কলকাতা, 21 অগস্ট: দুর্নীতির প্রশ্নে জিরো টলারেন্স মমতা সরকারের । যেভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা রাজ্যে একের পর এক দুর্নীতির হদিশ পাচ্ছে, তাতেই ব্যতিব্যস্ত রাজ্যের শাসকদল । এবার কেন্দ্রের প্রকল্পে দুর্নীতি ইস্যুতেও কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ 100 দিনের কাজ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্প, কোনও দুর্নীতি হলে ছেড়ে কথা বলবেন না তিনি (Mamata Banerjee on Pradhan Mantri Awas Yojana Corruption Issue)। আর সে কারণেই জেলা প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর নির্দেশ, কোনওরকম দুর্নীতি দেখলে এফআইআর দায়ের করতে হবে । শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্তদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি ।
এই মুহূর্তে রাজ্যের সিংহভাগ পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে । ফলে দুর্নীতির অভিযোগও শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধেই বেশি । আর সে কারণেই দুর্নীতি নিয়ে এবার নড়েচড়ে বসেছে নবান্ন । প্রসঙ্গত, বছর ঘুরলেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন । জনমত নিতে পঞ্চায়েত ভোটের সময় মানুষের দরজায় যেতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসকে । এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তৃণমূল করে খাওয়ার জায়গা নয় । নেতা ধরে পঞ্চায়েতে টিকিট পাওয়া যাবে না । শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের ওই হুঁশিয়ারি আর নবান্নের এই চিঠি পাশাপাশি রাখলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের অনেক 'রাঘব বোয়াল'ই এবার টিকিট পাবেন না । বিশেষ করে যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও টাকা লুঠের অভিযোগ রয়েছে তাঁদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিত ।
আরও পড়ুন : রাজ্যের একাধিক প্রকল্প সর্বভারতীয় স্তরে প্রশংসিত, টুইট করলেন মমতা
বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে নবান্ন যে চিঠি পাঠিয়েছে, তাতে মূলত দু'টি প্রকল্পের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করা হয়েছে । তার অন্যতম হল, 100 দিনের কাজ তথা 'MGNREGA' প্রকল্প । চিঠিতে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত যাঁদের জব কার্ড দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নাম অবিলম্বে জেলা পোর্টালে তুলতে হবে ।
আরও পড়ুন : 6 মাসে নতুন তৃণমূলের চেহারা কেমন হবে, যা বলছে রাজনৈতিক মহল
এ ব্যাপারে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, বাঁকুড়া, কোচবিহার, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূমকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে । একইসঙ্গে এও বলা হয়েছে যেখানে সরকারি নির্দেশকে উপেক্ষা করে 100 দিনের কাজ করা হয়েছে এবং তা দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে সেই টাকা উদ্ধার করতে হবে । এর জন্য সময়ও বেঁধে দিয়েছে নবান্ন । আগামী সেপ্টেম্বরের 9 তারিখের মধ্যে সোশাল অডিট করে যার বিরুদ্ধে অনিয়ম ধরা পড়বে, কেন্দ্রীয় দলের সুপারিশ মতো তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে হবে । এক্ষেত্রে যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে দলকে । এক্ষেত্রে নবান্ন স্পষ্ট ভাষায় বলছে, 100 দিনের কাজের টাকা আত্মসাৎ করে কেউ পার পাবে না ।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়েও কড়া অবস্থান নিয়েছে মমতা সরকার । দক্ষিণ 24 পরগনা, মুর্শিদাবাদ, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়ার মতো একাধিক জেলায় আবাস যোজনার বহু বাড়ি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে নবান্নের কাছে খবর । আপাতত সেগুলির কাজও দ্রুত শেষ করার কথা বলা হয়েছে । তবে শেষ পর্যন্ত সেখানেও যদি অনিয়ম ধরা পড়ে তাহলে সব ক্ষেত্রেই এফআইআর করার কথা বলা হয়েছে । টাকা উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছে প্রশাসনকে । মোটের উপর আবাস যোজনা নিয়ে আগামীকাল অর্থাৎ সোমবারের মধ্যে সমস্ত জেলাকে একটা স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে । এরপরই এই নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে রাজ্য সরকার ।
আরও পড়ুন : দুর্নীতির ফাঁসে জেরবার সরকারের নতুন মন্ত্রীদের সতর্কবার্তা মমতার