কলকাতা, 15 ফেব্রুয়ারি: মেট্রো স্টেশনের গায়ে কোথাও লেখা 'নীড় ছোট ক্ষতি নেই'। কোথাও আবার লেখা 'মুছে যাওয়া দিনগুলি...' বাঙালিকে নস্টালজিক করে দিতে এইটুকুই যথেষ্ট। এবার বাঙালির সেই নস্টালজিয়াকে আরও বাড়িয়ে চালু হতে চলেছে হেমন্ত মুখোাধ্যায়ের নামাঙ্কিত মেট্রো স্টেশন। সূত্রের খবর কবি সুভাষ (নিউ গড়িয়া) থেকে হেমন্ত মুখোাধ্যায় (রুবি মোড়) স্টেশন পর্যন্ত কলকাতা মেট্রোর অরেঞ্জ লাইনে যাত্রী পরিষেবা শুরু হয়ে যাবে দ্রুত । সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে চলতি মাসের শেষের দিকেই যাত্রী নিয়ে দৌড়বে মেট্রো ৷ ইতিমধ্যে লাইন 6 এর কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি (Commissioner of Railway Safety, CRS) ছাড়পত্র মিলেছে (New Garia-Ruby Metro Service orange line to start soon) ৷
ইএম বাইপাসের দু'ধারে ছোট-বড় একাধিক হাসপাতাল ৷ তাই এই রুটে যাত্রী পরিষেবা শুরু হয়ে গেলে শহরবাসীর সুবিধে হবে ৷ অরেঞ্জ লাইন একবার শুরু হয়ে গেলে শহরের মানুষের পাশাপাশি শহরতলির মানুষজনও ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে ৷ কারণ এই অরেঞ্জ লাইন তৈরি হলে একদিকে ব্লু লাইন যুক্ত হবে, কবি সুভাষের কাছে যেহেতু পূর্ব রেল রয়েছে ৷ তাই বহু মানুষ খুব সহজে হুগলি, উত্তর 24 পারগনা, হাওড়া এবং দক্ষিণ 24 পরগনার এখানে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন পারবেন ৷
অরেঞ্জ লাইনের এই 5.4 কিমি অংশ চালু হয়ে গেলে কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনে ব্লু লাইন বা নর্থ-সাউথ লাইনটিও এসে যুক্ত হবে ৷ এর ফলে কবি সুভাষ থেকে সোজাসুজি রুবি পর্যন্ত যাওয়া সুবিধেজনক হবে ৷ ঠিক তেমনভাবে রুবি থেকে কেউ যদি মধ্য কলকাতা বা সোজা দক্ষিণেশ্বর যেতে চান, তাঁর পক্ষে হয়তো মেট্রোর থেকে নির্ঝঞ্ঝাট ও দ্রুত পৌঁছনোর বিকল্প হবে না ৷ এর পাশাপাশি শহরের এটি একটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ জায়গায, যেখানে একদিকে কসবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টেট-সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং একাধিক ছোটবড় অফিস আছে ৷ তাই স্বাভাবিকভাবে মেট্রোর এই অংশে দিনের বেশিরভাগ সময় যাত্রীর ভিড় থাকবে, তেমনটা মনে করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ৷ বিশেষত যাঁরা ক্যানিং, ডায়মন্ডহারবার বা নামখানার মতো জায়গা থেকে আসবেন, তাঁরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে কবি সুভাষ হয়ে কলকাতা পৌঁছতে পারবেন ৷
আরও পড়ুন: নিউ গড়িয়া-রুবি মোড় সিআরএস পরিদর্শন শেষ, রুটে মেট্রো চালুর অপেক্ষা
প্রসঙ্গত গত 30 জানুয়ারি এই অংশের পরিদর্শনে আসেন কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি (সিআরএস) ৷ এর আগে কলকাতা মেট্রো রেলের জেনারেল সেক্রেটারি অরুণ অরোরা বলেছেন, "আমরা এই অংশে মেট্রো পরিষেবা দিতে প্রস্তুত ৷ তবে এই মাসের ঠিক কবে থেকে পরিষেবা শুরু হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে রেল বোর্ড ৷ রেল বোর্ডের তরফে তারিখ ঘোষণা করা হলেই পরিষেবা শুরু হয়ে যাবে ৷ ছাড়পত্র মিললেও ভাড়া কী হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এক থেকে দু'সপ্তাহ সময় লাগতে পারে ৷"
এই রুটে রয়েছে পাঁচটি স্টেশন- কবি সুভাষ বা নিউ গড়িয়া, সত্যজিৎ রায় বা হাইল্যান্ড পার্ক, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী বা মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি ও অজয় নগর, কবি সুকান্ত বা অভিষিক্তা ক্রসিং এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বা রুবি মোড় । এই লাইনে ইন্টিগ্রেটেড টিকেটিং ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ৷ অর্থাৎ একটি টিকিট কেটে অরেঞ্জ ও ব্লু লাইনে সফর করতে পারবেন যাত্রীরা ৷ টার্মিনাল স্টেশনে নেমে আরেকটি লাইনে যাত্রা করার জন্য আর আলাদা করে টিকিট কাটতে হবে না ৷
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো স্টেশনগুলির মতো ঝাঁ চকচকে এবং অত্যাধুনিক মানের করে তোলা হচ্ছে ৷ এই স্টেশনে রয়েছে চারটি লিফট, ন'টি এসকালেটর, 11টি সিঁড়ি ৷ যাত্রী সুরক্ষার বিষয়ে কোনও রকম আপস করতে নারাজ মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ ৷ তাই সবদিক থেকে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রয়েছে একাধিক ব্যবস্থা ৷ গোটা স্টেশন চত্বরে রয়েছে 18টি ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরা, যাত্রীরা যাতে স্বচ্ছন্দে বেরতে এবং প্রবেশ করতে পারে, তাই 13টি এএফসি গেট বসানো হয়েছে ৷ পর্যাপ্ত টিকিট কাউন্টার, ফার্স্ট এড রুম, বসার পর্যাপ্ত আসন, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড, মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা শৌচালয়, দৃষ্টিহীনদের সুবিধের জন্য টিকটাইল ফ্লোরিং, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, আগুন লাগলে বা কোনও জায়গা থেকে ধোঁয়া বেরলে যাতে দ্রুত সেই ধোঁয়া বেরিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা এবং ইমারজেন্সি লাইটিং ব্যবস্থা-সহ অন্য পরিষেবাও ৷
আরও পড়ুন: আয় বাড়াতে মেট্রোর কোচে বসছে এলইডি স্ক্রিন