ETV Bharat / state

বই পড়ুন, সিনেমাও দেখুন ; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি আনছে ফিল্ম কর্নার - Film Corner in Central Library

শুধু বইতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না 160 বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগার । এখন সিনেমাও দেখা যাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে ।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি
author img

By

Published : Sep 10, 2019, 5:57 AM IST

Updated : Sep 10, 2019, 3:56 PM IST

কলকাতা, 10 সেপ্টেম্বর : 160 বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগার । আপনার জানার ইচ্ছে পূরণ করতে পারে এমন সব বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায় এখানে । কিন্তু এখন থেকে এই গ্রন্থাগারে শুধু আর বই পড়া নয় সিনেমাও দেখা যাবে । সাধারণের জন্য এই ব্যবস্থা করা হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে। নাম রাখা হয়েছে 'ফিল্ম কর্নার' । নতুন, পুরোনো, বিদেশি, ভারতীয় ও আঞ্চলিক ভাষার বইয়ের সংগ্রহের সঙ্গে এবার থেকে থাকবে নির্বাচিত কিছু সিনেমার ডিভিডি । যা দেখানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি আলাদা ঘর । স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের সংগ্রহের সঙ্গে এই ফিল্ম কর্নার পাঠকদের আরও বেশি আকর্ষিত করবে বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

University of Calcutta
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সিনেমা সংক্রান্ত নতুন বইয়ের সংগ্রহ

হঠাৎ কেন এই ফিল্ম কর্নার ? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান সৌমিত্র সরকার বলেন, "সারা পৃথিবী থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজ়িটার ও স্কলাররা আসেন । শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা নয় সারা দেশের পড়ুয়া আসেন আমাদের লাইব্রেরিতে । সাতদিনের মধ্যে পাঁচদিন তাঁদের জন্য লাইব্রেরি খোলা থাকে । পরে সরকারের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হল শুধু পড়ুয়া নয় সাধারণের জন্য খুলে দিতে হবে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির দরজা । তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলি । বিশ্ববিদ্যালয় সম্মতি দেয় । আমাদের লাইব্রেরি ভারতবর্ষে সর্ববৃহৎ । 11 তলার সেন্ট্রাল লাইব্রেরি । 8টা ক্যাম্পাসে লাইব্রেরি আছে । আবার বিভিন্ন বিভাগের আলাদা লাইব্রেরি আছে । কিছু বিভাগের লাইব্রেরিতে এমন কিছু বইয়ের সংগ্রহ আছে যা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে নেই । যেমন, আইন বিভাগের লাইব্রেরিতে ৮০-৯০ হাজারের মতো কালেকশন আছে । সেগুলো সবাই আসে ও দেখে । তখনই আমরা ডিজিটাল ও ট্রাডিশনালের মিলন ঘটাতে ফিল্ম কর্নার ব্যবস্থা করার কথা চিন্তাভাবনা করি । সেইমতো সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাই ।"

University of Calcutta
সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে সিনেমার বই

ফিল্ম কর্নারে ঠিক কত সংখ্যক বই সংগ্রহে রাখা হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে সৌমিত্রবাবু বলেন, "এই মুহূর্তে সবমিলিয়ে 60 হাজার বই কেনা হয়েছে । তার মধ্যে 2 হাজারের বেশি ফিল্মের বই । "এছাড়াও আমির খান, শাহরুখ খান, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেনের মতো ব্যক্তিত্বদের উপর লেখা বই কেনা হয়েছে । আর এই বইয়ের সংগ্রহের সঙ্গে থাকছে সিনেমার DVD-র সংগ্রহ । তিনি আরও বলেন, "১ হাজারের মতো সিনেমা সংগ্রহ রাখা হবে । তাতে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু সহ বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় তৈরি ক্লাসিক ও পুরস্কার প্রাপ্ত সিনেমা থাকবে । সিনেমাগুলির নির্বাচন প্রাথমিকভাবে সবাই মিলেই করছি । পরে রিডারদের মতামত নেব । সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও বিভিন্ন জায়গা থেকে সিনেমার ক্যাটালগ আনাচ্ছি । আমাদের নিজস্বও কিছু সংগ্রহ রয়েছে । পরবর্তীকালে এই সংগ্রহ আরও বাড়ানো হবে । সকলে বিনামূল্যে এই পরিষেবা নিতে পারবে ।"

University of Calcutta
লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ভাষার সিনেমার বই

