কলকাতা, 30 অক্টোবর : রীতিমতো রহস্যজনক খুন । যার এখনও পর্যন্ত কিনারা করতে পারেনি পুলিশ । খুনের পর 24 ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত আটক হয়নি কেউ । তবে মৃত আবদুল রফিকের বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজনকে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে । তবে গোয়েন্দারা একটা বিষয়ে নিশ্চিত লুটের উদ্দেশ্যে এই খুন নয় । খুনের মোটিভ অন্য কিছু । পুলিশ সূত্রে খবর, রফিকের বিবির বক্তব্যে ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে বেশ কিছু অসংগতি ।
গতকাল সন্ধ্যা সাতটা পনেরো নাগাদ জামা-কাপড় নিতে এসে ফ্ল্যাটের দরজা দিয়ে টাটকা রক্ত বেরিয়ে আসতে দেখেন স্থানীয় লন্ড্রির লোক । বিষয়টি সন্দেহজনক থাকায় আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকেদের খবর দেন তিনি । সেই সময় রফিকের বিবি বাড়িতে ছিলেন না । একদিন আগে অর্থাৎ 28 অক্টোবর জাহেদা সেলিম ওরফে নিলু বাবার বাড়িতে গেছিলেন । এলাকাতেই তার বাবার বাড়ি । দ্রুত তাঁকে ফোন করা হলে তিনি এসে দেখতে পান রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন রফিক । পুলিশি তদন্ত বলছে, বিবির সঙ্গে রফিকের শেষবার কথা হয় সন্ধে ছটা নাগাদ । অর্থাৎ, এই খুনের ঘটনা ঘটেছে সন্ধে ছটা থেকে সোয়া সাতটার মধ্যে । মূলত চপার দিয়ে আঘাত করেই এই খুন । একটা সময় বক্সার ছিলেন রফিক । খুনের সময় তিনি আততায়ীকে যথেষ্ট বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন । দেহে পাওয়া গেছে তার চিহ্ন । তাঁর হাতের সামনের দিকে চপারের আঘাতও রয়েছে ।
একটা সময় যথেষ্ট অবস্থাপন্ন ছিল রফিকের পরিবার । তিলজলা রোডে তাঁদের পারিবারিক 60 কাঠা জমি রয়েছে । সেই জমিতে এখন চলছে প্রোমোটিংয়ের কাজ । ওই জমিতে শরিক রয়েছেন 40 জন । রফিকরা চার ভাই । তাঁর বাকি তিন ভাই বাংলাদেশের নাগরিক । তাঁরা সেখানেই থাকেন । প্রোমোটারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ওই 60 কাঠা জমিতে নির্মীয়মাণ বিল্ডিংয়ে একটি করে ফ্ল্যাট এবং নগদ টাকা পেয়েছেন 40 শরিক । ইতিমধ্যেই সেখানে চারটি টাওয়ার তৈরি হয়েছে । বেশিরভাগ শরিক নতুন ফ্ল্যাটে চলে গেছেন । এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়নি পাঁচ নম্বর টাওয়ারটি । সেটি তৈরির কাজ চলছে । তাই যে ফ্ল্যাটে রফিক খুন হয়েছেন সেখানে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন প্রোমোটার ।
64 বছরের রফিক পেশায় অটোচালক । বছর তিনেক আগে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা যান । কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি নীলুকে বিয়ে করেন । তখন নীলুর বয়স 37 । দরিদ্র পরিবারের নীলুর অসমবয়সি বিয়ে দিয়েছিল তাঁর পরিবারের লোকজনই । তাঁদের মধ্যে যে খুব অশান্তি ছিল, তেমনটা বলছেন না প্রায় কেউই ।
গতকাল খুন হওয়া রফিকের ফ্ল্যাটে খোলা ছিল একটি ড্রয়ার । যার তালা ভাঙা ছিল । সেই ড্রয়ারে ছিল প্রায় 7 লাখ টাকা । সেটি একটি ট্রান্সপারেন্ট কনটেইনারে রাখা ছিল । সেখানে ছিল বেশ কিছু সোনার গয়না । তার কিছুই খোয়া যায়নি । ড্রয়ারের পাশে পড়েছিল একটি স্ক্রু ড্রাইভার । প্রাথমিকভাবে দেখলে মনে হবে ওই স্ক্রু ড্রাইভার দিয়েই ভাঙা হয়েছে ড্রয়ারের লক । কিন্তু পুলিশ সূত্রে খবর, ফরেনসিকের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ওই স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে লক ভাঙা হয়নি । অর্থাৎ, তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতেই এই পথ নেওয়া হয়েছে ।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) মুরলীধর শর্মা জানিয়েছেন, দেহটি এমন জায়গায় পড়েছিল, যেখানে খুব পরিচিত কেউ ছাড়া যাওয়া সম্ভব নয় । পাশাপাশি ফ্ল্যাটটির অবস্থান এমন যে, অপরিচিত কেউ এই ঘটনা ঘটালে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল ষোলআনা । সেই সূত্রেই পুলিশ মনে করছে এই ঘটনা ঘটিয়েছে পরিচিত কেউ । সেই সূত্রেই রফিকের আত্মীয়দের জেরা চলছে ।