । ওদের ছবি তুলে রাখা হয়েছে । ওরা এতটাই ভীত যে, সব ঘটনা ফেসবুকে দেয় কিন্তু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে এই ঘটনার কথা কোথাও শেয়ার করেনি । 28 অগাস্টের পর থেকে ওরা আমাদের বলতে শুরু করে । তার পরে দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ জানে । জানে, কারণ, ওই দিন কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম আমাদের ফোন করে জানতে চেয়েছিল আমাদের নার্সরা গ্রেপ্তার হয়েছে, আমরা ইলেকট্রনিক্স থানায় রয়েছি কি না । এখন বুঝতে পারছি, তারা সঠিক খবর পেয়েছিল । কিন্তু, আমরা জানতে পারিনি ।"

তিনি বলেন, "নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ে এই ঘটনার তদন্ত করতে হবে । যাদের নেতৃত্বে, প্রশ্রয়ে এই ঘটনা, তাদের শাস্তি পেতে হবে । তাদের ক্ষমা চাইতে হবে । পাবলিক নার্সদের শারীরিক নিগ্রহ করলে তার আমরা শাস্তি দাবি করি ৷ সেখানে প্রশাসন, পুলিশ ডেকে নিয়ে গিয়ে ওদের গালিগালাজ করা হয় । পেটের উপর পা তুলে মারধর করা হয়েছে ।" স্বাস্থ্য অধিকর্তার ঘরের সামনে ওই দিন 25-30 নার্স ছিলেন । এ কথা জানিয়ে ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, "পরে তাদের বলা হয়েছে, সেখানে 144 ধারা জারি রয়েছে । তা হলে 144-র মধ্যে 25-30 জন উপরে (ফোর্থ ফ্লোরে স্বাস্থ্য অধিকর্তার ঘরের সামনে) উঠল কেন? তখন ওদের মানা করে দেওয়া উচিত ছিল, 144 ধারা, যাবেন না । " স্বাস্থ্য ভবনে CCTV ক্যামেরা রয়েছে । 'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বলেন, "এই জন্যই আমরা CCTV ফুটেজ দেখতে চাই । নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ার কথা বলছি । স্বাস্থ্য ভবনের অনেক কর্মীও এই ঘটনার ভিডিয়ো করেছেন । নার্সকে পাবলিক নিগ্রহ করলে, আমরা প্রতিবাদ করি, শাস্তি দাবি করি । এক্ষেত্রে কেন হবে না?"

কী হয়েছিল ওই দিন?

'নার্সেস ইউনিটি'র এক সদস্য শর্মিতা সরকার বলেন, "আমরা পোস্ট বেসিক 2015-17 পাশ আউটের ব্যাচ । 329 জন একসঙ্গে পাশ করে বেরিয়েছি । এর সঙ্গে 2016-এর ব্যাচের একটি লিস্টে 12 জনের নাম বেরিয়েছিল । এই লিস্টের 20 জনকে স্বাস্থ্যভবন থেকে ফোনে কাউন্সেলিংয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল ।" এই খবর অন্যরাও জানতে পারেন বন্ধুদের মাধ্যমে । পরবর্তী সময়ে আরও 20 জনকে ডাকা হয়েছিল । এরপর কলকাতা এবং আশপাশে কর্মরত অনেক সরকারি নার্সরা স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, 2017-র জুলাই-অগাস্টে তাঁরা পাশ আউট হয়েছেন । তাঁদের প্রমোশনাল পোস্টিং কবে হবে । একথা জানিয়ে তিনি বলেন, "5 অগাস্ট আমরা প্রথম গেছিলাম । দীর্ঘ সময় অপেক্ষার শেষে রাত 7 টার পরে আমাদের ব্যাচের প্রতিনিধি হয়ে 2-3 জন স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে আমাদের আর্জি জানিয়েছিলাম । 40 জনকে যেহেতু ডাকা হয়েছে, তাই আমাদের জিজ্ঞাস‍্য ছিল, আমাদের কবে প্রমোশনাল পোস্টিং হবে ।" কারণ, এর আগে পোস্ট বেসিকে এরকম ঘটনা হয়নি । এরপর আরও 3-4 দিন তাঁরা স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁদের বিষয়টি কোন অবস্থায় রয়েছে । তিনি বলেন, "এটা কোনও আন্দোলন নয়, দাবি নয়, সন্ত্রাস নয় । আমরা সেদিন (26 অগাস্ট ) অপ্রস্তুতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম । স্বাস্থ্যভবনের নিয়ম অনুযায়ী সিরিয়াল নম্বর 10-এ আমাদের নাম লেখানো হয়েছিল । আমরা যখন কয়েকজন স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছিলাম, তখন ওখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের বলেন, আমরা যেতে পারব না, 144 ধারা রয়েছে ।"

তিনি বলেন, "আমরা যখন সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলাম তখন আমাদের কিছু জানানো হয়নি । ধস্তাধস্তি শুরু হয় । একজন বয়স্ক দিদির গলায় লাঠি আটকে দিয়েছে, তাঁকে বাঁচাতে গেলে আমাকে টেনে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ঘরের সামনের সোফায় জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয় । আমাদের মারধর করা হয় । মহিলা পুলিশ এবং মহিলা RAF আমাদের মারে । আমার সঙ্গে আরও তিনজন আক্রান্ত হয়েছিল । সাদা কাগজে আমাদের নাম, ঠিকানা লিখতে বলা হয় । আমি লিখতে অস্বীকার করি । বলেছিলাম, স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করার পরে নাম ঠিকানা লিখব ।" তিনি বলেন, "কারও হাতে, কারও পায়ে, অনেকের লেগেছিল । একজন বেশি আহত হয়েছিল ।" ওই দিন বেলা আড়াইটে- তিনটে নাগাদ এই ঘটনা হয় । এরপরে কিছু সময় সেখানে তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়েছিল । তিনি বলেন, "আমাদের ফোন নিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল । বাড়ির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব না বলে জানিয়েছিল পুলিশ ।"


ওই দিনের ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন 'নার্সেস ইউনিটি'র আরও কয়েকজন সদস্য । তাঁদের মধ্যে এক সদস্য বলেন, "14 অগাস্ট আমরা যখন কয়েকজন স্বাস্থ্য ভবনে গেছিলাম, তখন ওখানকার নার্সিংয়ের এক আধিকারিক আমাদের 26 অগাস্ট যেতে বলেছিলেন । আমাদের প্রমোশনের ফাইল উপরে পাঠানো হয়েছে । কোন অবস্থায় রয়েছে এই ফাইল, তা তিনি 26 অগাস্ট জানাবেন বলেছিলেন । বলেছিলেন আমরা যেন বেশি সংখ্যক মেয়েরা যাই । সেইমতো অনেকে গেছিলাম । আমরা যখন দলে দলে ঢুকেছিলাম, তখন আমাদের কোনও বাধা দেওয়া হয়নি । আমাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হয়নি । পরে বলা হল 144 ধারা জারি রয়েছে, আমরা ওখানে থাকতে পারব না‌ । স্বাস্থ্য অধিকর্তা আমাদের সময় দিয়েছিলেন । আমরা বলেছিলাম, কথা বলেই বেরিয়ে যাব । কিন্তু, ওরা শোনেনি । তর্কাতর্কি হয় । এরপরে মহিলা RAF প্রচণ্ড মারে । পুলিশ গালিগালাজ করে । কয়েকজন মেয়েকে ফেলে দিয়ে লাথি মারে । চুল ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় । এত মারে , মেয়েরা চিৎকার চেঁচামেচি করছিল । সিঁড়ির লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল । মেয়েদের মারতে মারতে রাস্তায় নিয়ে আসা হয় । যারা ভিডিয়ো করছিল, তাদের হাত মুচড়ে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় । ওদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । 13 জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । বাকি 4 জনকে খুবই মেরেছে ।"

'নার্সেস ইউনিটি'র অন্য এক সদস্য বলেন, "স্বাস্থ্যভবনের সামনে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুলিশ এসেছিল । আমাদের যেকোনও বাসে তুলে দেওয়া হচ্ছিল । সিনিয়র দিদিদের হাত ধরে হ‍্যাঁচড়াতে, হ‍্যাঁচড়াতে বাসে তুলে দেওয়া হচ্ছিল । বলা হচ্ছিল ওখানে আমরা দাঁড়াতে পারব না ।" তিনি বলেন, "পুলিশ বলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী আলোচনা করবেন, থানায় চলুন । থানায় গিয়ে আলোচনা করবে, এই ভেবে কয়েকজন দিদি একটি বাসে উঠল, থানায় গিয়ে বলছে ওরা অ্যারেস্টেড ।" নার্সদের এই সংগঠনের অন্য আরও এক সদস্য বলেন, "বলা হচ্ছিল, বাসে উঠুন, আলোচনা করে মিটমাট করে নেওয়া হবে । কিন্তু, থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।" এই ঘটনার পরে সংগঠনের নেত্রীদের ফোন করেন ওই সদস্যরা । এক সদস্য বলেন, "থানায় আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম । যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের আমরা নিয়ে এসেছিলাম ।" তিনি বলেন, "থানায় যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে তাদের দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন লেখানো হয়েছে । ওদের ছবি তোলা হয়েছে । ওদের নাম ঠিকানা সব জেনে নেওয়া হয়েছে ।" আর এক সদস্য বলেন, "13 জনকে মেরেছিল, তাদের মধ্যে 4-5 বেশি আহত । হাসপাতালে তাদের ভরতি রাখতে হয়নি । তবে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতে হয়েছে ।"