লাইব্রেরিতে সিনেমা দেখার প্রক্রিয়া নিয়ে সৌমিত্রবাবু বলেন, "কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি সকাল 10টা থেকে রাত 8টা পর্যন্ত খোলা থাকে । এই সময়ের মধ্যে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে । যিনি সিনেমা দেখতে ইচ্ছুক তিনি এসে লাইব্রেরিতে আমাদের কর্মীকে জানাবেন । সঙ্গে সঙ্গে সিনেমাটি চালিয়ে দেওয়া হবে ।" কিন্তু একইসময়ে যদি দু'জন এসে সিনেমা দেখতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা কী হবে ? এবিষয়ে সৌমিত্র সরকার বলেন, "তিনি রিক্যুইজিশন দিয়ে যেতেই পারেন । ডিমান্ড নেওয়া হবে । বুকিং করা হবে ।" বর্তমানে সিনেমা দেখার জন্য তৈরি ঘরটিতে একসঙ্গে 12 জন মিলে একটি সিনেমা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে । ছোটো গ্যালারির আদলে এই ঘরটি তৈরির ভাবনাচিন্তা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ।

শুধু সিনেমা নয় । আরও বিভিন্ন বিষয়ের কর্নার করা হচ্ছে এই সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে । বইগুলিকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হবে । এর মধ্যে অনেক বই আগে থেকে ছিল । আর অনেক বই নতুন কেনা হচ্ছে । আগে থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিতে বিভিন্ন বিষয়ের কর্নার রয়েছে । আলিপুর ক্যাম্পাসে রয়েছে থাই কর্নার, অন্য একটি লাইব্রেরিতে আছে চাইনিজ় কর্নার, সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে রয়েছে ফরেন পলিসি স্টাডিজ় ও আইনের সংগ্রহ । আর এখন সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে তৈরি করা হচ্ছে স্পোর্টস কর্নার, উইমেন্স কর্নার, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কর্নার, কেরিয়ার গাইডেন্স, কম্পিটিটিভ এগজ়ামের মতো বিভিন্ন বিষয়ের আলাদা কর্নার । নতুন বইগুলি শুধু সেন্ট্রাল লাইব্রেরির জন্য নয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিগুলির জন্যও এক কপি করে কেনা হয়েছে ।

University of Calcutta
লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে সিনেমা সংক্রান্ত নতুন নতুন DVD

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রন্থাগার বিভাগ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে 5 কোটি টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছিল । এই অনুদানের পিছনে প্রধান শর্ত ছিল ১২ লাখ বই সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগারটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে । সেই শর্তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হওয়ায় ইতিমধ্যেই 2 কোটি টাকা দিয়েছে গ্রন্থাগার বিভাগ । গ্রন্থাগার সকলের জন্য উন্মুক্ত করার পর বাকি 3 কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাবে । উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় আগে জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই সেন্ট্রাল লাইব্রেরি সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে । কিন্তু এখনও কিছু কাজ বাকি আছে । এই কাজ সম্পূর্ণ হতে আরও এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে । সেটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলেই সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির দরজা।

কলকাতা, 10 সেপ্টেম্বর : 160 বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগার । আপনার জানার ইচ্ছে পূরণ করতে পারে এমন সব বইয়ের সন্ধান পাওয়া যায় এখানে । কিন্তু এখন থেকে এই গ্রন্থাগারে শুধু আর বই পড়া নয় সিনেমাও দেখা যাবে । সাধারণের জন্য এই ব্যবস্থা করা হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে। নাম রাখা হয়েছে 'ফিল্ম কর্নার' । নতুন, পুরোনো, বিদেশি, ভারতীয় ও আঞ্চলিক ভাষার বইয়ের সংগ্রহের সঙ্গে এবার থেকে থাকবে নির্বাচিত কিছু সিনেমার ডিভিডি । যা দেখানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি আলাদা ঘর । স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের সংগ্রহের সঙ্গে এই ফিল্ম কর্নার পাঠকদের আরও বেশি আকর্ষিত করবে বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

University of Calcutta
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সিনেমা সংক্রান্ত নতুন বইয়ের সংগ্রহ

