কলকাতা, 27 মার্চ: আজ দার্জিলিং যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee going to Darjeeling) ৷ 5 দিনের সফরে তাঁর নানা কর্মসূচি রয়েছে ৷ তবে পাহাড়ে সদ্য উত্থান হওয়া হামরো পার্টির (Hamro Party rise) সঙ্গে তৃণমূলের সমীকরণ কী হতে চলেছে, মমতার (Mamata Banerjee's Darjeeling visit) এ বারের সফরে তার দিশা মিলবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷
পাহাড় বরাবরই স্পর্শকাতর । বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে । আর সিপিএমের রতনলাল ব্রহ্মচারীর সময় থেকেই সেখানে ভিন্ন রাজ্যের দাবি উঠেছে বারবার ৷ কিন্তু এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আজও পুরোপুরি দমিয়ে দেওয়া যায়নি । সুভাষ ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ বা বিমল গুরুংদের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা - ক্ষমতা যাদের হাতে থাকুক না কেন, পাহাড়ে উন্নয়নের থেকেও তাদের কাছে বড় ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে গোর্খাল্যান্ড বা আলাদা রাজ্যের জন্য আন্দোলন ।
এই মুহূর্তে পাহাড়ে একটা নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হয়েছে । যেই শক্তি রকেটের গতিতে গত পৌরসভা নির্বাচনে নিজেদের উত্থানের প্রমাণ রেখেছে । নতুন এই রাজনৈতিক দলটি তৈরি করেছেন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী অজয় এডওয়ার্ড । কিন্তু এই রাজনৈতিক দলের অর্থাৎ হামরো পার্টির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই পাহাড়ে একটা প্রশ্ন বড় হয়ে উঠতে শুরু করেছে, আলাদা রাজ্যের দাবি করতে গিয়ে বরাবরই ব্রাত্য থেকেছে উন্নয়ন । এখনও পাহাড়ের মানুষের জন্য পানীয় জল, চিকিৎসা, রাস্তাঘাট এই প্রাথমিক প্রয়োজনগুলি সঠিক ভাবে পূরণ হয়নি । অথচ মাসের পর মাস উন্নয়ন বন্ধ থেকেছে গোর্খাল্যান্ডের নামে । পাহাড়ের অর্থনীতির মূল ভিত্তি পর্যটন ব্যবসা ধাক্কা খেলেও তাতে পরোয়া নেই । এই অবস্থায় নতুন রাজনৈতিক দল হামরো পার্টির হাত ধরে পাহাড় চাইছে ঘুরে দাঁড়াতে । দাবি আদায়ের জন্য বনধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয় এই নতুন রাজনৈতিক শক্তি । পৌরভোটে উত্থানের পর হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ড বলেছেন, কোনও ভাবেই তার দল পাহাড়ের অর্থনীতি অচল করে দেওয়ার পক্ষে সমর্থন করবে না । তারা উন্নয়নের পক্ষে ।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee : প্রশাসনিক বৈঠকে পাহাড়ের উন্নয়নে 'কল্পতরু’ মমতা
এই অবস্থায় আজ দার্জিলিং যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । 5 দিন তিনি পাহাড়ে থাকবেন । ম্যালে সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথাও বলবেন । এই সফরেই তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে হামরো পার্টির প্রধান অজয় এডওয়ার্ডের সঙ্গেও । রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, পাহাড়ে পঞ্চায়েত এবং জিটিএ নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ।
বিশেষ করে কয়েকদিন আগেই পাহাড়ের তৃণমূল নেতৃত্ব ঘোষণা করেছিল আগামী দিনে হামরো পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে চলতে পারে তৃণমূল । যদিও সে সময় তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে চাননি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব । বরং এই কথা আগ বাড়িয়ে বলার জন্য বিনয় তামাংকে সতর্ক করেছিল দল । তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, দলের রাজনৈতিক শক্তি বিস্তার নয়, প্রধান লক্ষ্য পাহাড়ের উন্নয়ন এবং শান্তি বজায় রাখা । মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে এসে এই লক্ষ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে পারেন বলে মনে করছেন রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব ।
এ দিন এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তা ছাত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "এই মুহূর্তে পাহাড়ে যে স্থিতাবস্থা তৈরি হয়েছে তার জন্য রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে । আমরা প্রথম থেকেই এখানে শান্তির লক্ষ্যে কাজ করছি । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান পাহাড়ের উন্নয়ন । পাহাড়ের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে । সেই লক্ষ্যে আবারও পাহাড়ে আসছেন তিনি । আমরা আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রীর এই পাহাড় সফর থেকেই একটা নতুন উন্নয়নের পর শুরু হবে ।"