কলকাতা, 8 অগস্ট: প্রতি বর্ষার মরশুমেই কলকাতায় মশাবাহিত রোগের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে । এবার বর্ষার শুরুতেই এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে । পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ক্ষণিকের হালকা বৃষ্টি বিপদ ডেকে আনছে । পাশাপাশি দীর্ঘদিন বন্ধ ও পরিত্যক্ত বাড়ি এবং ফাঁকা জমিতে জমা জল মশাবাহিত রোগের বাড়বাড়ন্তের মূল কারণ । তবে কলকাতা পৌর আইনে 546 ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, কেউ যদি এমন কিছু করে যাতে জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর পরিবেশ তৈরি হয় বা মশা বৃদ্ধি পায় যার জেরে জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয় সেক্ষেত্রে প্রথমে নোটিশ দেওয়া হবে ৷ এরপর তা না মানলে পৌরনিগম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ঘটনায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে(mayor firhad hakim ordered to take strict measures for prevention of mosquito borne diseases)।
কিছুদিন আগেই কালীঘাটের 83 নম্বর ওয়ার্ডের মহিম হালদার স্ট্রিটে এমন তিন-চারটি তালাবন্ধ পরিত্যক্ত বাড়ির খোঁজ মিলেছিল । সেখানে বাড়ি বন্ধ থাকায় পরিষ্কার করতে কিংবা ডেঙ্গু মশার জন্মনিধনে জীবাণুনাশক ছড়াতে পারেননি স্বাস্থ্যকর্মীরা ।
আরও পড়ুন : বিশ্ব মশা দিবস : সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাণী !
শহর জুড়ে এমন অনেক বাড়ি আছে । আবার বহু খোলা জমি আছে যেখানে দিনের পর দিন আবর্জনার স্তুপ হয়ে থাকছে । আর এই বাড়ি বা জমিতে বৃষ্টি হলে একাধিক পকেটে জল জমেছে । সেখানে আদর্শ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে ডেঙ্গু মশার লার্ভা জন্মানোর । আবার অপরিষ্কার জমা জলে জন্মাচ্ছে ম্যালেরিয়া মশা । পৌর আইনে 546 নম্বর ধারা অনুসারে, এই ক্ষেত্রে প্রথমে মালিককে নোটিশ পাঠানো হয় । এরপর তিনি তা না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ৷ সেই ক্ষমতাবলে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকের অনুমতি ছাড়াই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তালা ভেঙে পরিত্যক্ত বা শরিকি জটে থাকা বাড়িতে ঢুকতে পারবে । সেক্ষেত্রে স্থানীয় থানাকে আগে থেকে জানাতে হয় । ওই পাড়ায় অন্তত দু’জন পরিচিত বা বিশিষ্ট মানুষকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সঙ্গে রাখতে হয় । থাকে জঞ্জাল সাফাই ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনও ।
আরও পড়ুন : মশার মিলনে হারবে ডেঙ্গি-চিকুনগুনিয়া, বিশেষ প্রযুক্তি আইসিএমআর-ভিসিআরসির
কিন্তু এমন আইন থাকলেও হাতগুটিয়ে থাকে পৌরনিগম । বিরোধী দলের কাউন্সিলরের কথায়, ভোট ব্যাঙ্ক বড় বালায় । তাই পরিস্থিতি যদি খারাপ হয় তাই জেনে বুঝে নরম মনোভাব দেখায় কর্তৃপক্ষ । কর্মী আধিকারিকদের তো হাত পা বাঁধা । তাদের উপরতলা যেমন নির্দেশ দেয় তেমনভাবেই কাজ করেন ।
তবে এক আধিকারিকের দাবি, এই আইনি বলে আমরা কোনও পদক্ষেপ করি না এমন নয় । পদক্ষেপ নেওয়া হয় তবে সংখ্যাটা খুব কম ।
এই বিষয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট জানিয়েছেন, এবার এই আইনকে কাজে লাগিয়ে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । কোনও বাড়ি এমন তালা বন্ধ থাকলে তালা ভেঙে ঢুকবে ভেক্টর কন্ট্রোল কর্মীরা । ফাঁকা জমি আবর্জনা সাফ করবে পৌরনিগম । সেই খরচ ওই জমির করের বিলে যুক্ত করা হবে । সেই টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেই মেটাতে হবে । না হলে সময় থাকতে নিজেই পরিষ্কার করে রাখবেন ।
আরও পড়ুন : কলকাতায় ডেঙ্গু রুখতে নিজেরা সতর্ক হোন, বার্তা চিকিৎসকদের