কলকাতা, 28 জানুয়ারি: যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ৷ জরাজীর্ণ সেতু ৷ নৌকা থেকে সেতুর কাঠের পাটাতন ভেঙে পড়েছে । নীচে দেখা যাচ্ছে জল । পানায় ঢেকেছে সেই ঝিলের জল ৷ বছর কয়েক আগেও যেটা ছিল দর্শনীয় স্থান । সেই দক্ষিণ কলকাতার পাটুলির ভাসমান বাজারের এমনই বেহাল অবস্থা বর্তমানে । যা আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই বাজার সংস্কারের তত্ত্বাবধায়ক বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, এই বাজার সংস্কারের জন্য একটি ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছে ।
2018 সালে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি উদ্যোগে থাইল্যান্ডের আদলে তৈরি হয় পাটুলি ভাসমান বাজার । পাটুলি বাইপাস লাগোয়া এলাকায় রাস্তা চওড়া হবে বলে মেট্রোর কাছে রাস্তার উপর যে বাজার বসত, সেই দোকানদারদের তুলে আনা হয় অদূরে পাটুলির ঝিলে । এই ভাসমান বাজার উদ্বোধনের পরপরই এটি কলকাতার একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে গিয়েছিল । জলের উপর নৌকায় দোকান । কাঠের সেতু দিয়ে ক্রেতারা যেতেন কেনাকাটা করতে ।
প্রায় 10 কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছিল এই বাজার তৈরি করতে । 200টির বেশি নৌকা করা হয়েছিল । এক একটি নৌকায় দুটো করে দোকান । এখন সেই সংখ্যা কমে অর্ধেকের নীচে নেমেছে । দেখতে ভালো হলেও নানা সমস্যায় কমতে থাকে ক্রেতার সংখ্যাও । সেতু থেকে শুরু করে নৌকা সবই ভাঙা । তার উপরে জলাশয়ে পানা জমে যাচ্ছে । ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মশার আতুঁড়ঘরে পরিণত হচ্ছে পাটুলি ঝিল । একটু এদিক ওদিক হলেই বিপদ । এক্কেবারে জলে । সেই ঝুঁকি নিয়ে কেউ আর আসছেন না বাজারের ভিতরে ।
অন্যদিকে যে কাঠ দিয়ে নৌকাগুলি করা হয়েছিল সেগুলো নিম্নমানের হওয়ায় এক্কেবারে ভগ্নদশা । একে একে বন্ধ হয়েছে দোকানগুলি । এখন ঝিলের পার ধরে মাথার উপর প্লাস্টিক লাগিয়ে ও কয়েকটি নৌকায় চলছে কিছু দোকান । তাও সারাদিনে মাছি মারতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ।
সম্প্রতি এই বাজারের বেহাল অবস্থা নিয়ে টক টু মেয়র অনুষ্ঠানে এক স্থানীয় ব্যক্তি ফোন করে অভিযোগ করেন । সেই ফোন পাওয়া মাত্রই মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, "ওখানকার দোকানদাররা প্লাস্টিক লাগিয়ে পরিস্থিতি খুবই খারাপ করে রেখেছে । রক্ষণাবেক্ষণ করে না । বাজার বন্ধ করে দেব ৷ আমি তুলে দেব ব্যবসায়ীদের ।" তবে বাস্তব বলছে অন্য কথা । বাজার ঘুরে দেখল ইটিভি ভারত ৷ জরাজীর্ণ এই বাজারে চারিদিকে আবর্জনার স্তূপ । ভাঙা নৌকা । সেতুর পাটাতন খুলে দেখা যাচ্ছে নীচের জল । কচুরিপানা ভর্তি । মশায় ছয়লাপ ।
কেন এই পরিস্থিতি?
পাটুলি ভাসমান বাজারের ব্যবসায়ী বাপন সরদার বলেন, "আমরা রাস্তায় ছিলাম, জলে এনে ফেলল । নৌকা বা সেতু ভাঙলে সেটা করার ক্ষমতা আমাদের নেই । সেটা কেএমডিএ'র করার কথা । এদিকে জঞ্জাল তুলবে ওরাই । সেটা তো আমরা কিছু করতে পারি না । এইসব করছে না বলেই আজ এই অবস্থা বাজারের । আমাদের দোকানের সংখ্যা কমে অর্ধেক হয়েছে । নৌকায় দোকান করতে পারছি না ৷ তাই ঝিলের ধারে উঠে আসতে হচ্ছে । এখানেই ব্যবসা করছি ৷ প্লাস্টিক খুলতে বললে খুলে দেব কিন্তু বাকি কী হবে?"
আরেক ব্যবসায়ী সতীশ ব্রহ্ম'র কথায়, "প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভাসমান বাজারের ভিতরে কেউ আসে না কিনতে । জলে কচুরিপানা ভর্তি । জঞ্জাল নিয়মিত পরিষ্কার করে না । সেই কচুরিপানা থেকে জঞ্জাল সবটাই বাজারের ভিতরেই এদিক ওদিক রাখা । দুর্গন্ধ বের হয় । সেতু সারায়নি । নৌকা সারায়নি । আমফান পরবর্তী সময়ে নিম্নমানের কাজ হয়েছিল । পর্যাপ্ত আলো নেই ।" আরেক দোকানদার সঞ্জীত শীল বলেন, "ঝিলের এই রাস্তা দিয়ে লোক বাজারে আসে না । টাকা, মালপত্র জলে পড়ে যায় । ভিতর থেকে মালপত্র বের করতে মুটে লাগে । সারাদিন মাছি তাড়াতে হয় । মেয়র তো আমাদের অবস্থা একবারও দেখতে আসেননি ৷"
পাটুলি ভাসমান বাজার সংস্কারের তত্ত্বাবধায়ক বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত ইটিভি ভারতকে বলেন, "ইতিমধ্যেই বাজারের হাল ফেরানোর জন্য একটি ব্লু প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছে । যা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটির কাছে দেওয়া হয়েছে । টেন্ডার প্রক্রিয়া চালু করার জন্য কেএমডিএ আধিকারিক স্তরে আলোচনা করছে । দ্রুত এই বাজার সংস্কারে টেন্ডার ডাকা হবে ।"