কলকাতা, 11 জানুয়ারি: আগামিকাল, বৃহস্পতিবার স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন থেকেই কলকাতার বাবুঘাটে গঙ্গা আরতির (Ganga Arati) প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । বারাণসীতে গঙ্গা আরতি দেখে এসে বাংলাতেও একইভাবে গঙ্গা আরতির ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি ৷ সেই মতো কোথায় এই গঙ্গা আরতি হতে পারে তার খোঁজ চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই । মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় সেই জল্পনার অবসান হল ৷
প্রাথমিকভাবে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Kolkata Mayor Firhad Hakim) বাবুঘাটকেই গঙ্গা আরতির জন্য বেছেছিলেন । বুধবার সেই নিয়ে সেই ঘাট পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী । এরপর আউট্রাম ঘাটে গঙ্গাসাগর মেলায় (Gangasagar Mela) আগত পুণ্যার্থীদের স্বাগত জানাতে গিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এই আয়োজনকে পূর্ণ করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেন ।
জানা গিয়েছে যে মুখ্যমন্ত্রী চান কাশী বিশ্বনাথে যেভাবে গঙ্গা আরতি হয়, সেই আদলেই কলকাতার হোক গঙ্গা আরতি । ইতিমধ্যেই এই নিয়ে যাবতীয় পরিকল্পনা করা হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, জল আর আগুন, এই দু’টি থেকে বড় বিপদ হওয়ার আশঙ্কা থাকে । তাই তিনি নিজে ঘুরে দেখে নিয়ে তবেই এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন ।
একই সঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন বাবুঘাটের পাশাপাশি দক্ষিণেশ্বর ও বেলুড় মঠও হতে পারে গঙ্গা আরতি । এক্ষেত্রে কালীঘাট ও তারাপীঠেও একই ধরনের আরতি হোক চান মুখ্যমন্ত্রী । সেক্ষেত্রে প্রথমে কলকাতার কাজ সম্পন্ন করে ধাপে ধাপে পরবর্তী ক্ষেত্রে গঙ্গা আরতি চালু করা যায় কি না সেই উদ্যোগ নিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী ।
এদিকে বুধবার কলকাতার আউট্রাম ঘাট থেকে সাগরগামী পুণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সকলকে নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার কথা বলেছেন । একই সঙ্গে মেলা চলাকালীন কোনও ধরনের কোনও গুজবে কান না দিয়ে সরকারি ঘোষণার উপর ভরসা রাখতে বলেছেন ।
তিনি বলেন, ‘‘বাম আমলে গঙ্গাসাগরে কোনও উন্নয়ন সম্পন্ন হয়নি । তবে এই সরকারের সময়ে সাগরে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে । আর তাই বদলে গিয়েছে গঙ্গাসাগর ।’’ এদিন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে শোনা যায়, ‘‘যেতে গেলে জলের উপর দিয়ে প্রায় 45 মিনিট ভেসেলে যেতে হয় । আপনারা কেউ তাড়াহুড়ো করবেন না । তা না হলে যখন–তখন বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে । সকলে আসুন গঙ্গাসাগর মেলায় । ঘুরে দেখুন মেলা । এখানে থেকে পবিত্র গঙ্গাজলে স্নান করুন । বাড়িতে নিয়ে যান পবিত্র গঙ্গা জল । আপনার পরিবারের এবং ছেলেমেয়েদের কল্যাণ হবে ।’’
প্রসঙ্গত, গঙ্গাসাগরকে জাতীয় মেলা হিসেবে ঘোষণার দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সম্প্রতি মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে তিনি এই দাবি করেন ৷ এদিন আরও একবার তারই পুনরাবৃত্তি শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর গলায় । একই সঙ্গে ছিল বিজেপির প্রতি কটাক্ষ ।
তিনি বলেন, ‘‘কুম্ভ মেলা জাতীয় ফান্ড পায়। গঙ্গাসাগর তা পায় না । কুম্ভ মেলার জায়গাগুলি রেল পথে সংযুক্ত। গঙ্গাসাগর প্রান্তিক জায়গায় অবস্থিত । রেল পথে সংযুক্ত নয় । গঙ্গাসাগর মেলায় পরিকাঠামো বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার । কেউ কেউ সমালোচনা করেই দায় সারেন । গঙ্গাসাগরে গিয়ে দেখুন সেখানে কত কাজ করেছে রাজ্য সরকার ।’’
কোনও খবর ছড়িয়ে অশান্তির চেষ্টা হতে পারে বলে এদিন পুণ্যার্থীদের সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘‘কেউ কোনও ভুয়ো প্রচার বা প্ররোচনামূলক কথা বললেও সেদিকে কান দেবেন না । বরং সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয় সেদিকে নজর রাখুন । ভুয়ো খবর থেকে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হতে পারে । এর থেকে হুটোপাটিতে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ।’’ এই কারণেই আগে থেকে সাবধান করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি ৷
এদিন এই মঞ্চ থেকে নাম না করে বিজেপিকেও (BJP) কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, ‘‘আমরা সেই হিন্দু ধর্ম মানি, যা স্বামীজি বলেছেন । সেই হিন্দু ধর্ম আমরা মানি, যা রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছেন । সবাই একই কথা বলেছেন - মানবিকতা । মানব ধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম ।’’
আরও পড়ুন: দ্রুত শিল্পস্থাপন করলে লিজের জমির দলিল দেওয়া হবে সংস্থাকে, সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে