কলকাতা, 14 অক্টোবর: মহালয়ার ভোরের আলো ফুটতে না-ফুটতেই বাঙালির আবেগ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহালয়া শোনা যেন দুর্গাপুজোর সূচনার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আজ মহালয়া, হাতে আর মাত্রে ক'টা দিন ৷ ভোর 4টে'তেই রেডিয়োর সামনে বসে পড়েন। কেউ টিভিতে মহালয়া দেখেন, কেউবা স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের যুগে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া শোনেন ৷ বাঙালির কাছে এ যেন এক নস্ট্যালজিয়া। এই ভোর থেকেই যেন পুজোর শুরু হয়ে যায়। পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, শুরু হয় দেবীপক্ষ। এবারে মানিকতলা চালতা বাগান সর্বজনীনের প্রয়াস 'স্পর্শ' ৷
প্রতিটা স্পর্শেই উৎপন্ন হয় শব্দের। আর তার থেকে মানুষের মনে তৈরি হয় অনুভূতি। বাংলায় লোক শিল্পের একটা মাধুর্য আছে। সেই হারিয়ে যাওয়া লোক বাদ্যের সুর ছড়াবে চালতা বাগান সর্বজনীন। এবার 79 বছরে এই পুজোর বিষয় ভাবনা হল 'স্পর্শ'। শিল্পী শঙ্কর পাল এই বিষয় ভাবনাকে রূপ দিচ্ছেন। প্রতিমা তৈরি করছেন সুবল পাল।
স্পর্শের অনুভূতি যে কতটা ঐশ্বরিক তা মানবজাতি বুঝেছে বারেবারেই। দৈনন্দিন জীবনযাপন থেকে আচারবিচার জুড়ে রয়েছে স্পর্শ-শব্দ-শব্দ-স্পর্শ। চোখ রাখলেই দেখা যায়, আমাদের বাংলার লোকসংস্কৃতি জুড়ে রয়েছে প্রকৃতির বন্দনা। অপরদিকে 'মা' মানেই প্রকৃতি। মায়ের কোলে শিশুর যে শান্তি তেমন প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া বাদ্যযন্ত্র মঙ্গলধ্বনি হয়ে পৌঁছয় মা'য়ের বন্দনায়। ঢাকের শব্দ শুনে মায়ের আগমন ও কৈলাসে ফেরার সুরের তফাৎ বোঝা যায় ৷ তাদের সেই শব্দ মনে অনুভূতি তৈরি করে আগমনীর আনন্দের ও বিসর্জনের বিষাদের। সেই শব্দের যাদু আগমনীর মর্ত্যে আগমনকে আরও সুদৃঢ় করে তোলে ৷ নিজেদের শিল্প-কীর্তির মাধ্যমে এই বিষয়টিকেই সামনে রাখছে চালতা বাগান ৷ যেখানে হারিয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্র দিয়েই সেজে উঠবে মণ্ডপ ৷
শিল্পী শঙ্কর পাল বলেন, "আজকের দিনে লোকশিল্পের বাদ্যযন্ত্র ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে, বিলুপ্তির পথে। এই লোকশিল্পের বাদ্যযন্ত্রের সুর আধুনিক যন্ত্রে শুনি কিন্তু সেই আসল যন্ত্রের দেখা মেলে না। এ যুগের ছেলে, মেয়েরা খমক, ব্যনা, কর্তাল, খোল এসব চেনে না। বাউল সম্প্রদায়ের গান-বাজনার একতারা, দোতারা এইসব যন্ত্র ও তার থেকে সৃষ্ট শব্দ এই প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করানো হবে। যাহা হইতে ঘর্ষণ, তাহা হইতেই শব্দ। সত্যিই ভাবুন তো শব্দ আমাদের কতটাজুড়ে।" এদিকে এহেন ভাবনায় ব্রতী চালতাবাগান সর্বজনীনের এবারের প্রয়াস 'স্পর্শ'।
আরও পড়ুন: পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের শুরু, তিল-জলদানের মাধ্যমে তর্পণ রাজ্যজুড়ে