কলকাতা, 4 সেপ্টেম্বর: আবাসন শিল্পে বাংলা এগিয়ে রয়েছে ৷ গত 12 বছরে এই শিল্পে পশ্চিমবঙ্গে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে ৷ সোমবার এমনই কথা শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর গলায় ৷ এ দিন কলকাতার ধনধান্যে অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয়েছিল 'স্টেটকন-২০২৩' এর ৷ সেখানেই উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কথা বলেন ৷ এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আবাসন শিল্পে অগ্রগতি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক ।’’
এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে নগরায়নের হার ভারতের জাতীয় গড়ের থেকে বেশি । এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছরগুলিতে রাজ্যে নগরায়নের হার বর্তমান সময়ের তুলনায় 36 শতাংশের থেকে বেড়ে 42 শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে । ফলে বর্তমান সময়ের তুলনায় রাজ্যের শহরাঞ্চলে অতিরিক্ত 80 লক্ষ মানুষের বাস বেড়ে যাবে । এই নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘সমীক্ষা বলছে দেশের মধ্যে কলকাতায় রিয়েল এস্টেটের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি । এই অগ্রগতির দিল্লি, মুম্বই ও বেঙ্গালুরুর থেকেও অনেক বেশি ।’’
এই প্রসঙ্গেই তিনি মিডিয়ার একাংশ বাংলাকে বদনাম করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন ৷ মমতা বলেন, ‘‘কিন্তু আমি জানি না কিছু মিডিয়া প্রচার চালাচ্ছে, তারা সব সময় বাংলাকে বদনাম করতে চাইছে । তারা বলছে বাংলায় কোনোরকম উন্নয়নের কাজ হয় না ৷ শুধুমাত্র এখানে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটে ।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আমি বলতে চাই এই ধরনের বক্তব্য একেবারে সত্য নয় । যদি আপনারা বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিচার করেন, তাহলে দেখবেন বাংলা সব ক্ষেত্রেই নম্বর ওয়ান । ইজ অফ ডুয়িং বিজনেসেও আমরা এক নম্বর । ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ল্যান্ড ম্যাপ তৈরি করেছে, আমাদের ল্যান্ড ইউজ পলিসি রয়েছে । শিল্প সাথী থেকে শুরু করে সর্বত্রই আমরা অনলাইন ব্যবস্থা চালু করেছি ।’’
আরও পড়ুন: জবরদখল রুখতে পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের, 52টি জমিতে সরকারি সাইনবোর্ড
করোনা অতিমারীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘অতিমারীর সময়ে আমাদের তিন চার বছর শিল্প মহলকে ভুগতে হয়েছিল । আমরা সেই আঘাত ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছি । সরকারের তরফ থেকেও বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে । এই পদক্ষেপগুলি আবাসন শিল্পকে অগ্রগতির পথে সহায়ক হয়েছে ।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকারের সময় শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজকর্মে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়েছে । জমির মিউটেশন-কনভারশন থেকে রাজস্ব আদায়, সবটাই এই মুহূর্তে অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমেই এই রাজ্যে সম্পন্ন হয় ।
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন বিল্ডিং রুলস এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল বিল্ডিং রুলস কার্যকর করেছে । অতীতের তুলনায় তা অনেক সরল করা হয়েছে । আগামীতেও আরও সহজ থেকে সহজতর করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে ।
এদিন এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি আমার ক্রেডাই ফ্রেন্ডদের বলতে চাই, এতদিন যাঁরা জমির লিজ হোল্ডের সুবিধা ভোগ করতেন, তাঁরা চাইলে এবার থেকে ফ্রি হোল্ডের সুবিধা নিতে পারেন । এই ফ্রি হোল্ড পাওয়ার অর্থ আপনারা কাজ করার ক্ষেত্রে মুক্ত । সরকারি কোনও বিধিনিষেধ আপনাদের ওপর থাকবে না ।’’ সরকারের এই সিদ্ধান্ত আগামিদিনে শিল্পপতিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলেই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
আরও পড়ুন: পৌর-নগরোন্নয়ন দফতরের লিজে থাকা জমি ব্যক্তিগত মালিকানায় দেওয়ার ভাবনা রাজ্যের
তিনি আরও বলেন, ‘‘এর কারণেই চা-বাগানগুলিতে শিল্প এসেছে । আমরা চা-বাগানের 15 শতাংশ জমিকে পর্যটন শিল্পের জন্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । ইতিমধ্যেই এ রাজ্যের প্রথম সারির শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া মকাইবাড়ি চা-বাগানে হোটেল তৈরি করছেন । মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন এই ফ্রি হোল্ড পলিসি শিল্পপতিদের অন্যত্র চলে যাওয়া আটকাতে সাহায্য করবে ৷ বরং বাংলায় তারা অনেক বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে ।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বক্তব্য, ‘‘কলকাতায় জমি অত্যন্ত মূল্যবান । তাই বেসরকারি শিল্পপতিদেরও এখানে অনেক কিছু করার অবকাশ রয়েছে । যদি ক্রেডাইয়ে থাকা শিল্পপতিরা আগ্রহী হন, তাঁরা লজিস্টিক পার্কে বিনিয়োগ করতে পারেন । তাঁরা শিল্প ক্লাসটারেও বিনিয়োগ করতে পারেন ।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান যে আবাসন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় 40 লক্ষ কর্মী । এই কর্মীরা আবাসন শিল্পের সম্পদ ৷
আরও পড়ুন: কোভিডকাল পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কলকাতার আবাসন শিল্প