কলকাতা, 24 এপ্রিল : আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী এ রাজ্যে করোনার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি আগামী দিনে অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে ৷ এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করল মেডিকেল কলেজ কলকাতা রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে কী করণীয়, কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, এই সব বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি দাবি করল কলকাতা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের এই সংগঠন ।
মেডিকেল কলেজ কলকাতা রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে শুক্রবার জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে আমরা করোনার সেকেন্ড ওয়েভের মধ্যে রয়েছি । আইসিএমআর-এর বক্তব্য অনুযায়ী আগামী 20 থেকে 25 দিন বর্তমান হারেই সংক্রমণ বাড়বে । এমন যদি হয়, তাহলে অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ হতে চলেছে । গত 24 ঘণ্টায় আমাদের রাজ্যে দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ছিল 12 হাজারের বেশি ৷ এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে সকলের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা ও কম জনসমাগম সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারকে আরও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে ৷
আরও পড়ুন, মে মাসের মাঝামাঝি দেশে 33-35 লাখ পৌঁছাতে পারে সংক্রমণ
এর জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের এই সংগঠনের তরফে বেশ কয়েকটি দাবি পেশ করা হয়েছে । জানানো হয়েছে, এই দাবিগুলি যথাযথ ভাবে পালন করা হলে করোনা মোকাবিলায় অনেকটা শক্ত জমির উপর আমরা দাঁড়াতে পারব । মেডিকেল কলেজ কলকাতা রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের এই দাবিগুলি হল :
- স্বাস্থ্যভবনের হেল্পলাইন নম্বরে (24x7 কার্যকর থাকে) ফোন করে রোগী বা রোগীর পরিজনরা প্রথম চেষ্টায় যেন উত্তর পান ৷ সেইসঙ্গে কোথায় রোগী ভর্তি হবেন তার ব্যবস্থা করতে হবে । এর জন্য ডেডিকেটেড টিমের ব্যবস্থা করতে হবে ৷ তারা এই কাজ করবে ।
- শুধুমাত্র করোনা আক্রান্ত রোগী নয় ৷ সারি রোগীদের ভর্তির ব্যবস্থা অথবা, তাঁরা কোথায় যাবেন, তার ব্যবস্থা সরকারি হেল্পলাইন থেকে করতে হবে ।
- প্রতিটি হাসপাতালের করোনা উইংয়ে স্বাস্থ্যভবনের মাধ্যমে করোনা রোগী ভর্তি হবেন । কিন্তু, প্রতিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে অন্তত 10 শতাংশ বেড রাখতে হবে ৷ যে সব বেড সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এমারজেন্সিতে আসা মূলত করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে । হাসপাতালের অন ডিউটি চিকিৎসকরা ওই সব রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভর্তি করতে পারবেন ।
- প্রতিটি হাসপাতালে ডেডিকেটেড করোনা এবং সারি এমার্জেন্সি প্রয়োজন । এ সব জেনেরাল এমারজেন্সি থেকে আলাদা আইসোলেটেড জায়গায় হবে । এবং, সেখানে অন্তত 10টি অক্সিজেন সাপ্লাই আছে এমন বেড লাগবে ৷ এখানে রোগী ভর্তি বা অন্য হাসপাতালে রেফারের আগে প্রাথমিক অক্সিজেন টুকু পাবেন সংশ্লিষ্ট রোগী ।
- প্রতিটি করোনা রোগী কী অবস্থায় আছেন ৷ তা যাতে বাড়ির লোক প্রতিদিন যথাযথভাবে জানতে পারেন, তার জন্য ডেডিকেটেড টিম ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে । ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সরকারি অর্ডার আছে । তাকে অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে ।
- রোগী রেফারেল ব্যবস্থাকে অত্যন্ত দ্রুত এবং কো-অর্ডিনেটেড হতে হবে ৷ যাতে রোগীদের কোনও হয়রানি না হয় ।
- কোনও হাসপাতালের সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে সুনিশ্চিত করতে হবে ।
- প্রতিটি করোনা টেস্টিং ফেসিলিটিতে আরটি-পিসিআর কিট ও ভিটিএমের সাপ্লাই বাড়াতে হবে ।
- সমস্ত হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ হাসপাতালের জায়গা ব্যবহার করে সেখানে জেনেরাল করোনা ওয়ার্ড বানাতে হবে ।
- স্টেডিয়াম বা বিভিন্ন বড় বিল্ডিংকে সেফ হোম অথবা কোয়ারানটিন সেন্টার হিসাবে ব্যবহার করতে হবে ।
- বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে মূলত খারাপ অবস্থায় থাকা রোগীদের চিকিৎসার কাজে ক্রিটিকাল কেয়ারের ব্যবহার করতে হবে । ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়িয়ে সিসিইউ, আইটিউ, এইচডিইউ-এর বেড প্রস্তুত রাখতে হবে ।
- একই জায়গায় ক্লান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্রমাগত করোনা রোগীদের চিকিৎসায় না ব্যবহার করে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে (ডাক্তার, নার্স, গ্রুপ ডি স্টাফ) সেন্ট্রাল পুল বানিয়ে সমানভাবে সবাইকে কাজ ভাগ করে দিতে হবে । না হলে রোগী পরিষেবা ব্যাহত হবে ।
- রাজ্যে মজুত অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে হবে । অক্সিজেন উৎপাদন বাড়াতে হবে । বেআইনিভাবে অক্সিজেন মজুত করে রাখা হলে, তা কড়াভাবে আটকাতে হবে ।
- সমস্ত মানুষকে সরকারি উদ্যোগে বিনামূল্যে টিকাকরণের ব্যবস্থা করতে হবে ।