কলকাতা, 8 জানুয়ারি: সন্দেশখালি নিয়ে মৌনতাই বজায় রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
গত শুক্রবার থেকেই সন্দেশখালির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি । এই সন্দেশখালিকে নিয়েই পরস্পরের বিরুদ্ধে আক্রমণ প্রতি আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে শাসক এবং বিরোধীরা । এমনকি ঘটনার গুরুত্ব বুঝে এই নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস । প্রতিক্রিয়া দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও । কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে একটি কথাও বলেননি । এই অবস্থায় আজ যখন ধনধান্য স্টেডিয়ামে স্টুডেন্টস উইকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দেন, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন যে, তিনি সন্দেশখালি নিয়ে কিছু বলবেন । তিনি শুধু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নন, তিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও । সন্দেশখালির মতো একটা জায়গায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসারেরা গ্রামবাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হলেন ৷ সে ক্ষেত্রে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলেন তা শোনার জন্য মুখিয়ে রয়েছে গোটা রাজ্য । আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মুখ খুললেও সরাসরি সন্দেশখালি প্রসঙ্গে ঢুকলেন না ।
এ দিন ধনধান্য অডিটোরিয়ামে ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "অনেকে তো আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অনেক অকথা-কুকথা বলেন । অপপ্রচার, কুৎসা করেন । আমাকে দশটা গালি দিন, আমার গায়ে লাগবে না । কারণ গালাগালি খেতে খেতে আমি ছোটবেলা থেকেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি । কিন্তু বাংলাকে গালাগালি দিলে আমার আপত্তি আছে । বাংলাকে কেউ যদি ছোট দেখান আমাকে গালাগালি দেওয়ার নাম করে, সেখানে আমার আপত্তি থাকে । আপনারা জানেন ভারতবর্ষের মধ্যে শ্রীরামপুর থানা, বেস্ট থানা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে । তাহলে আইনশৃঙ্খলা যদি ভালো না হয়, এই জায়গাটা হবে কী করে, কলকাতা দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুরক্ষিত শহর হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ।" মমতার প্রশ্ন, "এটা তাহলে কী করে হল ?"
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী এ সব বললেও সরাসরি সন্দেশখালি নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি তিনি । বরং রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিরোধীদের এই কটাক্ষের পেছনেই পরোক্ষে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্দেশখালি নিয়ে জবাব ।
প্রসঙ্গত, এ দিন এই অনুষ্ঠানেই মমতা জানিয়েছেন, আজ কলকাতা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভাঙড়ের পোলেরহাট, উত্তর কাশিপুর, চন্দনেশ্বর এবং ভাঙড় থানার নতুন ভবন উদ্বোধন হল । শুধু ভাঙড়ে পুলিশের নতুন ভবন নয়, ট্রাফিক গার্ডের নতুন অফিসও উদ্বোধন হল এ দিন । মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভাঙড় হল কলকাতা পুলিশের দশম ডিভিশন । অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্যের ডিজি রাজীব কুমারের উদ্দেশে এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, খেয়াদা 1 এবং খেয়াদা 2 - এই দুটি অঞ্চলকেও ভাঙ্গড়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । তাঁর সরকারের আমলে ছ'টা পুলিশ কমিশনারেট, 14টা পুলিশ জেলা তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী । তিনি জানান, ন'টি ব্যাটেলিয়ান, 43টি মহিলা থানা, 143টি নতুন থানা এবং আটটি উপকূল থানাও তৈরি করা হয়েছে । 35টি সাইবার থানা, 19টা হিউম্যান রাইটস কোর্টও তৈরি হয়েছে ।
এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ে এত খতিয়ান দিলেও আলাদা করে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে ঢোকেননি । সেখানেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা । সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে যখন রাজ্যপাল থেকে শুরু করে বিচারপতিরা পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, তখন কেন নীরব মুখ্যমন্ত্রী !
আরও পড়ুন: