কলকাতা, 24 মে : কেটেছে 5 দিন । নেমেছে সেনা । আমফান ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের পর বহু এলাকাতেই বিদ্যুৎ, জল পরিষেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে । তবুও, এখনও জলন্ত প্রদীপের নীচে থাকা অন্ধকারের মতো অবস্থায় রয়েছে একাধিক এলাকা । যেমন, উত্তর 24 পরগনা জেলার রাজারহাটের নারায়ণপুর এলাকা । অন্যান্য জায়গার মতো ঝড়ের দিন থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না এখানে । তারপরের দিন দুপুর থেকে সন্ধের মধ্যে বেশিরভাগ জায়গাতেই বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যায় । কিন্তু, গোটা এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও 5 দিন ধরে অন্ধকারেই রয়েছেন বহু পরিবার । আবার, ঝড়ে অনেক টালি, অ্যাজবেস্টসের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । গাছ পড়ে গেছে । কিন্তু, লোকের অভাবে এখনও সেই গাছ সরিয়ে উঠতে পারেননি বাসিন্দারা । সবমিলিয়ে দুর্ভোগ সহ্য করেই দিন কাটছে তাঁদের ।
আমফানের তাণ্ডবের পর কেটে গেছে 5 দিন । এখনও তছনছ হয়ে যাওয়া এলাকাগুলি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। তার ফলও মিলেছে । ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন স্বাভাবিক করা হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা । কিন্তু, তারপরও রাজারহাটের নারায়ণপুরের দেবীপার্ক এলাকায় 5 দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়া দিন কাটছে একাধিক পরিবারের । কারণ, ঝড়ের দাপটে ভেঙে গেছে ইলেকট্রিক পোল । যা ঠিক করার আবেদন একাধিকবার প্রশাসন ও বিদ্যুৎ দপ্তরে করা হলেও সাড়া মেলেনি । ফলে, অন্ধকারেই দিন-রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা । বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় জলের সমস্যাও হচ্ছে । যোগাযোগ করতে পারছেন না অন্য জায়গায় থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে । দুর্বিসহভাবে দিন কাটছে ওই সব পরিবারের ।
দেবীপার্কের এক বাসিন্দা সীমা ধর বলেন, " আমাদের এখানে ইলেকট্রিকের পোল পড়ে গেছে ৷ গাছ পড়েছে । এমনভাবে পড়েছে যে বাড়ি প্রায় ভাঙার মতো অবস্থা । জলের ট্যাঙ্ক উড়ে গেছে । বাথরুমের টিনের চাল উড়ে গেছে । জলের খুব সমস্যা হচ্ছে । এখনও ইলেকট্রিক নেই । কানেকশন করতে পারছে না । কালকে রাতে পাড়া প্রতিবেশি, কাউন্সিলর এসে তারগুলো তুলে দিয়েছে । কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও কানেকশন নেই । আজ 5 দিন একদম অন্ধকারে আছি । ঘুমাতে পারছি না । জল নেই । জল তুলতে পারছি না ৷ খাবার জল নেই । মোবাইল চার্জ করতে পারছি না । আমার ছেলে-মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না । আমরা স্বামী-স্ত্রী একা থাকি । আমি হাঁটতে পারি না । জল আনতে গেলেও বিশাল লাইন । খুব খারাপ অবস্থায় আছি । "
অন্য আর এক বাসিন্দা শিল্পী ভট্টাচার্য বলেন, " সেদিনের ঝড়ে অনেকের বাড়ির চাল উড়ে গেছে ৷ গাছ পড়ে গেছে । কারও ডিশ অ্যান্টেনা পড়ে গেছে । ইলেকট্রিকের পোল তার সমেত একটা বাড়ির উপর পড়ে গেছিল । বাড়ির লোকেরা আসা-যাওয়া করতে পারছিল না । এখানে অনেকের বাড়িতেই বিদ্যুৎ নেই । মানুষ পাগল হয়ে যাচ্ছে । বিশেষত, জলের জন্য । অনেকে অসুস্থ আছেন । তাঁদের খুবই কষ্ট হচ্ছে । গতকাল কয়েকটা বাড়িতে বিদ্যুৎ এলেও তা খুবই লো-ভোল্টেজ । তাতে কোনও কাজ হচ্ছে না । মোবাইল নেটওয়ার্কের খুব সমস্যা হচ্ছে । "
নারায়ণপুরের এক বাসিন্দা বিকাশ চন্দ্র বলেন, " আমার একটা টালির বাড়ি আছে । সেটাতে গাছ পড়ে ভেঙেছে । সেখানে আর থাকা সম্ভব নয় । শুধু বাথরুমের ছাদ ঢালাই করা ছিল বলে বেঁচে গেছি । সেখানে গাছটা থেমে গেছিল । না হলে সবাই চাপা পড়ে মারা যেত । আমার আর একটা দোতালা বাড়ির উপর মেহগনি গাছ উপড়ে পড়ে রয়েছে এখনও । কাটা যাচ্ছে না । সবাই ভয় পাচ্ছে যদি কাটতে গিয়ে বাড়িটা ভেঙে যায় । " বিকাশ চন্দ্রের বাড়ির পাশেই আর একটি টালির চালের কারখানা ভেঙে গেছে গাছ পড়ে । তবে, কোরোনার কারণে কারখানার কর্মচারীরা বাড়ি চলে যাওয়ায় একদিক থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে বলে মনে করছেন কারখানার মালিক । অন্য এক বাসিন্দা পূরবী ঘোষ বলেন, " ওইদিন ঝড়ে গাছ পড়ে গেছে । সেই গাছ পড়ে কারখানার উপর পড়ে টালির চাল ভেঙে গেছে । বিদ্যুৎ ছিল না । গতকাল এসেছে । মোবাইলে নেটওয়ার্ক তো নেই । "
20 মের আমফানের তাণ্ডবের অভিজ্ঞতা এখনও ভুলতে পারেনি মানুষ । সবার মত, আর যেন জীবনে এই ধরনের ঝড় না দেখতে হয় তাঁদের । শিল্পী ভট্টাচার্য বলেন, " সেই অভিজ্ঞতা স্বপ্নেও ভাবা যায় না । আশা করি আমাদের পরের সাত জন্মেও যেন এই রকম ঝড় না দেখতে হয় । মারাত্মক ঝড় ছিল । আমরা ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দেখলাম । এত ঝড় যে কোনও মানুষ থাকলে তাকে যে কোথায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলত তা ভাববার বাইরে । বিশাল ঝড় । তা মুখে বর্ণনা করা সম্ভব হবে না । ভীষণ ভয় লাগছিল । এটাই জীবনের প্রথম এই রকম ঝড় ৷ আশা করি এটাই শেষ ঝড় হবে । " অন্য আরেক বাসিন্দা পলি দাস বলেন, " ঝড়টা যা হল যেন জীবনে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল । "
পূরবী ঘোষ বলেন, " ওইদিনের অভিজ্ঞতা বলার মত নয় । এ যে কী জিনিস দেখলাম । প্রত্যেকটা গাছ পড়া আমি দেখেছি । পাশের বাড়িতে একটা বাদাম গাছ ভেঙে পড়ে । ওরা তখন বাড়িতে ছিল । খুবই ভয়াবহ অবস্থা ছিল । " সুনীতা সিং বলেন, " খুব ভয় করছিল । ঝড়ে বাড়ির উপর গাছ পড়ছিল । খুব ভয় করছিল বাড়িটা না ভেঙে যায় ৷ আমরা চাপা না পড়ে যাই । বাচ্চা নিয়ে খুবই ভয়ে ছিলাম । "