কলকাতা, 13 সেপ্টেম্বর : সরকারি নার্সদের মারধর করা হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে । এই অভিযোগ তুলল 'নার্সেস ইউনিটি'। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে নার্সদের এই সংগঠন ।

প্রমোশনাল পোস্টিংয়ের বিষয়ে 26 অগাস্ট স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে জানতে গিয়ে, মহিলা RAF-র কাছে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ । এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "নার্সদের পুলিশ মারধর করেছে কি না, আমার জানা নেই । নার্সেস ইউনিটির সদস্যরা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে । এখানে কোনও সমস্যা নেই ।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "ওইখানে 144 ধারা রয়েছে । ওখানে কী হয়েছে, আমার জানা নেই ।"

এ দিকে বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে বুধবার সকাল থেকে SSKM হাসপাতালের স্কুল অফ নার্সিংয়ের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে 'নার্সেস ইউনিটি'। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল । বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যভবন থেকে নার্সদের এই সংগঠনের কাছে খবর পাঠানো হয়, তাদের দাবি অনুযায়ী বেতন বৈষম্যের বিষয়ে কথা বলা হবে । এরপরে নার্সদের এই সংগঠনের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যভবনে যান রাত আটটা নাগাদ । 'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, " 26 অগাস্টের ঘটনায় স্বাস্থ্যভবনে আজ আমরা অভিযোগ জানিয়েছি । এই ঘটনায় আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি । নিরপেক্ষ তদন্ত হবে বলে স্বাস্থ্যভবন থেকে আজ আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে । এই বিষয়ে অগ্রগতি কী হল, তা জানতে 7 দিন পরে আবার আমরা স্বাস্থ্যভবনে যাব ।"

পোস্ট বেসিক করেছিলেন যে নার্সরা, স্বাস্থ্যভবনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিক 26 অগাস্ট তাঁদের স্বাস্থ্যভবনে যেতে বলেছিলেন পোস্টিংয়ের বিষয়ে কথা বলার জন্য । নার্সরা যখন ওই স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে যান তখন তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ফাইল তিনি স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন । পদ্ধতি মেনে স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে তাঁদের কথা জানানোর জন্য যখন নার্সরা অপেক্ষা করছিলেন, তখন একসময় স্বাস্থ্য অধিকর্তা চলে যান । তারপর RAF সহ পুলিশ আসে । এ কথা জানিয়ে 'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, "লাইট অফ করে দিয়ে লাঠি দিয়ে নার্সদের তখন মারা হয় । ওই নার্সদের নামে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয় । তাঁদের বেধড়ক পেটানো হয় ।"

একই সঙ্গে তিনি বলেন, "গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে 13 জন নার্সকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানেও নার্সদের অশ্লীল কথা বলা হয় পুলিশের তরফে । মহিলা RAF মেরেছিল । সেখানে অন্য যারা পুলিশ ছিল, তাদের মুখের ভাষা এমন ছিল, তা বলা যাবে না । নার্সরা ভয় পেয়ে গেছিল । কেউ কেউ মোবাইলে ছবি তুলেছিল, সে সব ডিলিট করে দেওয়া হয় । রাস্তার দু'জন পাবলিক যখন এই ঘটনার ভিডিয়ো বা ছবি তুলেছিল, তখন তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় । এই সব নার্স এখনও মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে । এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি ।" তিনি বলেন, "এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ে, যাদের প্রশ্রয়ে স্বাস্থ্যভবনে এই কাণ্ড ঘটল, তাদের শাস্তি দাবি করছি আমরা । এই ধরনের ঘটনা গত 30-32 বছরে শুনিনি । আমরা এত আন্দোলন করছি, কোনও দিন এই অবস্থা হয়নি যেভাবে সেদিন মেরেছে ।"

'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আরও বলেন, "ওই নার্সরা তখন অভিযোগ জানাতে পারেনি । ওদের দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে, ওই চত্বরে আগামীদিনে যেন ওদের দেখতে না পাওয়া যায় । ওদের ভয় দেখানো হয়েছে । ওদের ছবি তুলে রাখা হয়েছে । ওরা এতটাই ভীত যে, সব ঘটনা ফেসবুকে দেয় কিন্তু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে এই ঘটনার কথা কোথাও শেয়ার করেনি । 28 অগাস্টের পর থেকে ওরা আমাদের বলতে শুরু করে । তার পরে দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ জানে । জানে, কারণ, ওই দিন কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম আমাদের ফোন করে জানতে চেয়েছিল আমাদের নার্সরা গ্রেপ্তার হয়েছে, আমরা ইলেকট্রনিক্স থানায় রয়েছি কি না । এখন বুঝতে পারছি, তারা সঠিক খবর পেয়েছিল । কিন্তু, আমরা জানতে পারিনি ।"

তিনি বলেন, "নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ে এই ঘটনার তদন্ত করতে হবে । যাদের নেতৃত্বে, প্রশ্রয়ে এই ঘটনা, তাদের শাস্তি পেতে হবে । তাদের ক্ষমা চাইতে হবে । পাবলিক নার্সদের শারীরিক নিগ্রহ করলে তার আমরা শাস্তি দাবি করি ৷ সেখানে প্রশাসন, পুলিশ ডেকে নিয়ে গিয়ে ওদের গালিগালাজ করা হয় । পেটের উপর পা তুলে মারধর করা হয়েছে ।" স্বাস্থ্য অধিকর্তার ঘরের সামনে ওই দিন 25-30 নার্স ছিলেন । এ কথা জানিয়ে ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, "পরে তাদের বলা হয়েছে, সেখানে 144 ধারা জারি রয়েছে । তা হলে 144-র মধ্যে 25-30 জন উপরে (ফোর্থ ফ্লোরে স্বাস্থ্য অধিকর্তার ঘরের সামনে) উঠল কেন? তখন ওদের মানা করে দেওয়া উচিত ছিল, 144 ধারা, যাবেন না । " স্বাস্থ্য ভবনে CCTV ক্যামেরা রয়েছে । 'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বলেন, "এই জন্যই আমরা CCTV ফুটেজ দেখতে চাই । নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ার কথা বলছি । স্বাস্থ্য ভবনের অনেক কর্মীও এই ঘটনার ভিডিয়ো করেছেন । নার্সকে পাবলিক নিগ্রহ করলে, আমরা প্রতিবাদ করি, শাস্তি দাবি করি । এক্ষেত্রে কেন হবে না?"

কী হয়েছিল ওই দিন?

'নার্সেস ইউনিটি'র এক সদস্য শর্মিতা সরকার বলেন, "আমরা পোস্ট বেসিক 2015-17 পাশ আউটের ব্যাচ । 329 জন একসঙ্গে পাশ করে বেরিয়েছি । এর সঙ্গে 2016-এর ব্যাচের একটি লিস্টে 12 জনের নাম বেরিয়েছিল । এই লিস্টের 20 জনকে স্বাস্থ্যভবন থেকে ফোনে কাউন্সেলিংয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল ।" এই খবর অন্যরাও জানতে পারেন বন্ধুদের মাধ্যমে । পরবর্তী সময়ে আরও 20 জনকে ডাকা হয়েছিল । এরপর কলকাতা এবং আশপাশে কর্মরত অনেক সরকারি নার্সরা স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, 2017-র জুলাই-অগাস্টে তাঁরা পাশ আউট হয়েছেন । তাঁদের প্রমোশনাল পোস্টিং কবে হবে । একথা জানিয়ে তিনি বলেন, "5 অগাস্ট আমরা প্রথম গেছিলাম । দীর্ঘ সময় অপেক্ষার শেষে রাত 7 টার পরে আমাদের ব্যাচের প্রতিনিধি হয়ে 2-3 জন স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে আমাদের আর্জি জানিয়েছিলাম । 40 জনকে যেহেতু ডাকা হয়েছে, তাই আমাদের জিজ্ঞাস‍্য ছিল, আমাদের কবে প্রমোশনাল পোস্টিং হবে ।" কারণ, এর আগে পোস্ট বেসিকে এরকম ঘটনা হয়নি । এরপর আরও 3-4 দিন তাঁরা স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁদের বিষয়টি কোন অবস্থায় রয়েছে । তিনি বলেন, "এটা কোনও আন্দোলন নয়, দাবি নয়, সন্ত্রাস নয় । আমরা সেদিন (26 অগাস্ট ) অপ্রস্তুতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম । স্বাস্থ্যভবনের নিয়ম অনুযায়ী সিরিয়াল নম্বর 10-এ আমাদের নাম লেখানো হয়েছিল । আমরা যখন কয়েকজন স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছিলাম, তখন ওখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের বলেন, আমরা যেতে পারব না, 144 ধারা রয়েছে ।"

