কলকাতা, 17 জুন: তৃণমূলের অভিযোগকে পাত্তাই দিলেন না নওশাদ সিদ্দিকী ৷ তবে বিজেপির সঙ্গে আঁতাত প্রসঙ্গে দিনশেষে মুখ খুলে কার্যত তৃণমূলকে তাদের অস্ত্রেই বিঁধলেন আইএসএফ বিধায়ক ৷ দেবাংশু ভট্টাচার্য এবং তৃণমূলের অন্যান্য নেতাদের অভিযোগের পালটা জবাব দিতে গিয়ে নওশাদ সিদ্দিকী সাফ জানিয়ে দেন, তৃণমূল ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট তৈরি করেছে ৷
তৃণমূলের অভিযোগ, নওশাদ সিদ্দিকীর সঙ্গে বিজেপির গোপন আঁতাত আছে ৷ শুক্রবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির দালাল বলে নওশাদকে দেগে দিয়েছিলেন ৷ শনিবারও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ করা হয়, বিরোধীদের অশুভ আঁতাত তৈরি হয়েছে রাজ্যে ৷ বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন নওশাদ সিদ্দিকীর সঙ্গে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। বিজেপির দালালি করার অভিযোগ তোলেন নওশাদের বিরুদ্ধে। যদিও রাজ্যের শাসকদলের অভিযোগ অস্বীকার করে পালটা তৃণমূলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিলেন নওশাদ।
এদিন বিকালে এক ভিডিয়ো বর্তায় নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, "ওটা ফেক তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আমি যে চিন্তাভাবনা, কাজকর্ম করছি তার থেকে আমার মানসিকতাকে ডাইভার্ট করার জন্য এই সমস্ত করা হচ্ছে তৃণমূলের তরফে। জনগণের কাছে আইএসএফ-এর বিরুদ্ধে ভুল ধারণা তৈরি করার জন্য ভোটের আগে এই সমস্ত আবারও তৃণমূল করছে।" তাঁর আরও অভিযোগ, এর আগেও একাধিকবার এরকমটা ঘটিয়েছে তৃণমূল। নওশাদ বলেন, "আমাকে মারা হয়েছে ৷ অনৈতিকভাবে 41 দিন জেলে রাখা হয়েছে ৷ টাকার লোভ দেখানো হয়েছে ৷ খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে ৷ তারপরও আমাকে দলে টানতে পারেনি, দমাতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে, যার নমুনা আবারও একটা ফেক চ্যাট প্রকাশ করে মন্তব্য করছে। এটা একটা নতুন গুজব। ঠিক যেমন 2021-এর আগে এনআরসি'র ভয় দেখিয়ে তৃণমূল ভোট কুড়িয়েছিল, ঠিক সেভাবেই গুজব ছড়িয়ে পঞ্চায়েত ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে তৃণমূল কংগ্রেস।"
বিজেপির সঙ্গে নওশাদ সিদ্দিকীর টাকার লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, "আমি সাধারণ মানুষের ভোটে জয়ী হয়েছি ৷ সাধারণ মানুষ চেয়েছেন বলেই আমি বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছি। বিজেপি থেকে আমি এক টাকা নিয়েছি বলে কেউ প্রমাণ করতে পারলে ভাঙড়ের মানুষ যা চাইবে সেই শাস্তি আমি মাথা পেতে নেব। ভোট মিটলে আমি আইনি সাহায্য নেব ৷ এর আগেও এরকম মিথ্যা অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল। কিন্তু শেষে কী হল ফাইল গুটিয়ে সোজা বাড়ি চলে যেতে হল তাদের।" অন্যদিকে, এই চ্যাটের সঠিক তদন্তের দাবি চেয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
আরও পড়ুন: কালিয়াচকে তৃণমূল নেতাকে পিটিয়ে খুন, জেলাশাসকের রিপোর্ট তলব নির্বাচন কমিশনারের
তিনি বলেন, "এরকম চ্যাট তো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির আধঘণ্টার মধ্যে তৈরি করে দেওয়া যায়। ফটোশপে খুব দারুণভাবে এটা যে কেউ করে যেতে পারে। তবে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ কিন্তু এনক্রিপটেড। তাহলে সেই মেসেজ এবং তার স্ক্রিনশট তৃণমূলের হাতে পৌঁছল কী করে? তৃণমূল কি স্পাইওয়্যার কিনেছে? কারণ এর আগে পেগাসাসের কথা আমরা শুনেছি। তাহলে কি তৃণমূল বা দিদিমণির কোনও পুলিশ অফিসার জার্মানি বা ইজরায়েল থেকে ওই ধরনের কোনও সফটওয়্যার কিনেছে? এই প্রশ্নটা কিন্তু আগে উঠবে। এটা যদি হয় তাহলে তার তদন্ত আগে হওয়া উচিত। কারণ এই ধরনের সফটওয়্যার কিনতে গেলে বা ব্যবহার করতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি লাগে। রাজ্য সরকার বা তৃণমূল সেটা নিয়েছে?"