কলকাতা, 12 নভেম্বর: খিদিরপুর ব্রিজ থেকে নামলেই ফ্যান্সি মার্কেট বাস স্টপেজ ৷ এবার রাস্তার বাঁ-দিকে তাকালেই চোখে পড়বে বহু প্রাচীন লোহার ফটক ৷ তার দু'পাশে ইটের থাম ৷ তাতে লেখা রয়েছে বাড়ির ঠিকানা ৷ একটি দোতলা সাদা বাড়ির পাশেই রয়েছে হলুদ রঙের একটি তিনতলা বাড়ি ৷ দুই বাড়িরই ভগ্নপ্রায় দশা ৷ নীচে রয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান ৷ একদিন এই বাড়িতেই থাকতেন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutt) !
কবির জীবনের অনেকগুলো বছর কেটেছিল কলকাতার (Kolkata) এই বাড়িতেই ৷ এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এক সময় এখানে ছাপাখানাও ছিল ৷ সেখান থেকে কবির বেশ কিছু লেখা মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ৷ যে স্থাপত্যের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার ইতিহাস, আজ তার বেহাল দশা ৷ শোনা যাচ্ছে, কয়েক বছর আগেই বাড়িটি কিনে নেন এক ব্যক্তি ৷ তাঁর মৃত্যুর পর বাড়ির মালিকানা গিয়েছে উত্তরসূরিতে হাতে ৷ এত বড় বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন ৷ তাই বাড়িটি ভেঙে বহুতল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের ৷ কিন্তু, তাঁরা চান, মাইকেলের স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ি সংরক্ষণের বন্দোবস্ত করুক প্রশাসন ৷
আরও পড়ুন: ধ্বংসের মুখে রাজা সুবোধ মল্লিকের প্রাসাদ, অসহায় পৌরনিগম
শোনা যায়, একদিন এই বাড়িতেই আড্ডা বসত রাজনারায়ণ বসু, বঙ্কুবিহারী দত্তের মত মহারথীদের ! এখানেই একের পর এক নিজের অমর সৃষ্টির রচনা করেছিলেন কবি ৷ 1831 সালে 20বি কার্ল মার্কস সরনির এই বাড়িতেই বাবা রাজনারায়ণ দত্তের হাত ধরে এসেছিলেন 7 বছরের বালক মধুসূদন ৷ তার আগে এই পরিবারের সদস্যরা থাকতেন সাগরদাঁড়িতে ৷ এমন স্থাপত্য গুঁড়িয়ে বহুতল গড়ার অনুমতি দিতে রাজি নয় কলকাতা পৌরনিগমও (Kolkata Municipal Corporation) ৷ তাছাড়া, হেরিটেজ (Heritage Building) নিয়ম অনুসারে, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের বাড়ির গ্রেড-2 শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত মাইকেলের এই বসত ভিটে ৷ তাই ইচ্ছা হলেই যে কেউ এই বাড়ি ভেঙে দেবে, এমনটা সম্ভবও নয় ৷ ফলে কলকাতা পৌরনিগম বাড়ি ভাঙার অনুমতি দেয়নি ৷ কেএমসি (KMC)-এর এই পদক্ষেপের বিরোধিতায় আদালতে মামলা রুজু করেছে মালিকপক্ষ ৷ সেই মামলা এখনও বিচারাধীন ৷
পৌরনিগমের হেরিটেজ বিষয়ক দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার এই প্রসঙ্গে বলেন, "আমি ঘটনাটা শুনেছি ৷ যত দূর জানি, এ নিয়ে মামলা চলছে ৷ তাই আদালত যা নির্দেশ দেবে, আমরা সেটাই মেনেই চলব ৷ তবে, হেরিটেজ সম্পদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কোনও কাজ কলকাতা পৌরনিগম কাউকে করতে দেবে না ৷ প্রয়োজনে আইনি পথে পদক্ষেপ করা হবে ৷"