তিনি বলেন, "আমরা যখন সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলাম তখন আমাদের কিছু জানানো হয়নি । ধস্তাধস্তি শুরু হয় । একজন বয়স্ক দিদির গলায় লাঠি আটকে দিয়েছে, তাঁকে বাঁচাতে গেলে আমাকে টেনে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ঘরের সামনের সোফায় জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয় । আমাদের মারধর করা হয় । মহিলা পুলিশ এবং মহিলা RAF আমাদের মারে । আমার সঙ্গে আরও তিনজন আক্রান্ত হয়েছিল । সাদা কাগজে আমাদের নাম, ঠিকানা লিখতে বলা হয় । আমি লিখতে অস্বীকার করি । বলেছিলাম, স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করার পরে নাম ঠিকানা লিখব ।" তিনি বলেন, "কারও হাতে, কারও পায়ে, অনেকের লেগেছিল । একজন বেশি আহত হয়েছিল ।" ওই দিন বেলা আড়াইটে- তিনটে নাগাদ এই ঘটনা হয় । এরপরে কিছু সময় সেখানে তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়েছিল । তিনি বলেন, "আমাদের ফোন নিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল । বাড়ির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব না বলে জানিয়েছিল পুলিশ ।"


ওই দিনের ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন 'নার্সেস ইউনিটি'র আরও কয়েকজন সদস্য । তাঁদের মধ্যে এক সদস্য বলেন, "14 অগাস্ট আমরা যখন কয়েকজন স্বাস্থ্য ভবনে গেছিলাম, তখন ওখানকার নার্সিংয়ের এক আধিকারিক আমাদের 26 অগাস্ট যেতে বলেছিলেন । আমাদের প্রমোশনের ফাইল উপরে পাঠানো হয়েছে । কোন অবস্থায় রয়েছে এই ফাইল, তা তিনি 26 অগাস্ট জানাবেন বলেছিলেন । বলেছিলেন আমরা যেন বেশি সংখ্যক মেয়েরা যাই । সেইমতো অনেকে গেছিলাম । আমরা যখন দলে দলে ঢুকেছিলাম, তখন আমাদের কোনও বাধা দেওয়া হয়নি । আমাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হয়নি । পরে বলা হল 144 ধারা জারি রয়েছে, আমরা ওখানে থাকতে পারব না‌ । স্বাস্থ্য অধিকর্তা আমাদের সময় দিয়েছিলেন । আমরা বলেছিলাম, কথা বলেই বেরিয়ে যাব । কিন্তু, ওরা শোনেনি । তর্কাতর্কি হয় । এরপরে মহিলা RAF প্রচণ্ড মারে । পুলিশ গালিগালাজ করে । কয়েকজন মেয়েকে ফেলে দিয়ে লাথি মারে । চুল ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় । এত মারে , মেয়েরা চিৎকার চেঁচামেচি করছিল । সিঁড়ির লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল । মেয়েদের মারতে মারতে রাস্তায় নিয়ে আসা হয় । যারা ভিডিয়ো করছিল, তাদের হাত মুচড়ে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয় । ওদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । 13 জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । বাকি 4 জনকে খুবই মেরেছে ।"

'নার্সেস ইউনিটি'র অন্য এক সদস্য বলেন, "স্বাস্থ্যভবনের সামনে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুলিশ এসেছিল । আমাদের যেকোনও বাসে তুলে দেওয়া হচ্ছিল । সিনিয়র দিদিদের হাত ধরে হ‍্যাঁচড়াতে, হ‍্যাঁচড়াতে বাসে তুলে দেওয়া হচ্ছিল । বলা হচ্ছিল ওখানে আমরা দাঁড়াতে পারব না ।" তিনি বলেন, "পুলিশ বলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী আলোচনা করবেন, থানায় চলুন । থানায় গিয়ে আলোচনা করবে, এই ভেবে কয়েকজন দিদি একটি বাসে উঠল, থানায় গিয়ে বলছে ওরা অ্যারেস্টেড ।" নার্সদের এই সংগঠনের অন্য আরও এক সদস্য বলেন, "বলা হচ্ছিল, বাসে উঠুন, আলোচনা করে মিটমাট করে নেওয়া হবে । কিন্তু, থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।" এই ঘটনার পরে সংগঠনের নেত্রীদের ফোন করেন ওই সদস্যরা । এক সদস্য বলেন, "থানায় আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম । যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদের আমরা নিয়ে এসেছিলাম ।" তিনি বলেন, "থানায় যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে তাদের দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন লেখানো হয়েছে । ওদের ছবি তোলা হয়েছে । ওদের নাম ঠিকানা সব জেনে নেওয়া হয়েছে ।" আর এক সদস্য বলেন, "13 জনকে মেরেছিল, তাদের মধ্যে 4-5 বেশি আহত । হাসপাতালে তাদের ভরতি রাখতে হয়নি । তবে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতে হয়েছে ।"

Intro:কলকাতা, ১২ সেপ্টেম্বর: সরকারি নার্সদের মারধর করা হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে। এমনই অভিযোগ তুলল 'নার্সেস ইউনিটি'। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি করছে নার্সদের এই সংগঠন।

