কলকাতা, 20 অগস্ট: চারটে রুট ছাড়া কলকাতার অন্য কোথাও ঐতিহ্যবাহী ট্রাম আর দেখা যায় না। ওভারহেড বিদ্যুতের তারও খুলে ফেলা হয়েছে। আর তার ফলেই বন্ধ ট্রাম চলাচল। শুধু স্মৃতি হিসেবে পড়ে আছে সেই সব রুটের ট্রেন লাইনগুলো। তা বর্তমানে পথ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করে প্রশাসনের একটা অংশ। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে নতুন উদ্যোগ নিতে চান কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে এমন সমস্ত রুটে ট্রাম লাইন তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন তিলোত্তমার মহানাগরিক তথা রাজ্য মন্ত্রিসভার এই প্রবীণ সদস্য।
বর্তমানে টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়াহাট, এসপ্ল্যানেড-বালিগঞ্জ, এসপ্ল্যানেড থেকে শ্যামবাজার রুটে ট্রাম চলছে । পাশাপাশি এসপ্ল্যানেড থেকে খিদিরপুর রুটে ট্রাম লাইনের তার মেরামতির জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে । এই চারটি রুটের বাইরে শহরের অন্যত্র কোথাও ট্রাম চলছে না। কিন্তু অতীতে শহরের আরও বেশ কিছু রাস্তায় ট্রাম চলত। এখন কার্যত অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা ট্রাম লাইন বহন করছে ফেলে আসা দিনের সেই সোনালী স্মৃতি।
শনিবার কলকাতা পৌরনিগমের মাসিক অধিবেশনে তৃণমূল কাউন্সিলর মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় বেলগাছিয়া থেকে আরজিকরের দিকে ট্রাম লাইনের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । তিনি দাবি করেন, এই লাইনে ওভারহেড তার নেই । ট্রাম চলে না । কিন্তু লাইনগুলো থাকায় মাঝেমধ্যেই বিপত্তি দেখা দেয়। বাইক-সাইকেল লাইনে পড়লেই উলটে যায় । ছিটকে পড়ে বিভিন্ন দিক থেকে আসা চলন্ত গাড়ির মুখে। এর ফলে অনেকেই আহত হন। প্রাণহানীর আশঙ্কাও তৈরি হয়।
কাউন্সিলরের কথার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "ট্রাম কলকাতার হেরিটেজ । সেই ঐতিহ্য বজায় রাখা প্রয়োজন । কিন্তু যেখানে ইতিমধ্যেই ট্রাম চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেখানে লাইনগুলি তুলে দেওয়া দরকার। অনেক জায়গায় লাইনের উপর পিচের প্রলেপ পড়ে গিয়েছে। শহরের বেশ কিছু রাস্তা রয়েছে, যেগুলি অপরিসর সেখানে ট্রাম লাইনের জন্য দুর্ঘটনাও ঘটছে মাঝেমধ্যে। তাই পরিবহণ দফতরকে আমাদের পরামর্শ, এই চারটি রুট বাদে অন্যত্র ট্রাম লাইন রাখার প্রয়োজন নেই। আদালতে এই সংক্রান্ত একটি মামলা চলছে । বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরুক পরিবহণ দফতর ৷"
মেয়রের এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ট্রাম প্রেমীদের মন খারাপ করে দেবে। একেই দূষণে জর্জরিত শহরে পরিবেশবান্ধব ট্রাম বন্ধ হওয়া নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে । তার উপর যেটুকু লাইন আছে আন্দোলন ও আদালতের চাপে যদি সেটাও তুলে ফেলা হয় তাহলে শহরের গর্বের ইতিহাসের আরও কয়েকটি অধ্যায় যে বন্ধ হয়ে যাবে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটাই এখন দেখার।
আরও পড়ুন : পরাধীনতার শিকল ভেঙে 77 বছরের স্বাধীনতা, কলকাতার ট্রাম দেখেছে সবটাই