কলকাতা, 8 এপ্রিল: বিশ্বের দরবারে জায়গা করে নিল মুর্শিদাবাদ সিল্ক (Murshidabad Silk)। ইংল্যান্ডের রানির প্ল্যাটিনাম জুবিলি সেলিব্রেশনে (Platinum Jubilee of Elizabeth II) বিভিন্ন পতাকায় ব্যবহৃত হবে মুর্শিদাবাদ সিল্ক ৷
মুর্শিদকুলি খাঁ'র হাত ধরেই ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করে বালুচরী । নানা রংয়ের সুতোর কাজে তখন বালুচরীর মসৃণ আঁচলে ফুটিয়ে তোলা হত নবাবী জীবনযাত্রা । অল্প সময়ের মধ্যেই তা দিল্লির মুঘল শাসকদের অন্দরমহলে জায়গা করে নেয় । ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাটদের আনুকূল্যেই অবিভক্ত বাংলায় রেশমশিল্প ব্যাপক বিস্তার লাভ করে । এই সবই জানান দিয়েছে ইতিহাসে । বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা ও ভারতের মালদা ও মুর্শিদাবাদকেই বেঙ্গল সিল্কের প্রধান উৎসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । 'বেঙ্গল সিল্ক' বলতেই তখন বোঝাত রাজশাহী, মালদা ও মুর্শিদাবাদের সিল্ক । বুননের ক্যারিশ্মায় কোনওটায় জমকালো রংয়ের উপর সোনালি কাজ, আবার কোনওটায় আঁচল বেয়ে নেমে আসে রঙিন কলকা । কোনওটায় আবার লতা-পাতা-ঘোড়া-হাতি-ময়ূরের বসবাস - এই হল মুর্শিদাবাদ সিল্কের প্রধান বৈশিষ্ট্য । সব মিলিয়ে এক নবাবী চাল গোটা শাড়িতে ।
ইতিহাস বলে, টিপু সুলতান রেশম চাষের পদ্ধতি, সিল্কের কার্যক্রম ও ব্যবসার কায়দা কানুন হাতে-কলমে শেখার জন্য সুদূর মহীশুর থেকে স্থানীয় তাঁতিদের পাঠিয়েছিলেন অবিভক্ত বাংলায় । বেঙ্গল সিল্কের টানে ভারতবর্ষের অন্য রাজা-মহারাজারাও বাংলায় পাইক-পেয়াদা-পণ্ডিত পাঠিয়ে রেশম চাষে দীক্ষা নিতেন । এই ভাবেই দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে রেশম শিল্প । রেশম শিল্প ঘিরে ইতিহাস অনেক লম্বা। রেশম, সিল্ক এই শব্দগুলি ছাড়া মানব জীবন অচল ।
আরও পড়ুন: Silk Production Center Shifted: বহরমপুরে সরানো হল রেশমগুটি উৎপাদন কেন্দ্র
এবার বাংলার এই মুর্শিদাবাদ সিল্ক পাড়ি দিতে চলেছে সুদূর ইংল্যান্ডে । ওখানকার রানির প্ল্যাটিনাম জুবিলি সেলিব্রেশনে নানারকম ফ্ল্যাগ টাঙানো হবে (Murshidabad Silk to be used for flags in Platinum Jubilee of Elizabeth II)। আর সেই সব ফ্ল্যাগে ব্যবহার করা হবে মুর্শিদাবাদ সিল্ক । এই খবর পাওয়া গেল 'ক্রাফট কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল'-এর প্রেসিডেন্ট শান্তা ঘোষ এবং জেনারেল সেক্রেটারি অঞ্জুম কাটিয়ালের কাছ থেকে ।
মুর্শিদাবাদ সিল্কের দৌড় এখানেই থেমে নেই । ফ্রান্স থেকে এসেছেন লেখিকা ইজাবেল মৌলিন । তিনি সিল্কের উপরে গবেষণাভিত্তিক বই লিখেছেন । বইয়ের নাম 'সিল্কি কালেকশন', যা প্রকাশিত হল অক্সফোর্ড বুক স্টোরে । জাপান, চিনের সিল্কের উপরে লিখেছেন একাধিক গবেষণাভিত্তিক বই । এ বার তিনি হাত দিতে চলেছেন ভারতীয় সিল্কের উপরে । আর তাই তিনি সাহায্য চান 'ক্রাফট কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল'-এর । কাউন্সিলের সঙ্গে তিনি ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছেন ।
প্রেসিডেন্ট অফ 'ক্রাফট কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' শান্তা ঘোষ বলেন, "লেখিকা এক্সপার্টদের সঙ্গে দেখা করতে চান । যাঁরা রেশম বোনেন তাঁদের সঙ্গেও দেখা করতে চান । শুধু সিল্কের রকমফের নয়, লেখিকা অনেক টেকনিক্যাল ইউজ নিয়েও লিখেছেন তাঁর বইতে । তিনি এ বার উদ্যোগ নিয়েছেন ভারতীয় সিল্ক নিয়ে লেখার । আর ভারতীয় সিল্ক মানে সবার আগে মনে আসে মুর্শিদাবাদ সিল্কের নাম । মুর্শিদাবাদ সিল্ক যাঁরা বোনেন মানে তাঁতিদের একটা আন্তর্জাতিক নাম হতে চলেছে এটুকু বলতে পারি । এ আমাদের দেশের সম্মান ।"