কলকাতা, 22 ফেব্রুয়ারি : কৃষ্ণা বসুর প্রয়াণে টুইটে শোক প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পরে হাসপাতাল থেকে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী । শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে কৃষ্ণা বসুর দুই ছেলে সুগত ও সুমন্তকে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি । কৃষ্ণা বসু ও শিশির বসুর স্মৃতিচারণা করতে করতে সুগত ও সুমন্ত-র পিতৃ-মাতৃভক্তি নিয়ে মন্তব্য করেন তিনি । পাশাপাশি জানান, নেতাজি ভবনের যাবতীয় দায়িত্ব এখন থেকে তাঁদেরই ।
বেশ কয়েকদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন যাদবপুরের প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসু । ভরতি ছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে । গতকাল রাতে ক্রমশ তাঁর অবস্থার অবনতি হয় । আজ সকাল 10টা 20 মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । প্রাক্তন এই সাংসদের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন সমাজসেবী থেকে শিক্ষাবিদ । শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও । কৃষ্ণা বসুকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ''কৃষ্ণা দি নিজে একজন অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ ছিলেন । রাজনৈতিক চেতনা তাঁর মধ্যে থাকবে এটা স্বাভাবিক । কারণ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের যে শেষ যাত্রা তার সাক্ষী ছিলেন শিশির বোস ।''
কৃষ্ণা বসুর মৃত্যু নিয়ে বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''হঠাৎ করেই কৃষ্ণা দি অসুস্থ হয়ে পড়েন । এই 26 ডিসেম্বর ওঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে । আমরা প্রতি বছর এই দিন কেক কাটতাম । কৃষ্ণা দিও আমাদের ভালোবাসতেন । আমরাও কৃষ্ণা দিকে ভালোবাসতাম । শিশির দা চলে যাওয়ার আগে এবং পরে বসু পরিবারের যে ঐতিহ্য, ইতিহাস সবটাই ধরে রেখেছিলেন উনি । উনি চলে যাওয়াতে নেতাজি ভবন থেকে শুরু করে, নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বসুর শেষ অধ্যায় দেখাশোনা এবার নিশ্চয়ই সুগত ও সুমন্ত দেখবে । তারা তো মা'কে হারিয়েছে, আমরা হারালাম আমাদের অভিভাবককে । বাংলার শিক্ষা জগতের একটা বড়া অধ্যায় শেষ হল । কৃষ্ণা দি নিজেও সাংসদ ছিলেন তিনবারের । এছাড়াও অনেক সমাজ সেবামূলক কাজ তিনি করতেন । সঙ্গে নেতাজি ভবনের দেখাশোনাও করতেন । তার চলে যাওয়াটা একটা বড় শূন্যস্থান । কিন্তু কিছু করার নেই । এটাই বাস্তব যে অনেক কিছু না চাইলেও মেনে নিতে হয় । এটাই জীবন । কখনও কখনও জীবন স্তব্ধ হয়ে যায় । আপনারা তখন বাকরুদ্ধ হয়ে যান । তিনি নিজে খুব অ্যাকটিভ ছিলেন ।''
কৃষ্ণা বসু অধ্যাপনা করতেন প্রথম থেকেই । রাজনৈতিক পরিবারে থাকলেও রাজনীতিতে কোনওদিনই সেভাবে সক্রিয় ছিলেন না । হঠাৎই 1996 সালে তৃণমূলের টিকিটে যাদবপুর লোকসভা থেকে লড়েন । জিতেও যান । তারপর থেকে তিন বার । তাঁর ছেলে সুগত বসুকেও তৃণমূলেই টিকিট দেন মমতা । সেদিক থেকে দেখতে গেলে মমতা ও বসু পরিবারের সম্পর্ক বেশ পুরোনোই । আজও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণায় সেকথা কিছুটা হলেও উঠে এল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুগত বসু ও সুমন্ত বসুকে কথা বলতে গিয়ে বললেন, আমি সম্মান জানাচ্ছি সুগত ও সুমন্তকে । ওঁরা পালা করে বাবা- মা'র সঙ্গে সময় কাটাতেন । এমন পিতৃ-মাতৃ ভক্তি আমি কমই দেখেছি । সুগত হার্ভার্ডে আছে । সুমন্ত লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকসে । আমি ওদের বলেছি তোমরা একটু চলে আসো । কারণ এখন একটু বেশি দায়িত্ব বেড়ে গেল । বাবা- মা চলে যাওয়ার পর নেতাজি ভবনের ইতিহাস-ঐতিহ্যকেও তো ধরে রাখতে হবে । আর ওঁরা থাকলে অন্তত এই ইতিহাসটা রক্ষা পাবে । উনি বেঁচে থাকবেন ওঁর কাজের মধ্যে দিয়ে ।
সব শেষে আজই কৃষ্ণা বসুর শেষকৃত্যের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী । বলেন, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কৃষ্ণাদির মরদেহ এখান থেকে বেরোবে । তারপর রাজ্য সরকার তাঁকে স্টেট অনার দেবে এবং গান স্যালুটের মধ্যে দিয়ে আমরা তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে চাই । কৃষ্ণাদি বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে ।