কলকাতা, 21 জানুয়ারি: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ মেনে কমিশনের কাছে 'অ্যাকশন টেকেন' রিপোর্ট জমা না-দেওয়ায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে হুঁশিয়ারি দিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। গত 17 জানুয়ারি পুলিশ কমিশনারকে ফের 4 সপ্তাহ সময় দিয়ে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন (NHRC Seeks Report from Kolkata Police Commissioner Within 4 Weeks)। এই 4 সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট না-পেলে কমিশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, প্রোটেকশন অফ হিউম্যান রাইটস 1992 আইনের 13 নম্বর ধারা প্রয়োগ করে তাঁকে দিল্লিতে কমিশনের অফিসে যেতে বাধ্য করা হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাম্প্রতিক ইতিহাসে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে কোনওদিন এই ভাষায় কেউ চিঠি লেখেননি। পুলিশ কমিশনারকে মানবাধিকার কমিশন বলেছে তাঁকে আইন প্রয়োগ করে জবরদস্তি দিল্লি নিয়ে যাবে! সেখানে কমিশনের সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বক্তব্য জানাতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কেন এত ক্ষুব্ধ হ'ল কলকাতার পুলিশ কমিশনারের উপর?
এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ সুর বলেন, "গত 29 সেপ্টেম্বর এবং 13 অক্টোবর কলকাতার রাজাবাজার মোড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনার প্রতিবাদে পথসভা করতে চেয়েছিল মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। নিয়মমতো পুলিশকে জানিয়েই তা করার কথা ছিল ৷ পুলিশ তাতে কোনও আপত্তি জানায়নি। কিন্তু ঘটনা হল 29 সেপ্টেম্বর মিটিংয়ের জন্য জমায়েত হতেই পুলিশ এপিডিআর কর্মীদের গ্রেফতার করে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় নিয়ে যায়। রাত পর্যন্ত আটকে রেখে তারপর ছেড়ে দেয়। একইরকমভাবে 10 অক্টোবরও এপিডিআরের সভা পুলিশ ভেস্তে দেয়। অথচ ওই এলাকায় কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। 144 নম্বর ধারা ছিল না।"
আরও পড়ুন: ফরাসি শিখবে কলকাতা পুলিশ, স্বাক্ষরিত হল মউ
তিনি আরও বলেন, "এইভাবে এপিডিআর কর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে এবং পুলিশের এরকম অসাংবিধানিক, বে-আইনি আচরণের বিচার চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়। মানবাধিকার কমিশন 31 অক্টোবর কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও ডিজিকে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে এবং এব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চায়। কিন্তু, পুলিশ কমিশনার বা ডিজি মানবাধিকার কমিশনের চিঠির কোনও জবাবই দেননি। কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কি না তাও কমিশনকে জানায় না। এতেই চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।"
সূত্রের দাবি, জাতীয় মানবাধিকার কতৃপক্ষ প্রোটেকশন অফ হিউম্যান রাইটস 1992 আইনের 13 নম্বর ধারা স্মরণ করিয়ে ডিজি ও পুলিশ কমিশনারকে নোটিস পাঠিয়েছেন। 13 নম্বর ধারা হ'ল পাওয়ার অফ কমিশন 'Power of Commission' সংক্রান্ত। তাতে বলা হয়েছে কমিশনের সিভিল কোর্টের মতো ক্ষমতা আছে। কমিশন যে কাউকে ডেকে পাঠাতে পারে। সে ক্ষেত্রে কমিশনারের হাজিরা বাধ্যতামূলক। চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, "কলকাতা পুলিশ কমিশনার ই-মেল পেয়েছেন। এক্ষেত্রে আইন মেনে করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। হচ্ছেও। আগামীতে এপিডিআরের সঙ্গে আইন মেনে কাজ করা হবে। এই মুহূর্তে এই বিষয়ে আর কিছু বলা সম্ভব নয়।"