প্রমোশনাল পোস্টিংয়ের বিষয়ে গত ২৬ অগাস্ট স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে জানতে গিয়ে, মহিলা র‍্যাফের কাছে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "নার্সেস ইউনিটিকে পুলিশ কিছু করেছে কি না, আমার জানা নেই। নার্সেস ইউনিটি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল, তাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। এখানে কোনও সমস্যা নেই।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "কিন্তু ওইখানে ১৪৪ ধারা রয়েছে। ওখানে কী হয়েছে, আমার জানা নেই।"

এ দিকে বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার সকাল থেকে SSKM হাসপাতালের স্কুল অফ নার্সিংয়ের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে 'নার্সেস ইউনিটি'। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যভবন থেকে নার্সদের এই সংগঠনের কাছে খবর পাঠানো হয় যে, তাদের দাবি অনুযায়ী তাদের সঙ্গে বেতন বৈষম্যের বিষয়ে কথা বলা হবে। এর পরে নার্সদের এই সংগঠনের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যভবনে যান রাত আটটা নাগাদ। 'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, "গত ২৬ অগাস্টের ঘটনায় স্বাস্থ্যভবনে আজ আমরা অভিযোগ জানিয়েছি। এই ঘটনায় আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি। নিরপেক্ষ তদন্ত হবে বলে স্বাস্থ্যভবন থেকে আজ আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে অগ্রগতি কী হল, তা জানতে ৭ দিন পরে আবার আমরা স্বাস্থ্যভবনে যাব।"


Body:পোস্ট বেসিক করেছিলেন যে নার্সরা, স্বাস্থ্যভবনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিক গত ২৬ অগাস্ট তাঁদেরকে স্বাস্থ্যভবনে যেতে বলেছিলেন পোস্টিংয়ের বিষয়ে কথা বলার জন্য। নার্সরা যখন ওই স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে যান তখন তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ফাইল তিনি স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পদ্ধতি মেনে স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে তাঁদের কথা জানানোর জন্য যখন নার্সরা অপেক্ষা করছিলেন, তখন একসময় স্বাস্থ্য অধিকর্তা চলে যান। তার পরে র‍্যাফ সহ পুলিশ আসে। এ কথা জানিয়ে 'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, "লাইট অফ করে দিয়ে লাঠি দিয়ে নার্সদের তখন মারা হয়। ওই নার্সদের নামে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয়। তাঁদেরকে বেধড়ক পেটানো হয়।"

একই সঙ্গে তিনি বলেন, "গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে ১৩ জন নার্সকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও নার্সদেরকে অশ্লীল কথা বলা হয় পুলিশের তরফে। মহিলা র‍্যাফ মেরেছিল। সেখানে অন্য যারা পুলিশ ছিল, তাদের মুখের ভাষা এমন ছিল, তা বলা যাবে না। নার্সরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কেউ কেউ মোবাইলে ছবি তুলেছিল, সে সব ডিলিট করে দেওয়া হয়। রাস্তার দু'জন পাবলিক যখন এই ঘটনার ভিডিও বা ছবি তুলেছিল, তখন তাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। এই সব নার্স এখনও মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।" তিনি বলেন, "এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ে, যাঁদের প্রশ্রয়ে স্বাস্থ্য ভবনে এই কাণ্ড ঘটল, তাঁদের শাস্তি দাবি করছি আমরা। এই ধরনের ঘটনা গত ৩০-৩২ বছরে শুনিনি। আমরা এত আন্দোলন করছি, কোনও দিন এই অবস্থা হয়নি যেভাবে সেদিন মেরেছে।"

'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বলেন, "ওই নার্সরা তখন অভিযোগ জানাতে পারেনি। ওদেরকে দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে, ওই চত্বরে আগামী দিনে যেন ওদেরকে দেখতে না পাওয়া যায়। ওদেরকে ভয় দেখানো হয়েছে। ওদের ছবি তুলে রাখা হয়েছে। ওরা এতটাই ভীত যে, সব ঘটনা ফেসবুকে দেয় কিন্তু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে এই ঘটনার কথা কোথাও শেয়ার করেনি। গত ২৮ অগাস্টের পর থেকে ওরা আমাদের বলতে শুরু করে। এবং, তার পরে দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ জানে। জানে, কারণ, তার পরে আমরা মনে করতে পারছি, ওই দিন কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম আমাদের ফোন করে জানতে চেয়েছিল আমাদের নার্সরা গ্রেপ্তার হয়েছে, আমরা ইলেকট্রনিক্স থানায় রয়েছি কি না। এখন বুঝতে পারছি, তারা সঠিক খবর পেয়েছিল। কিন্তু, আমরা জানতে পারিনি।"