হঠাৎ কেন এই ফিল্ম কর্নার ? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান সৌমিত্র সরকার বলেন, "সারা পৃথিবী থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজ়িটার ও স্কলাররা আসেন । শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা নয় সারা দেশের পড়ুয়া আসেন আমাদের লাইব্রেরিতে । সাতদিনের মধ্যে পাঁচদিন তাঁদের জন্য লাইব্রেরি খোলা থাকে । পরে সরকারের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হল শুধু পড়ুয়া নয় সাধারণের জন্য খুলে দিতে হবে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির দরজা । তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলি । বিশ্ববিদ্যালয় সম্মতি দেয় । আমাদের লাইব্রেরি ভারতবর্ষে সর্ববৃহৎ । 11 তলার সেন্ট্রাল লাইব্রেরি । 8টা ক্যাম্পাসে লাইব্রেরি আছে । আবার বিভিন্ন বিভাগের আলাদা লাইব্রেরি আছে । কিছু বিভাগের লাইব্রেরিতে এমন কিছু বইয়ের সংগ্রহ আছে যা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে নেই । যেমন, আইন বিভাগের লাইব্রেরিতে ৮০-৯০ হাজারের মতো কালেকশন আছে । সেগুলো সবাই আসে ও দেখে । তখনই আমরা ডিজিটাল ও ট্রাডিশনালের মিলন ঘটাতে ফিল্ম কর্নার ব্যবস্থা করার কথা চিন্তাভাবনা করি । সেইমতো সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাই ।"

University of Calcutta
সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে সিনেমার বই

ফিল্ম কর্নারে ঠিক কত সংখ্যক বই সংগ্রহে রাখা হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে সৌমিত্রবাবু বলেন, "এই মুহূর্তে সবমিলিয়ে 60 হাজার বই কেনা হয়েছে । তার মধ্যে 2 হাজারের বেশি ফিল্মের বই । "এছাড়াও আমির খান, শাহরুখ খান, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেনের মতো ব্যক্তিত্বদের উপর লেখা বই কেনা হয়েছে । আর এই বইয়ের সংগ্রহের সঙ্গে থাকছে সিনেমার DVD-র সংগ্রহ । তিনি আরও বলেন, "১ হাজারের মতো সিনেমা সংগ্রহ রাখা হবে । তাতে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু সহ বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় তৈরি ক্লাসিক ও পুরস্কার প্রাপ্ত সিনেমা থাকবে । সিনেমাগুলির নির্বাচন প্রাথমিকভাবে সবাই মিলেই করছি । পরে রিডারদের মতামত নেব । সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও বিভিন্ন জায়গা থেকে সিনেমার ক্যাটালগ আনাচ্ছি । আমাদের নিজস্বও কিছু সংগ্রহ রয়েছে । পরবর্তীকালে এই সংগ্রহ আরও বাড়ানো হবে । সকলে বিনামূল্যে এই পরিষেবা নিতে পারবে ।"

University of Calcutta
লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ভাষার সিনেমার বই

লাইব্রেরিতে সিনেমা দেখার প্রক্রিয়া নিয়ে সৌমিত্রবাবু বলেন, "কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি সকাল 10টা থেকে রাত 8টা পর্যন্ত খোলা থাকে । এই সময়ের মধ্যে সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে । যিনি সিনেমা দেখতে ইচ্ছুক তিনি এসে লাইব্রেরিতে আমাদের কর্মীকে জানাবেন । সঙ্গে সঙ্গে সিনেমাটি চালিয়ে দেওয়া হবে ।" কিন্তু একইসময়ে যদি দু'জন এসে সিনেমা দেখতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা কী হবে ? এবিষয়ে সৌমিত্র সরকার বলেন, "তিনি রিক্যুইজিশন দিয়ে যেতেই পারেন । ডিমান্ড নেওয়া হবে । বুকিং করা হবে ।" বর্তমানে সিনেমা দেখার জন্য তৈরি ঘরটিতে একসঙ্গে 12 জন মিলে একটি সিনেমা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে । ছোটো গ্যালারির আদলে এই ঘরটি তৈরির ভাবনাচিন্তা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ।

শুধু সিনেমা নয় । আরও বিভিন্ন বিষয়ের কর্নার করা হচ্ছে এই সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে । বইগুলিকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হবে । এর মধ্যে অনেক বই আগে থেকে ছিল । আর অনেক বই নতুন কেনা হচ্ছে । আগে থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিতে বিভিন্ন বিষয়ের কর্নার রয়েছে । আলিপুর ক্যাম্পাসে রয়েছে থাই কর্নার, অন্য একটি লাইব্রেরিতে আছে চাইনিজ় কর্নার, সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে রয়েছে ফরেন পলিসি স্টাডিজ় ও আইনের সংগ্রহ । আর এখন সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে তৈরি করা হচ্ছে স্পোর্টস কর্নার, উইমেন্স কর্নার, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কর্নার, কেরিয়ার গাইডেন্স, কম্পিটিটিভ এগজ়ামের মতো বিভিন্ন বিষয়ের আলাদা কর্নার । নতুন বইগুলি শুধু সেন্ট্রাল লাইব্রেরির জন্য নয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিগুলির জন্যও এক কপি করে কেনা হয়েছে ।

University of Calcutta
লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে সিনেমা সংক্রান্ত নতুন নতুন DVD

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রন্থাগার বিভাগ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে 5 কোটি টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছিল । এই অনুদানের পিছনে প্রধান শর্ত ছিল ১২ লাখ বই সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগারটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে । সেই শর্তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হওয়ায় ইতিমধ্যেই 2 কোটি টাকা দিয়েছে গ্রন্থাগার বিভাগ । গ্রন্থাগার সকলের জন্য উন্মুক্ত করার পর বাকি 3 কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাবে । উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় আগে জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই সেন্ট্রাল লাইব্রেরি সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে । কিন্তু এখনও কিছু কাজ বাকি আছে । এই কাজ সম্পূর্ণ হতে আরও এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে । সেটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলেই সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির দরজা।

Intro:কলকাতা, ৯ সেপ্টেম্বর: বই পড়ার সঙ্গে সিনেমাও দেখতে পাবেন আমজনতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে। এমনই ব্যবস্থা করা হচ্ছে ১৬০ বছর পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারে। যেখানে শুধু বই পড়া নয়, ফিল্ম দেখানোরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বই ও ফিল্মের ডিভিডির কালেকশন একত্রিত করে তৈরি এই 'ফিল্ম কর্ণারে' নতুন, পুরনো, বিদেশি, ভারতীয়, আঞ্চলিক ভাষার বইয়ের সংগ্রহের সঙ্গে থাকছে নির্বাচিত ফিল্মের ডিভিডির কালেকশন। যা দেখানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি ভিউয়িং রুম। স্বাভাবিকভাবেই বইয়ের অনবদ্য সংগ্রহের সঙ্গে ফিল্ম কর্ণার পাঠকদের আরও বেশি আকর্ষণ করবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Body:কীভাবে এই 'ফিল্ম কর্ণার' তৈরির ভাবনাচিন্তার সূত্রপাত ঘটল? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান সৌমিত্র সরকার বলেন, "আমাদের সারা পৃথিবীর থেকেই ভিজিটর ও স্কলাররা আসেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছাড়াও শুধু রাজ্য নয়, পুরো দেশ থেকেই আসে। তাঁদেরকে তো আমাদের অ্যাক্সেস দিতে হবে পাঁচদিন, সাতদিনের জন্য। তারপরে সরকারের কাছ থেকে এরকম প্রস্তাব পাই যে, আরও পাবলিককে জন্য খুলে দেওয়া হোক। তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলি। বিশ্ববিদ্যালয় সম্মতি দেয়। তখন আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমাদের লাইব্রেরী সিস্টেম তো ভারতবর্ষে সর্ববৃহৎ, আমাদের শুধু সেন্ট্রাল লাইব্রেরিরা ১১ তলা। ৮টা ক্যাম্পাসে লাইব্রেরি আছে, ডিপার্টমেন্টগুলোরও লাইব্রেরি আছে। আমাদের কিছু ডিপার্টমেন্টে এমন লাইব্রেরি আছে যেরকম ক্যালেকশন অন্য প্রতিষ্ঠানেও নেই। যেমন আইনে ৮০-৯০ হাজারের মতো কালেকশন আছে। সেগুলো সবাই আসে, দেখে। আমাদের স্টুডেন্টরা পাবে, প্রাক্তণ স্টুডেন্ট, কলেজ স্টুডেন্ট, ফার্স্ট স্টুডেন্টরাও পাবে। তখন আমরা ডিজিটাল এবং ট্রাডিশনালের মিলন ঘটাতে চিন্তাভাবনা করি এটা ওপেন করব। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাবটা পাঠাই।"

