কলকাতা, 4 জুন: অ্যান্টি কলিসন সিস্টেম নিয়ে ফের একবার সরব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শনিবারের পর রবিবারও মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট দাবি করেন, অ্যান্টি কলিসন সিস্টেম ব্যবহার করা হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। যেখানে পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়েছে এই সিস্টেম, সেখানে কেন করমণ্ডলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনে তা ব্যবহার করা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ সেইসঙ্গে, তড়িঘড়ি রেলের তরফ থেকে দুর্ঘটনার কারণ জানা গিয়েছে বলে যে তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা হচ্ছে তাতেও সম্মত নন মুখ্যমন্ত্রী ৷ রেল দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে যে বিষয়গুলিকে বলা হচ্ছে, এখনই তাকে ধ্রুব সত্য হিসাবে মানতে রাজি নন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার বালাসোরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ সেখানে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে পাশে নিয়েই একের পর এক রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ এমনকী একসময় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে মৃতদের তালিকা নিয়ে মতবিরোধেও জড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে ৷ আর রবিবার ফের একবার সেই বিষয়েই সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তিনি স্পষ্টতই অভিযোগ করলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে ৷ এরই সঙ্গে, রেলের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি ৷ এক্ষেত্রে যেভাবে তড়িঘড়ি রেল দুর্ঘটনার কারণ জানা গিয়েছে বলে রেলের তরফে দাবি করা হচ্ছে, তাতেও যথেষ্ট অসন্তুষ্ট তিনি।
প্রসঙ্গত, রেল দুর্ঘটনা ঘটার পর তার কারণ খোঁজার প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ বলেই মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। রেল দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের তদন্ত বা অন্যান্য তদন্ত রিপোর্টের পরই সম্পূর্ণ বিষয়টি বোঝা যায়। কিন্তু এই রেল দুর্ঘটনার পর যেভাবে তড়িঘড়ি কারণ সামনে আনার চেষ্টা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যদিও এর পিছনে কোনও নাশকতা বা অন্য কোনও বিষয়কে আলাদা করে এদিন তুলে ধরেননি মুখ্যমন্ত্রী। বরং তিনি দায়ী করেছেন, রেলের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়াকেই। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এত বড় রেল দুর্ঘটনা হল। এর জন্য আপনারা ক্ষমা চাইতে পারতেন। কারণ এই ঘটনা ঘটেছে সম্পূর্ণভাবে রেলের অবহেলার জন্য। যে যেমন খুশি চলছে। তাদের মধ্যে কোনও সমন্বয় ছিল না। সমন্বয় থাকলে মাত্র আট-দশ মিনিটের ব্যবধানে দুটি ট্রেনের এভাবে সংঘর্ষ ঘটতে পারে না।"
আরও পড়ুন: রেলকে বেচে দেওয়ার ছক কষছে কেন্দ্র, বালাসোর বিপর্যয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত মমতা
এর সঙ্গেই, মমতা বলেন, "ড্রাইভার তো বেঁচে ছিলেন। তিনি কেন ট্রেন থামানোর চেষ্টা করলেন না? এক্ষেত্রে ড্রাইভার বেঁচে গেলেন, মারা গেলেন যাত্রীরা।" এদিন রেল দুর্ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবিও করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তদন্ত সঠিক পথে এগোচ্ছে না-বলেও মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন এই ঘটনায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেও নিশানা করেছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীর নাম না-করে মমতা বলেন, "কখনও নিজের নামে স্টেডিয়াম, কখনও সংসদ ভবন অথবা অন্য ক্ষেত্রেই নিজের প্রচার করার জন্য যে খরচা আপনারা করছেন, সেই খরচা রেলের জন্য করা হচ্ছে না। গরিব মানুষ মরে যাচ্ছে আর বিজেপি তাদের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এটাই এখন পরিস্থিতি।" তবে এই রেল দুর্ঘটনা নিয়ে তিনি রাজনীতি চান না-বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।