তিনি বলেন, "নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ে এই ঘটনার তদন্ত করতে হবে। যাদের নেতৃত্বে, প্রশ্রয়ে এই ঘটনা, তাদের শাস্তি পেতে হবে। তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে। পাবলিক যেখানে নার্সদের শারীরিক নিগ্রহ করলে তার আমরা শাস্তি দাবি করি, সেখানে প্রশাসন, পুলিশ ডেকে নিয়ে গিয়ে, ওরা বারবার বলেছে ওরা কোনও আন্দোলন করতে যায়নি, ওদেরকে ডাকা হয়েছে, এ কথা শোনা হয় না। ওদেরকে গালিগালাজ করা হয়। শুয়ে পড়ার পরেও পেটের উপর পা তুলে মারধর করা হয়েছে।" স্বাস্থ্য অধিকর্তার ঘরের সামনে ওই দিন ২৫-৩০ নার্স ছিলেন। এ কথা জানিয়ে ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, "পরে তাদেরকে বলা হয়েছে, সেখানে ১৪৪ ধারা, এভাবে করা যায় না। তা হলে ১৪৪-র মধ্যে ২৫-৩০ জন উপরে (ফোর্থ ফ্লোরে স্বাস্থ্য অধিকর্তার ঘরের সামনে) উঠল কেন? তখন ওদের মানা করে দেওয়া উচিত ছিল, ১৪৪ ধারা, যাবেন না।" স্বাস্থ্য ভবনে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে...। 'নার্সেস ইউনিটি'র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বলেন, "এই জন্যই আমরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে চাই। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ার কথা বলছি। স্বাস্থ্য ভবনের অনেক কর্মীও এই ঘটনার ভিডিও করেছেন। নার্সকে পাবলিক নিগ্রহ করলে, আমরা প্রতিবাদ করি, শাস্তি দাবি করি। এক্ষেত্রে কেন হবে না?"

কী হয়েছিল ওই দিন? 'নার্সেস ইউনিটি'র এক সদস্য শর্মিতা সরকার বলেন, "আমরা পোস্ট বেসিক ২০১৫-'১৭ পাস আউটের ব্যাচ। ৩২৯ জন একসঙ্গে পাস করে বেরিয়েছি। এর সঙ্গে '১৬-এর ব্যাচের একটি লিস্টে ১২ জনের নাম বেরিয়েছিল। এই লিস্টের ২০ জনকে স্বাস্থ্য ভবন থেকে ফোনে কাউন্সেলিংয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল।" এই খবর অন্যান্যরাও জানতে পারেন বন্ধুদের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে আরও ২০ জনকে ডাকা হয়েছিল। এর পরে কলকাতা এবং আশপাশে কর্মরত অনেক সরকারি নার্সরা স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, ২০১৭-র জুলাই-অগাস্টে তাঁরা পাস আউট হয়েছেন। তাঁদের প্রমোশনাল পোস্টিং কবে হবে। একথা জানিয়ে তিনি বলেন, "৫ অগাস্ট আমরা প্রথম গিয়েছিলাম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার শেষে রাত ৭টার পরে আমাদের ব্যাচের প্রতিনিধি হয়ে ২-৩ জন স্বাস্থ্য অধিকর্তা কাছে আমাদের আর্জি জানিয়েছিলাম। ৪০ জনকে যেহেতু ডাকা হয়েছে, তাই আমাদের জিজ্ঞাস‍্য ছিল, আমাদের কবে প্রমোশনাল পোস্টিং হবে।" কারণ, এর আগে পোস্ট বেসিকে এরকম ঘটনা হয়নি। এর পরে আরও ৩-৪ দিন তাঁরা স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তাঁদের বিষয়টি কোন অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, "এটা কোনও আন্দোলন নয়, দাবি নয়, সন্ত্রাস নয়। আমরা সেদিন (২৬ অগাস্ট ) অপ্রস্তুতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলাম। স্বাস্থ্যভবনের নিয়ম অনুযায়ী সিরিয়াল নাম্বার ১০-এ আমাদের নাম লেখানো হয়েছিল। আমরা যখন কয়েকজন স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছিলাম, তখন ওখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের বলেন, আমরা যেতে পারব না, ১৪৪ ধারা রয়েছে।"

