কলকাতা, 19 জুন: মনোনয়ন পর্বকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল ভাঙড় ৷ আইএসএফ কর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী ৷ সোমবার একেবারে 180 ডিগ্রি ঘুরে সম্পূর্ণ অন্য কথা শোনা গিয়েছে সিদ্দিকীর মুখে ৷ মুখ্যমন্ত্রী চাইলে প্রার্থীপদ ছাড়তে প্রস্তুত বলে জানান নওশাদ ৷ ঘটনাকে অন্য চোখে দেখছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ৷
মনোনয়নের শেষ পর্ব থেকেই আলোচনায় ভাঙড়। ইতিমধ্যেই সেখানে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গুলি, বোমা, গাড়ি ভাঙচুর, সব মিলিয়ে ভাঙড়ের রণক্ষেত্রের চেহারা দেখেছে রাজ্য। এই নিয়ে একদিকে শাসক অপরদিকে বিরোধী, রাজনৈতিক তরজা চলছে ৷ তারমধ্যেই সোমবার আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী চাইলে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমি শান্তি চাই। ভাঙড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। আমি ভাঙড়ের বিধায়ক। আমি চাই না, সেখানে কোনও রাজনৈতিক দলের কেউ প্রাণ হারাক।"
প্রসঙ্গত এদিন নিজের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক। এরপর তাঁকে প্রশ্ন করেন বিচারক ৷ তিনি বলেন, "আপনি তো আপনার নিরাপত্তার কথা বলছেন। ভাঙড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে যে ব্যবস্থা হয়েছে তাতে আপনি কি সন্তুষ্ট?" জবাবে নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, "আমি ভাঙড়বাসীর নিরাপত্তার জন্য রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনেও গিয়েছি। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর দরজায় গিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোনও ক্ষেত্রেই সেরকম সদর্থক উত্তর পাইনি।"
তিনি আরও বলেন, "আমি চাই ভাঙড়ের প্রত্যেক মানুষ নিরাপদে থাকুক। সে তৃণমূল সমর্থক হতে পারেন, সিপিএম সমর্থকও হতে পারেন বা আইএসএফের কর্মী। শাসক কে, বিরোধী কে, আমার দেখার দরকার নেই ৷ প্রতিটা মানুষ নিরাপদে থাকুক আমি চাইব। আমি বারবার ভাঙড়ের মানুষকে শান্তি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেছি। কেউ যাতে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলায় পা না দেয়, তার জন্য বলেছি।"
এরপরই নওশাদ জানান, ভাঙড়ে শান্তিপূর্ণভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পন্ন হবে এই বিষয়ে আশা রাখি। পাশাপাশি, এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা় দিয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক। তিনি বলেন, "ভাঙড়ে সুষ্ঠুভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন করার দায়িত্ব নিন মুখ্যমন্ত্রী। ভাঙড়ের শান্তির স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী চাইলে পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে প্রস্তুত। এই খুন, হানাহানি চাই না। এই খুনোখুনির রাজনীতি করতে আমি আসিনি। আমি শান্তির স্বার্থে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।"
আরও পড়ুন: দেড় ঘণ্টা ধরে 30 জন বিজেপি প্রার্থীর অভিযোগ শুনলেন রাজ্যপাল
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক অতীতে ভাঙড় নিয়ে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে আইএসএফ বিধায়ককে। এমনকী, নির্বাচন কমিশনে দাঁড়িয়ে ভাঙড়ে মৃত্যু এবং অশান্তির জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করেছিলেন তিনি। কিন্তু সোমবার সেই ভাঙরের বিধায়কই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের উদ্দেশ্যে বার্তা দিলেন শান্তির স্বার্থে পদক্ষেপ নিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করতেও তিনি প্রস্তুত। তবে এটা কি সন্ধির বার্তা!