কলকাতা, 16 এপ্রিল : রক্ত সংকট শহরজুড়ে । কোরোনার প্রকোপে বিশ্বজুড়ে চলছে মৃত্যু মিছিল । কোরোনার সংক্রমণকে প্রতিরোধ করতে চলছে লকডাউন । লকডাউন এর ফলে স্তব্ধ হয়েছে রাজ্য-সহ গোটা দেশ । আর এর ফলেই সব জায়গায় তৈরি হয়েছে রক্তের অভাব । লকডাউনের ফলে কলকাতা-সহ রাজ্যের সর্বত্র বন্ধ রয়েছে রক্তদান শিবির । এর ফলে রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে । মানুষ সকাল থেকেই ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে হন্যে হয়ে ঘুরছে রক্তের জন্য । কিন্তু রক্ত কোথায় ? কোথায় গেলে মিলবে রক্ত এই প্রশ্ন রোগীর পরিজনদের?
শুধুমাত্র কলকাতায় প্রতিদিন এক হাজার ইউনিট রক্ত লাগে । কিন্তু, বর্তমানে বর্তমানে রক্ত মিলছে মাত্র 400 ইউনিট । ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে পর্যাপ্ত রক্ত নেই । মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একমাত্র কলকাতা পুলিশই রক্তদান করতে পারবে । কিন্তু এই বিপুল পরিমাণে চাহিদা শুধুমাত্র পুলিশের রক্ত দান দিয়ে হবে না বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক-সহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি । চিকিৎসক অনির্বাণ রায়চৌধুরি জানান, কলকাতা ও শহরতলিতে বহু মানুষ আছেন যারা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত । সেই সঙ্গে ব্লাড ক্যানসারের রোগীর সংখ্যাও কম নয় । অনেক রোগীর 15 দিন অন্তর রক্ত বদল করতে হয় ৷ কোনও কোনও রোগীর মাসে একবার করে রক্ত বদল করতে হয় । চিকিৎসকরা রক্তের কথা লিখে দিলেও ব্লাডব্যাংকগুলিতে পর্যাপ্ত রক্ত না থাকায় রোগীরা রক্ত পাচ্ছেন না । ফলে রক্তের অভাবে বহু লোক মারা যাবেন ।
মেডিকেল ব্যাঙ্ক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যারা সারা বছর বিভিন্ন জায়গায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে । এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে আশিস দত্ত জানান, এমনি সাধারণ সময়ে সারা বছর রক্তদান শিবির করলেও প্রয়োজনের থেকে কম রক্ত সংগ্রহীত হয় । আর এই কঠিন সময়ে সম্পূর্ণভাবে রক্তদান শিবির বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সেই সংকট অনেক বেশি তীব্র হয়ে গেছে । মানুষ সকাল থেকেই ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে হন্যে হয়ে ঘুরেও পর্যাপ্ত রক্ত পাচ্ছে না । মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কলকাতা পুলিশ যে রক্তদান দিচ্ছে, তাতে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, "পুলিশ যে পরিমাণে রক্ত দিচ্ছে তা প্রয়োজনের থেকে খুবই কম । এর থেকে বেশি রক্ত দেওয়া সম্ভবও নয় । সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম যদি এলাকায় ছোটো ছোটো রক্তদান শিবির এই সময়ে করা যায়, তাহলে 30 জনের কম সংখ্যক ব্যক্তির কাছে রক্ত নেওয়া যেত ৷ তাহলে হয়তো রক্ত সংকট কিছুটা কম হতো । কিন্তু কোরোনা সংক্রমণ যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সরকার রক্তদান শিবির করার জন্য অনুমতি দেয়নি । ফলে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে ।"
আজ সকালে ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে দেখা গেল অনেককেই । ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা মিঠুন মণ্ডলের বছর ছয়েকের ছেলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত । SSKM হাসপাতালে ছেলে ভরতি । হাসপাতালের তরফে রক্তের জন্য লিখে দিয়েছে । কিন্তু শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে একবিন্দু রক্ত জোগাড় করতে পারেননি মিঠুন । ছেলেকে রক্ত না দিলে বাঁচাবেন কী করে তা নিয়েই চিন্তিত ৷ তিনি বলেন, "তাহলে কি আমি আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারব না । ব্লাড ব্যাঙ্ক জানিয়েছে ডোনার নিয়ে এলে রক্ত মিলবে ৷ কিন্তু কোথা থেকে পাব ডোনার ?" মহম্মদ কামরানের মা গত আট বছর ধরে ব্লাড ক্যানসারে ভুগছেন । প্রতিমাসেই ও+ রক্ত দু-তিনবার করে দিতে হয় । আর এই কঠিন সময় হন্যে হয়ে ঘুরেও মায়ের জন্য এক ইউনিট রক্তও জোগাড় করতে পারেননি ।