তিনি বলেন, "আমরা যখন সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলাম তখন আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একজন বয়স্ক দিদির গলায় লাঠি আটকে দিয়েছে, তাঁকে বাঁচাতে গেলে আমাকে টেনে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা ঘরের সামনের সোফায় জোর করে বসিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের মারধর করা হয়। মহিলা পুলিশ এবং মহিলা র‍্যাফ আমাদের মারে। আমার সঙ্গে আরো তিনজন ভিক্টিমাইজড হয়েছিল। সাদা কাগজে আমাদের নাম, ঠিকানা লিখতে বলা হয়। আমি লিখতে অস্বীকার করি। বলেছিলাম, স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করার পরে নাম ঠিকানা লিখব।" তিনি বলেন, "কারও হাতে, কারও পায়ে, পার্সিয়ালি অনেকের লেগেছিল। একজন বেশি ইনজিওরড হয়েছিল।" ওই দিন বেলা আড়াইটে- তিনটে নাগাদ এই ঘটনা হয়। এর পরে কিছু সময় সেখানে তাঁদের বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, "আমাদের ফোন নিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। বাড়ির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব না বলে জানিয়েছিল পুলিশ।"



Conclusion:ওই দিনের ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন 'নার্সেস ইউনিটি'র আরও কয়েকজন সদস্য। তাদের মধ্যে এক সদস্য বলেন, "গত ১৪ অগাস্ট আমরা যখন কয়েকজন স্বাস্থ্য ভবনে গিয়েছিলাম, তখন ওখানকার নার্সিংয়ের এক আধিকারিক আমাদেরকে গত ২৬ অগাস্ট যেতে বলেছিলেন। আমাদের প্রমোশনের ফাইল উপরে পাঠানো হয়েছে। কোন অবস্থায় রয়েছে এই ফাইল, তা তিনি ২৬ অগাস্ট জানাবেন বলেছিলেন। বলেছিলেন আমরা যেন বেশি সংখ্যক মেয়েরা যায়। আমরা ম্যাক্সিমাম গিয়েছিলাম। আমরা যখন দলে দলে ঢুকেছিলাম, তখন আমাদের কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। আমাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হয়নি। পরে বলা হল ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে, আমরা ওখানে থাকতে পারব না‌। স্বাস্থ্য অধিকর্তা আমাদের অ্যাপোয়েনমেন্ট দিয়েছিলেন। আমরা বলেছিলাম, কথা বলেই বেরিয়ে যাব। কিন্তু, ওরা শোনেনি। তর্কাতর্কি হয়। এর পরে মহিলা র‍্যাফ প্রচণ্ড মারে। পুলিশ গালিগালাজ করে। কয়েকজন মেয়েকে ফেলে দিয়ে লাথি মারে। চুল ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। এত মারে , মেয়েরা চিৎকার চেঁচামেচি করছিল। সিঁড়ির লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল। মেয়েদের মারতে মারতে রাস্তায় নিয়ে আসা হয়। যারা ভিডিও করছিল, তাদের হাত মুচড়ে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। ওদেরকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ১৩ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাকি ৪ জনকে খুবই মেরেছে।"

'নার্সেস ইউনিটি'র অন্য এক সদস্য বলেন, "স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুলিশ এসেছিল। আমাদেরকে যে কোনও বাসে তুলে দেওয়া হচ্ছিল। সিনিয়র দিদিদের হাত ধরে হ‍্যাঁচড়াতে, হ‍্যাঁচড়াতে বাসে তুলে দেওয়া হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল ওখানে আমরা দাঁড়াতে পারব না।" তিনি বলেন, "পুলিশ বলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী আলোচনা করবেন, থানায় চলুন। থানায় গিয়ে আলোচনা করবে। এই ভেবে কয়েকজন দিদি একটি বাসে উঠল, থানায় গিয়ে বলছে ওরা অ্যারেস্টেড।" নার্সদের এই সংগঠনের অন্য আরও এক সদস্য বলেন, "বলা হচ্ছিল, বাসে উঠুন, আলোচনা করে মিটমাট করে নেওয়া হবে। কিন্তু, থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।" এই ঘটনার পরে সংগঠনের নেত্রী স্থানীয়দের ফোন করেন ওই সদস্যরা। এক সদস্য বলেন, "থানায় আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম। যাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাদেরকে আমরা নিয়ে এসেছিলাম।" তিনি বলেন, "থানায় যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে তাদেরকে দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন লেখানো হয়েছে। ওদের ছবি তোলা হয়েছে। ওদের নাম ঠিকানা সব জেনে নেওয়া হয়েছে।" আর, এক সদস্য বলেন, "১৩ জনকে মেরেছিল, তাদের মধ্যে ৪-৫ বেশি ইনজিওরড। হাসপাতালে তাদের ভরতি রাখতে হয়নি। তবে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতে হয়েছে।"

_______

বাইট:
wb_kol_01a_nurses_unity_complain_bite_7203421
নার্সেস ইউনিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং এই সংগঠনের অন্য সদস্যদের বক্তব্য

wb_kol_01b_nurses_unity_complain_bite_7203421
নার্সেস ইউনিটির এক সদস্য শর্মিতা সরকারের বক্তব্য

Last Updated : Sep 13, 2019, 9:10 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.