ফিল্ম কর্ণারের জন্য কতো বই সংগ্রহে রাখা হচ্ছে? সৌমিত্রবাবু বলেন, "এই মুহূর্তে আমরা সবমিলিয়ে ৬০ হাজার বই কিনেছি। তার মধ্যে ২ হাজারের বেশি ফিল্মের বই।" 'বলিউড ইন পোস্টার্স', 'ফিল্মি জগৎ', 'সাম্মি কাপুর দ্য গেম চেঞ্জার', 'থ্রি ইডিয়েটস', 'কাগজ কে ফুল', 'বলিউড ইন ব্রিটেন', 'ওম শান্তি ওম', 'দ্য ডায়লগ অফ মাদার ইন্ডিয়া', আমির খান, শাহরুখ খান, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেনের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীর সম্পর্কে বই সহ বহু নতুন নতুন বই কেনা হয়েছে ফিল্মের উপর। আর এই বইয়ের সংগ্রহের সঙ্গে থাকছে ফিল্মের ডিভিডির কালেকশন। ফিল্মের কালেকশনের বিষয়ে সৌমিত্রবাবু বলেন, "আমরা ১ হাজারের মতো ফিল্ম রাখব। তাতে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, বিভিন্ন বিদেশি ভাষায় ক্লাসিক ও অ্যাওয়ার্ড উইনিং ফিল্ম থাকবে। সিলেকশন প্রাথমিকভাবে সবাই মিলে করছে। পরে আমরা রিডারদের থেকে মতামত নেব। আমরা ডিভিডি আনাচ্ছি। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইন্সটিটিউট ও বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্যাটালগ আনাচ্ছি। আমাদের নিজস্বও কিছু সংগ্রহ রয়েছে।" পরবর্তীকালে এই সংগ্রহ আরও বাড়ানো হবে। এটা সকলের জন্য বিনামূল্যে হবে।

কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়েই ফিল্ম দেখা যাবে? লাইব্রেরিয়ান সৌমিত্রবাবু বলেন, "কেউ এসে বলবে আমরা এটা দেখতে চাই। আমাদের লোক থাকবে। সঙ্গে সঙ্গে সেটা অন করে দেবে।" তিনি জানান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি ১০টা থেকে খুলে যায়। রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। লাইব্রেরি খোলা থাকার সময়ের মধ্যেই এই ফিল্ম দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে। তবে, কোনও কারণে কেউ যদি এসে কোনও ফিল্ম দেখতে চাই, অথচ সেই সময়ে অন্য কেউ ফিল্ম দেখছে তাহলে কি তাঁরা পরবর্তী কোনও সময়ে ফিল্মটি দেখার জন্য আবেদন করতে পারবেন? সৌমিত্র সরকার বলেন, "তিনি রিক্যুইজিশন দিয়ে যেতেই পারেন। ডিমান্ড নেওয়া হবে। বুকিং করা হবে।" বর্তমানে ভিউয়িং রুমে একসঙ্গে ১২ জন মিলে একটি ফিল্ম দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছোট গ্যালারির মতো করে এই ভিউয়িং রুমটি তৈরির ভাবনাচিন্তা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদেরও ক্যাম্পাসের মধ্যেই এনগেজ করা যাবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

শুধু ফিল্ম নয়। আরও বিভিন্ন বিষয়ের কর্ণার করা হচ্ছে এই সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে। কর্ণার অর্থাৎ বইগুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া। এর মধ্যে অনেক বই আগেই ছিল, অনেক বই নতুন কেনা হচ্ছে। স্পোর্টস কর্ণার, উইম্যান্স কর্ণার, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কর্ণার, কেরিয়ার গাইডেন্স, কম্পিটিটিভ এগজামের মতো বিভিন্ন বিষয়ে তৈরি করা হচ্ছে কর্ণার। আগে থেকেই এই রকমের বিভিন্ন বিষয়ে কর্ণার রয়েছে। যেমন, আলিপুর ক্যাম্পাসে থাই কর্ণার, অন্য লাইব্রেরিতে চাইনিজ কর্ণার, সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে ফরেন পলিসি স্টাডিজ, আইনের কালেকশন আগে থেকেই আছে। নতুন বইগুলি শুধু সেন্ট্রাল লাইব্রেরির জন্য নয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিগুলির জন্যও এক কপি করে কেনা হয়েছে। যাতে, অন্যান্য ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারা নিজেদের ক্যাম্পাসেই বেশিরভাগ বই পড়ার সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

Conclusion:পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রন্থাগার বিভাগ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৫ কোটি টাকার অনুদান অনুমোদন করেছিল। তার প্রধান একটি শর্ত ছিল ১২ লক্ষ বই সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগারটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। সেই শর্তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রাজি হওয়ায় ইতিমধ্যেই ২ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে গ্রন্থাগার বিভাগ। গ্রন্থাগার সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর বাকি ৩ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাবে। উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় আগে জানিয়েছিলেন, এই বছর সেপ্টেম্বর মাসেই সেন্ট্রাল লাইব্রেরি পাবলিকের জন্য খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু, এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। তা সম্পূর্ণ হতে ১ থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। সেটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলেই সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির দরজা।
Last Updated : Sep 10, 2019, 3:56 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.