কলকাতা, 17 জানুয়ারি: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চাই, এই দাবিতে আরও একবার সরব হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । মঙ্গলবার কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই দাবিতে সরব হয়েছেন তিনি । এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি তুলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিচার ব্যবস্থার কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করছে । এটাই নতুন পরিকল্পনা কেন্দ্রের বলে দাবি মমতার ।
অতীতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে বিচার বিভাগের (Judiciary) স্বাধীনতা নিয়ে বক্তব্য শোনা গিয়েছে । তিনি এও জানিয়েছেন, বিচারের বাণী যেন নীরবে নিভৃতে না কাঁদে । এদিন হাসিমারা যাওয়ার পথে অনেকটা হালকা মেজাজেই ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । সেই সময় সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নে কলেজিয়াম বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলে কেন্দ্রের বিরোধিতা করলেন তিনি ।
প্রসঙ্গত, এদিন সাংবাদিকদের তরফ থেকে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়ামের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয় । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে আমার লিগাল সেল বা আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা না করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে যে কথা বলতে পারি, তা হল আমরা বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে । কেন্দ্রের বিচারপতি নিয়োগের কলেজিয়ামে তাদের প্রতিনিধিত্বের কথা বলছে ৷ এর পেছনে তাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে ।’’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি তোলেন, বিচারপতিদের কলেজিয়ামের ক্ষেত্রে যদি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিত্ব থাকতে পারে ৷ তাহলে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব কেন থাকবে না । কিন্তু এর চূড়ান্ত ফলাফল কী হতে চলেছে ! এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আপোস করা হবে । সেটাই চাইছেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ।
এদিন তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, গণতন্ত্রে বিচার বিভাগের গুরুত্ব অপরিসীম । সাধারণ মানুষ তাদের উপর ভরসা করে ৷ এখানে হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয় । তিনি তার দলের পক্ষ থেকেও জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বদাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছে । অতএব তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) বিচার বিভাগের উপর 100 শতাংশ আস্থা রাখছে । গণতন্ত্রে বিচারালয় মন্দিরের মতো । মানুষকে বিচার পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তারাই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী । এক্ষেত্রে কোনও আপোস গ্রহণযোগ্য নয় ।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিচার ব্যবস্থায় শাসক ঘনিষ্ঠদের ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রবণতা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন । তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদের ঘনিষ্ঠ হলেই দ্রুত বিচারপতিদের তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হবে । আর অন্যথায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হবে । এই প্রবণতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় ।
এক্ষেত্রে আশঙ্কার সুরেই তিনি বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্র এই মুহূর্তে সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । এই অবস্থায় আমাদের ভরসার স্থল হল বিচারালয় । আমরা তার উপর সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস রাখি । অতএব এই বিচার বিভাগের উপর কারও হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয় ।’’
কলেজিয়াম বিতর্ক: দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতি এবং অন্যান্য উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয় কলেজিয়াম । দেশের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের 4 প্রবীণ বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হয় কলেজিয়াম । কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে এই কলেজিয়ামে থাকুক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিত্ব । গতকালই এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে চিঠি লিখলেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু । এই চিঠিতে বলা হয়েছে, কলেজিয়াম ব্যবস্থায় কেন্দ্রের প্রতিনিধিকেও যুক্ত করা উচিত ।
প্রসঙ্গত, এই বিতর্কে কেন্দ্রীয় অবস্থানের বিরোধিতা করে আগেই সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস (Congress) । কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার আসলে এসবের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে পুরোপুরি কব্জা করতে চাইছে । কখনও উপরাষ্ট্রপতির মাধ্যমে, আবার কখনও আইনমন্ত্রীর মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে, আসলে কেন্দ্র বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা করছে । এই প্রবীণ সাংসদের মতে, বিচার ব্যবস্থার কাছে এই ধরনের হস্তক্ষেপ আদতে বিষের ট্যাবলেটের মতো। যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় ।
উল্লেখ্য, এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য রাখলেন, তাতে বলাই যায় তার বক্তব্য কংগ্রেসের মতকেই সমর্থন । এখন দেখার জাতীয় ক্ষেত্রে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের এই অবস্থান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হতে পারে ।
আরও পড়ুন: বুলডোজারের পরিবর্তে তোমাদের ক্লোজার হবে, বিজেপিকে তোপ মমতার