কলকাতা, 20 ডিসেম্বর: 'মেহেন্দি লগাকে রাখনা...৷' বিয়ের আসরে খুবই কমন ডিডিএলজি-র এই গান ৷ তবে যুগের নিয়মে এর উলটো কথাই বলতে হচ্ছে হবু কনেদের ৷ 'মেহেন্দি লগাকে না রাখনা...৷' না, রসিকতা নয় ৷ এটা বলার কারণ আইনি বিয়ের নয়া নিয়ম ৷ নতুন নিয়মে আইনি বিয়েতে বায়োমেট্রিক বাধ্যতামূলক ৷ কাজেই হাতে ব্রাাইডাল মেহেন্দি থাকলে আর যাই হোক, আইনি বিয়েটা আর হবে না ৷ কারণ মেহেন্দিতে রাঙানো বুড়ো আঙুলের ছাপ কম্পিউটার প্রত্যাখ্যান করছে ৷ আর এই নিয়ে এখনও সে ভাবে জনসচেতনতা গড়ে না ওঠায়, ধূমধাম করে বিয়ের আয়োজন করেও সামান্য ভুলে বিয়ে ভাঙছে অনেকের ৷
পৌষ মাস পড়েছে । তাই বিবাহ অভিযানে সাময়িক বিরতি । মাঘ মাস পড়লেই ফের শুরু হবে বিয়ের মরশুম । তাই ভাবী কনেরা মাথায় রাখবেন, বিয়ের আগে মেহেন্দি পরতে গেলে বাদ দেবেন বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটি (বুড়ো আঙুল)। কারণ রেজেস্ট্রি ম্যারেজ করতে গেলে লাগে বুড়ো আঙুলের বায়োমেট্রিক ছাপ । আর সেখানেই ঘটছে বিপত্তি । রীতি মেনে হাতে মেহেন্দি পরে রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে কনেদের ৷ কারণ মেহেন্দিতে রাঙানো আঙুলের ছাপ বায়োমেট্রিক গ্রহণ করছে না ৷ ফলে বিয়েটাই সেদিনের জন্য বাতিল করতে হচ্ছে ৷ এরপর যতদিন না হাতের মেহেন্দির রং পুরোপুরি উঠছে, ততদিন সেই বিয়ে আর হচ্ছে না ৷
সম্প্রতি এমনই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বেশ কয়েকজনকে ৷ তাঁদেরই একজন শ্রীরামপুরের প্রিয়া দাস । চলতি বছরের 7 ডিসেম্বর ছিল তাঁর রেজেস্ট্রি ম্যারেজ । আর তাই বড় সাধ করে হবু বরের আবদারে পাঁচ তারিখেই হাতে মেহেন্দি পরেছিলেন তিনি । তবে সেটাই যে তাঁর বিয়ের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে যাবে, তা ঘূণাক্ষরেও বোঝেননি তিনি ও তাঁর পরিবার ৷
সে দিনের হতাশার কথা ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সঙ্গে ভাগ করে নিলেন প্রিয়া । তিনি বলেন, "আমাকে পাঁচ তারিখ রাতে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসার বলেন, মেহেন্দি পরা যাবে না । কিন্তু ততক্ষণে আমার হাতে রঙ ধরে নিয়েছে । আমাকে বলা হয়, রেজিস্ট্রি করতে গেলে বুড়ো আঙুলের মেহেন্দি তুলতেই হবে । আমি তোলার নানারকম চেষ্টা করি । রঙ খুব সামান্য হালকা হয়েছিল ৷ তাই ভেবেছিলাম উনি কিছু উপায় হয়তো বের করবেন । সেজেগুজে পরিবার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে নির্ধারিত দিনে যাই রেজিস্ট্রি অফিসে ৷ রেজিস্ট্রির পর মালাবদল ও আংটি বদল হবে, এমনই কথা ছিল ৷ সব আয়োজন সারা ৷ তবে আমার হবু বরের বায়োমেট্রিক সাপোর্ট করলেও আমারটা করেনি ৷ রেজিস্ট্রার জানান, তাঁর হাত পা বাঁধা ৷ নতুন নিয়মে বায়োমেট্রিক বাধ্যতামূলক ৷ আমার বাড়ির সবার মুখ তখন থমথম করছে ৷ আমার চোখে জল ৷ বিয়েটা হল না ৷ রেজেস্ট্রি ম্যারেজটা পিছিয়ে দিতে হল । হাতের মেহেন্দি উঠলে তবে রেজিস্ট্রি ৷ আমাদের সামাজিক বিয়ে 2025-এ । আমার হবু বরের বাইরে চাকরি । আগে রেজিস্ট্রিটা করে নেওয়ার প্ল্যান ছিল । সবসময় আসতে পারে না কলকাতায় । সামাজিক বিয়ের আগে রেজেস্ট্রিটা আর করতে পারব কি না বলতে পারছি না ।"
প্রিয়ার কথায়, "এখন বেশিরভাগ কনেই বিয়ের আগের দিন হাতে মেহেন্দি পরেন ৷ অনেকের তো সামাজিক বিয়ের দিনই রেজিস্ট্রি হয় ৷ আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই রীতিতে অভ্যস্ত ৷ তাই এতে এত বড় একটা পরিবর্তন আনতে হলে সরকারের উচিত আগে সে বিষয়ে জনসচেতনা গড়ে তোলা ৷"
ইটিভি ভারত এ ব্যাপারে কথা বলেছে মেহেন্দি আর্টিস্ট মান্টি রজকের সঙ্গে । তিনি বলেন, "কয়েকজন এসে বলেছেন, তাঁদের যেন বুড়ো আঙুলে মেহেন্দি না পরাই । কারণ বায়োমেট্রিক ছাপ নিতে অসুবিধা হচ্ছে রেজিস্ট্রির সময়ে । আমরাও এরপর থেকে সতর্ক থাকব । যাকেই পরাব জিজ্ঞেস করে নেব, তাঁদের রেজেস্ট্রি ম্যারেজ আছে কি না । আমাকে রেশন অফিসে গিয়েও এই একই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে ।"
নিয়ম না জানার কারণে রেজিস্ট্রারদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসার বলেন, "মেহেন্দি পরা থাকলে বায়োমেট্রিক ছাপ পড়ছে না । তাতে আইনি বিয়ে করাতে অসুবিধা হচ্ছে । আমাদের গিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে । অনেককে অফিস থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে । ফলে কাজের অসুবিধা হচ্ছে । তাই সরকারি তরফে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে যে, আইনি বিবাহের সময়ে যেন বুড়ো আঙুলে মেহেন্দি পরা না থাকে । আমরা তাই আগে থেকেই বলে দিচ্ছি কনেদের । সাক্ষীর বুড়ো আঙুলে মেহেন্দি থাকলেও চলবে না ।"
সম্প্রতি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন । তিনি এ ব্যাপারে বলেন, "আমি তো সেভাবে মেহেন্দি পরিনি বিয়েতে । তবে, আমাকে আগেই ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসার বলে দিয়েছিলেন, মেহেন্দি না পরার কথা ।"
কথায় আছে, মেহেন্দি রং লায়েগি ৷ তবে আইনি বিয়ের আগে সাবধান ৷ বুড়ো আঙুলে যদি মেহেন্দি পরেন, তাহলে মেহন্দি রং নেহি লায়েগি ৷ সেই মেহেন্দির রং হাতে গাঢ় হলেও তা রঙিন নয়, বরং মলিন করে দেবে বিয়ের আনন্দকে ৷
আরও পড়ুন: