কলকাতা, 27 অক্টোবর: হেফাজতের নির্দেশ শুনেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন মন্ত্রী ৷ তড়িঘড়ি বিচারকের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ৷ আনা হয় কলকাতা পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স ৷ রেশন বন্টন দুর্নীতিতে জ্যোতিপ্রিয়কে শুক্রবার 11 দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে ব্যাঙ্কশাল আদালত ৷
এদিন মামলার শুনানি শেষে রায়দান পর্ব শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শুনানি চলাকালীন দাঁড়িয়েই ছিলেন তিনি। কিন্তু নির্দেশ শুনে হঠাতই মাথা ঘোরাচ্ছে বলে বসে পড়েন মন্ত্রী। তারপরই মেয়ে ও দাদার কাছে যান তাঁরা। কিছুক্ষণ পরে বমিও করে ফেলেন মন্ত্রী। ইডি'র প্রতিনিধিরা তো বটেই এমনকী বিচারক তনুময় কর্মকার পর্যন্ত মন্ত্রীর কাছে এসে দাঁড়ান। মন্ত্রীর সমর্থকরা ইডির বিরুদ্ধে এমন সময় শ্লোগান তোলেন। ডাকা হয় অ্যাম্বুল্যান্স। মন্ত্রীর মেয়েই দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স ডাকার কথা বলেন এজলাসে।
এদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে শুনানি পর্বে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বলতে শোনা যায়, "আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ জানি না।" যার পালটা বিচারক প্রশ্ন করেন, "আপনাকে শারীরিক ও মানসিক চাপ বা অত্যাচার করা হয়েছিল ?" উত্তরে মন্ত্রী বলেন, "প্রতিদিন একলাখি ডোজের ইনসুলিন চলে আমার ৷" পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয়েছে বলেও জানান জ্যোতিপ্রিয় ৷
ইডি জানায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মত যখন তল্লাশি চালানো হয়েছিল সমস্ত ভিডিয়ো করা হয়েছে। বিচারক বলেন, "অসুস্থ মানুষ ওনাকে বসতে দিন। কোনও সমস্যা নেই। মামলার কপি কি দেওয়া হয়েছে ?" ইডির তরফে জানানো হয়, পিএমএল আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই দুর্নীতিতে মন্ত্রীর মেয়ে ও স্ত্রী যুক্ত রয়েছে বলেও দাবি করে ইডি। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, 2015 সাল থেকে মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিক ও স্ত্রী যুক্ত। এমপিজি রাইস মিল থেকে 100 কেজি, 50 কেজি, 20 কেজি করে চাল খোলা বাজারে বিক্রি করা হত বলেও জানায় ইডি। যার জেরে বিপুর অর্থ লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে মন্ত্রীর আইনজীবীদের অভিযোগ, ইডি গল্প বানিয়ে বলছে। মৌখিক বললে হবে না। তথ্য প্রমাণ কোথায় ? এমন সময়, আদালতে তুমুল হৈ-হট্টগোল, চেঁচামেচিও শুরু হয়। বিচারক বলেন, "দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি আমার কোনও ক্ষমতা নেই।" মন্ত্রীর আইনজীবী সওয়ালে বলেন, "মামলার যে কেস ডায়েরি জমা দেওয়া হয়েছে তাতে অনেক পাতায় সই নেই। আমরা তদন্তে সহযোগিতা করেছি। তাহলে গ্রেফতারের প্রয়োজনীয়তা কী ? একজন অভিযুক্তের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে গ্রেফতার ? গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে টানাপোড়েন চলছে ৷ তিনি শারীরিক ভাবে প্রচণ্ড অসুস্থ।"
আরও পড়ুন: জ্যোতিপ্রিয়র 11 দিনের ইডি হেফাজত, নির্দেশ ব্যাঙ্কশাল কোর্টের
ইডি জানায়, সরকারের একজন পূর্ণ সময়ের মন্ত্রী। তাঁর মেয়ে ও স্ত্রীকে সামনে রেখে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র করছেন মন্ত্রী। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করা হয়েছে। মন্ত্রীর আইনজীবী বলেন, "আমাদের আবেদন তাঁর শরীরের কথা মাথায় রেখে তাঁকে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা করা হোক ৷" এরপরই আদালত নির্দেশে জানায়, কমান্ড হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মেয়ে বাড়ির খাবার নিয়ে যেতে পারবেন। তবে যখন ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করবে সেই সময়ের মধ্যেই যেতে হবে। কমান্ড হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগামী 24 ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। মন্ত্রী এদিন প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে চোখ ছলছল করতে করতে বিচারপতির কাছে কাতর আবেদন করে বলেন, "শরীর প্রচণ্ড অসুস্থ, নিজের প্যান্টের পাজামার দড়ি বাঁধতে পারি না।"