কলকাতা, 26 জুন: পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্ব থেকেই উত্তপ্ত দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙ্গড় । ইতিমধ্যেই সেখানে ভোটের হিংসার বলি হয়েছেন তিনজন । ভাঙড়ের উত্তাপ, ভাঙড় নিয়ে আলোচনা ভোটের ময়দান ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে আদালতের চৌহদ্দি পর্যন্ত । এমতাবস্থায় সোমবার রাজ্য বিধানসভায় মুখোমুখি হলেন দুই পরস্পর বিরোধী নেতা শওকত মোল্লা এবং নওশাদ সিদ্দিকী । একজন ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক। অন্যজন ভাঙড়ের বিধায়ক ।
সোমবার বিধানসভায় দু'জনকেই একইসঙ্গে দেখতে পাওয়া গেল দাদা এবং ভাইয়ের ভূমিকায় । ভাঙড়ে দু'জনে একে অপরের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও এদিন বিধানসভার অন্দরে একে অপরকে দাদা-ভাইয়ের ভূমিকাতেই সম্বোধন করতে দেখা গেল । আর দু'জনে মিলেই ভাঙড়ের মাটিতে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষেই সওয়াল করেন এই দুই নেতা ।
কথায় বলে অনেক বড় সমস্যা আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করে দেওয়া যায় । তাহলে ভাঙড় কেন যাবে না । গ্রাউন্ড জিরোতে যতই উত্তাপ থাকুক, এদিন বিধানসভায় সংবাদমাধ্যমের উদ্যোগে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভাঙড় নিয়ে শান্তির কথা বলতে শোনা গেল দুপক্ষকেই । এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নওশাদ সিদ্দিকী ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক তথা ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লাকে বড় ভাই আখ্যা দিয়ে বলেছেন, "আমার থেকে অনেক বেশি সময় ধরে উনি বিধায়ক । আমার নির্বাচনী ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ হয় তার জন্য আমাকে আশা করব গাইড করবেন তিনি ।"
এর জবাবও দিয়েছেন শওকত মোল্লা । তিনি বলেন, "গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই নির্বাচন হবে ভাঙড়ে । এক্ষেত্রে কোথাও কোনও অসুবিধা নেই । আমরা চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন । বরং আমি আমার ছোট ভাইকে (নওশাদ ভাই) বলব ভাঙড়ে গন্ডগোলটা একটু কম করতে ।" এর পালটা জবাবও দিয়েছেন নওশাদ । তিনি জানান, ওনার হাতে পুলিশ প্রশাসন আছে, ক্যামেরা আছে । সবটা দেখে নেবেন । বড় দাদা যদি চায় গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ সর্বোচ্চ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হবে । মানুষ যাকে রায় দেবে তাকে মেনে নেওয়া হবে ৷
আরও পড়ুন: এক দফাতেই ভোট, স্পর্শকাতর এলাকায় যাবেন পরিদর্শনে; শিলিগুড়িতে জানালেন রাজ্যপাল
এদিন নওশাদ এবং শওকত দুজনেই মেনে নিয়েছেন ভাঙড়ের নির্বাচনে বাইরের লোকের প্রয়োজন হবে না । তাদের যা শক্তি আছে তাতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তা যথেষ্ট । ভাঙড়ে যেভাবে সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়েও দুজনের কাছেই প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছিল এদিন । শওকত মোল্লা এদিন এই প্রসঙ্গে বলেন, "যে কোনও মৃত্যুই আমাদের জন্য দুঃখজনক । তিনি যে দলেরই সদস্য হোন না কেন, কোনও মৃত্যুকেই আমরা সমর্থন করি না । ভাঙড়ে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে একশো শতাংশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন হয় তার জন্য তিনি চেষ্টা করবেন ।"
একইভাবে প্রশ্নের জবাবে নওশাদ বলেন, "মানুষ মারা যাওয়াটাই বেদনাদায়ক । জনগণকে রাজনৈতিক পরিচয়ের বদলে মানুষ পরিচয়ে দেখা উচিত ৷ যার যে দলের আদর্শ নীতি ভালো লাগছে সে সেই দল করবে । এই স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক দেশে রয়েছে । এখানে যে কেউ আক্রান্ত হলে বা মারা গেলে তা ব্যথা দেয় । তবে নওশাদ সিদ্দিকী তলায়-তলায় বিজেপি কি না, প্রশ্নের উত্তরে কোনও জবাব দেননি ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক।
আরও পড়ুন: 'আমি তোমাদেরই লোক', জলপাইগুড়ি সফরে গিয়ে দোকানে চা বানিয়ে পরিবেশন মমতার
এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়েই পঞ্চায়েত নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে বার্তা দিয়েছেন দুই বিধায়ক । এক্ষেত্রে নওশাদ বলেন,"আমরা বাংলার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব । আমাদের লক্ষ্য একটাই থাকবে বাংলার গণতন্ত্রকে কীভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ গণতন্ত্রে রূপান্তরিত করা যায় শান্তি এবং সৌজন্যের রাজনীতির কথাই আমি আমার কর্মীদের বলছি ।" শওকত মোল্লাও ভোটে জনতার রায় মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন ৷